ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হেলাল শাহ-এর তৈলচিত্র

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯

হেলাল শাহ-এর তৈলচিত্র

সুমন্ত গুপ্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত মাস থেকে ঘুরেফিরে আসছে একটি তৈলচিত্র। চিত্রটি যথেষ্ট আলোচিত। আলোচনার মূল কারণ এর আশ্চর্য ডিটেইলিং! প্রথম দেখাতে এতটাই রিয়েলিস্টিক মনে হবে যে দর্শক দ্বিধায় ভুগবেন- এটি ফটোগ্রাফি নাকি পেইন্টিং? তবে এটি যে পরিশ্রমী এবং দক্ষ হাতের কাজ মানছেন সবাই। সেই তৈলচিত্রটির স্রষ্টা হেলাল শাহ। ছোটবেলা থেকেই রং তুলির প্রতি তীব্র ঝোঁক ছিল নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার তরুণ হেলাল শাহ’র। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ২০১৫ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগে। তারপর থেকেই নিয়মিত শুরু হয় তার আঁকাআঁকি। তিনি একজন আঁকিয়ে, একজন শিল্পী। পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারকে উপজীব্য করে চিত্রটি এঁকেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং এ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল শাহ। পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের নিত্যদিনের চিত্র। চিকন একটি গলি। গলির মুখে ঢুকতেই বৈদ্যুতিক খুঁটি। গলির মধ্যে কিছু মানুষের কর্মব্যস্ততা। দুদিকে সারি সারি দালানকোঠা। বিভিন্ন রঙের এই দালানগুলোর সামনে অসংখ্য তারের ছড়াছড়ি। নিচে ছোট ছোট দোকান। এমনই একটি ছবি অয়েল কালার দিয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। চিত্রকর্মটি অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগ আয়োজিত বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর তেলচিত্র বিভাগে ‘মিডিয়া বেস্ট এ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে। সম্প্রতি স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। এই ছবি আঁকতে হেলালের লেগেছিল ১৮ দিন। এমন নয় যে একটা ছবি দেখলাম আর সেটা দেখে দেখে হুবহু এঁকে ফেললাম। হেলাল শাহ্ ছবিটি আঁকা শুরু করেন গত অক্টেবর মাসের শুরুর দিকে। চারুকলার ছাত্র হিসেবে আঁকাআঁকি তার নিয়মিত কাজ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বার্ষিক প্রদর্শনীর জন্য তিনি এই ছবি আঁকার কাজে হাত দেন। এর আগে তিনি শাঁখারী বাজারে গিয়ে স্থান নির্বাচন করেন। সেখানে সারাদিন অবস্থান করে যে দৃশ্যটি তিনি ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে চান তার ছবি তুলে আনেন। কোন সময়ের দৃশ্য বাছাই করা হবে নির্ভর করে সেখানে প্রতিফলিত আলোর উপর। ছবি তোলার পর দৃশ্যটি ক্যানভাসে স্কেচ করেন। তারপর রং তুলিতে আঁকতে শুরু করেন। ৫ ফুট আনুভূমিক ও ৪ ফুট উলম্ব ক্যানভাসে তেল রং ব্যবহার করে চিত্রকর্মটি সম্পন্ন করেন তিনি। এবারই প্রথম নয়, গত বছরও বার্ষিক প্রদর্শনীতে তিনি পেয়েছিলেন ‘মিডিয়া বেস্ট এ্যাওয়ার্ড’। গত বছর তার চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু ছিল লঞ্চঘাট। সেটিও আঁকা হয়েছিল তেলরঙে। ঢাকার সদরঘাটের লঞ্চ ও বুড়িগঙ্গার চিরাচেনা দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেন ছবিটিতে। এটি দেখলে হঠাৎ মনের গভীরে এক ধরনের মায়া জন্মায়। কত নিষ্ঠার সঙ্গে ছবিটি এঁকেছেন তিনি। এক কথায় যাকে বলা যায় ‘অসাধারণ’। পুরান ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা নদী। এর দুই কূলজুড়ে রয়েছে মানুষের ব্যস্ততা। এরমধ্যে সদরঘাট দৃশ্যপট অসাধারণ। বিকেল বেলায় একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে নদীর তীরে ভিড় জমায় নগরবাসী। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের মানুষ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য-সামগ্রী বহনকারী বিলাসবহুল লঞ্চের সারি দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। সদরঘাটের এই মনোরম দৃশ্য খুবই যতœ নিয়ে রং তুলিতে এঁকেছেন হেলাল শাহ।
×