ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর কোন ‘ইউনিভার্স বস’ আসবে না

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ১০ জানুয়ারি ২০২০

আর কোন ‘ইউনিভার্স বস’ আসবে না

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) আগের ৬ আসরেই খেলেছেন ক্রিস গেইল। সে সময় বিশ^ব্যাপীই তিনি টি২০ ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। তাই বিপিএলেও ছিলেন সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়। তাকে দলে ভেড়াতে সব দলের মধ্যেই ছিল কাড়াকাড়ি। এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে অবশ্য তাকে নিতে তেমন হুড়োহুড়ি ছিল না। কারণটা বয়স এবং সাম্প্রতিক অফ ফর্ম। কিন্তু এই ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী টি২০ খেলে নিজের যে ব্যাটিং তা-ব দেখিয়েছেন সেটা তাকে করেছে ক্ষুদ্রতম এই ফরমেটের কিংবদন্তি। এ জন্য নিজেকেই নিজে ‘ইউনিভার্স বস’ দাবি করলেও তা নিয়ে দ্বিমত কেউ করেনি, বরং মেনে নিয়েছে অকপটে। গেইলের স্বঘোষিত এই তকমাটা এখন তার নামের সঙ্গে ব্যবহার হয় বিশ্বব্যাপীই। এবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে বিলম্বে খেলতে এসেছেন এবং জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে টানা খেলতে খেলতে এখন এভাবেই কম খেলবেন। তবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত বিশ্বব্যাপীই খেলা চালিয়ে যেতে চান গেইল। সাম্প্রতিক ফর্ম তেমন ভাল না হলেও বিশ্বব্যাপী ভক্ত-সমর্থকদের ভালবাসা অনুভব করেন বলেই স্বল্প পরিসরে খেলা চালিয়ে যাবেন। টি২০ ক্রিকেটে অনেক তরুণ মহাতারকা বনে গেলেও গেইল অবশ্য দাবি করেন তার মতো ‘ইউনিভার্স বস’ আর আসবে না। বিপিএলে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ৫ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন গেইল। এমনকি বিপিএলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সেঞ্চুরিয়ানও ছিলেন গেইল। এবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলতে নামার আগে ৩৮ ম্যাচে এই আসরে ৪১.৮১ গড়ে করেছেন ১৩৩৮ রান। আর কোন বিদেশী ক্রিকেটার তার ধারে কাছে নেই রানের দিক থেকে। ছক্কা হাঁকানোতেও সবার সেরা তিনি। ৩৮ ম্যাচেই তার ব্যাট থেকে এসেছে ১২০ ছক্কা। ৪০ বছর বয়সে এসে এখন অবশ্য অনেকখানিই স্তিমিত হয়ে গেছে গেইলের আগুন। সর্বশেষ গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় টি২০ আসরে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ৬ ম্যাচে মাত্র ১টি অর্ধশতক হাঁকাতে পেরেছেন। তার আগে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগেও (সিপিএল টি২০) ছিলেন ব্যর্থ। সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যান বাজে হলেও গেইলের সবধরনের টি২০ ক্যারিয়ারে যে দাপট তা এখনও ভীতিকর। সবধরনের প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে ৪০০ টি২০ খেলে ১৩ হাজার ১৫২ রান করেছেন তিনি ২২ সেঞ্চুরি ও ৮১ হাফ সেঞ্চুরিতে। ৩৮.২৩ গড়ের সঙ্গে ঈর্ষণীয় স্ট্রাইক রেট (১৪৭.০৪) ধরে রেখেছেন। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার রানও করতে পারেননি বিশ্বের কোন ব্যাটসম্যান। গেইল সর্বাধিক ৯৬৬ ছক্কা হাঁকিয়েছেন এই ম্যাচগুলো খেলে। তার চারের সংখ্যা ১০১৭টি। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে গেইল বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন গেইল- প্রশ্ন ॥ টি২০তে নতুন মহাতারকা কাউকে মনে করেন? এখন অনেক নতুন খেলোয়াড়। শুধু একজনকে খুঁজে বের করা কঠিন। কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি সবসময় দেখবেন যে নতুন প্রজন্মের কেউ বেরিয়ে এসেছে। তাদের টি২০ ক্রিকেটের জৌলুসটা এবং নিজেদের নামটা ধরে রাখতে হবে, উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে এবং এভাবেই তারা পরবর্তী মহাতারকা হয়ে উঠবে। পৃথিবীটা একটা চক্র এবং আমরা যাওয়া-আসার মধ্যে আছি। প্রশ্ন ॥ আপনার মতো কাউকে দেখার আশা করছেন? আর কোন ক্রিস গেইল কিংবা ইউনিভার্স বস আসবে না। সবসময়ই একজন থাকবে এবং সেই একজন আমার মতো হবে না। নিজের স্বকীয়তার জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী ঘুরতে হবে, নিজের নামটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, সবধরনের কন্ডিশনে পারফর্ম করতে হবে এবং আমি নিজের ক্ষেত্রে সেটাই কিছুটা ভালভাবে করতে পেরেছি। আমার আর কিছুই প্রমাণ করার নেই এবং আপনারা জানেন যে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আমি কোন জায়গায় আছি। সুতরাং তারা (নতুনরা) কিভাবে এগোচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাদের অধিকাংশই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের জন্য তেমন সুযোগ পায় না। প্রশ্ন ॥ এখনও ক্রিকেট উপভোগ করছেন? হ্যাঁ অবশ্যই, নিশ্চিতভাবে। আমি শুধু ভাবি যে কিছুটা মন্থর হয়ে গেছি। আপনারা জানেন জীবন এগিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পনা দরকার। ইতোমধ্যেই ২০ বছর হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এবং সার্বিকভাবেও ক্রিকেটে ২০ বছর। সবসময়ই ক্রিকেটের বাইরে একটা জীবন আছে এবং এখনই সময় এক্ষেত্রে কিছু পরিকল্পনা করে নেয়ার। ক্রিকেটও কিছুটা খেলে যেতে হবে। এখন হয় তো এটা আর হবে না যে সবগুলো টুর্নামেন্টেই খেলব এবং কোন একটি টুর্নামেন্টের সবগুলো খেলাতেই থাকব। প্রশ্ন ॥ আর কতদিন খেলা চালিয়ে যাবেন? অনেক মানুষই চায় এখনও ক্রিস গেইলকে মাঠে দেখতে। আমার নিজেরও খেলাটার প্রতি যথেষ্ট ভালবাসা ও আসক্তি আছে। যতদিন সম্ভব আমি টি২০ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চাই। আমি এখনও এখানে এবং সারাবিশ্বেই কিছু ম্যাচ খেলি কারণ এখন পর্যন্ত আমি অনুভব করি যে অনেক কিছুই আমার দেয়ার আছে। শরীরটাকেও বেশ ভাল বোধ হচ্ছে এবং আমি নিশ্চিত যতই দিন যাচ্ছে আরও তরুণ হচ্ছি। ৪৫ খুব ভাল একটি সংখ্যা। চলুন ৪৫ নিয়ে একটু কথা বলি। আমি এটাকে ভাল সংখ্যা মনে করি এবং এটাই আমার প্রথম সংখ্যা (জার্সি নম্বর)। প্রশ্ন ॥ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটারদের কেমন দেখছেন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারা এখন আমাদের চেয়ে ভাল করছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট উত্থান-পতনের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটছে। ইংল্যান্ড যেভাবে কাজ করে বিশ্বকাপ জিতেছে আসলে আমাদের সেই কাজটারই সুযোগ নিতে হবে। তাদের একটি চার বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা ছিল এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতল। আর এ বিষয়টার দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে যেন ভাল একটি দল গড়া যায়। প্রশ্ন ॥ বিপিএলের প্রায় সব মৌসুমেই আপনি খেলেছেন। এখানে পোস্টার বয়ে তকমা পাওয়াটা কতখানি উপভোগ করেন? এটা এমন এক জায়গা যেখানে আপনি এসে খেলতে পারেন। বিশেষ করে সমর্থকদের কাছ থেকে যে সমর্থনটা পাওয়া যায় তারা সত্যিই বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগায় ভাল করার। মাঠে তারা বিনোদন চায়। এটা মাঝে মাঝে খেলোয়াড় হিসেবে আপনাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয়। আর খেলোয়াড় হিসেবে আমার খেলাটাও এমন ধরনের। আমার জন্য এটা এক ধরনের সমন্বিত কাজের মতো যেখানে আমি যতটা পারি বিনোদন দিতে চাই এবং সবার সঙ্গে মজাও করি। প্রশ্ন ॥ পরবর্তী টি২০ বিশ্বকাপে খেলার চিন্তা করছেন? এটা দারুণ হবে। সুযোগটা নেয়ার জন্য দুয়ার খোলাই আছে। দেখা যাক কি হয়। আমাদের কিছু উজ্জ্বল তরুণ তারকাও আছে। নিজের ক্ষেত্রে আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায় আছি।
×