ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নূরের মামলায় ব্যাপক ক্ষোভ ডাকসুতে

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

নূরের মামলায় ব্যাপক ক্ষোভ ডাকসুতে

বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ ডাকসুতে হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা ও গ্রেফতারের পর ছাত্রলীগের ৩৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ভিপি নূরের মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ ৩৭ নেতাকর্র্মীকে জড়িয়ে নূরের গণহারে আসামি করে মামলা দায়েরে ক্ষুব্ধ ডাকসুর নেতাকর্মীরা। মামলায় জড়ানো হয়েছে ডাকসুর নির্বাচিত বহু নেতাকর্মীকেও। মামলা প্রত্যাহারের দাবিসহ নূরের সেদিন বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুতে অবস্থান নেয়ার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ডাকসু সদস্যরা। এদিকে হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মামলা হস্তান্তর করা হয়েছে ডিবিতে। নুরুল হক ও তার অনুসারীদের ওপর হামলায় ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সোমবার রাতেই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ইতোমধ্যেই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। কিন্তু মঙ্গলবার পুলিশের মামলা করার পর পরেই ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতাকর্মীসহ মোট ৩৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার আবেদন করে ভিপি নূর। যেখানে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ডাকসুর নেতা, বিভিন্ন হল সংসদ ও ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযুক্ত করেছে ভিপি নূর। ডাকসু ভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের তৎপরতার পরেও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের অভিযুক্ত করার মাধ্যমে অত্যন্ত সুকৌশলে সংগঠনটির নামে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, ভিপি নূর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রলীগ নেতাদের মামলায় অভিযুক্ত করছে। ডাকসু ভিপি নূরের থানায় করা অভিযোগ পত্রে ডাকসুসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নাম দেয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। অত্যন্ত সুকৌশলে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্য এসব নাম জড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে ডাকসু ভিপি নূরের ওপর অমানবিক এবং হামলার তীব্র নিন্দাও জানান। তিনি বলেন, আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধির ওপর হামলার সমগ্র ছাত্র সমাজের জন্য দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও নুরুল হক নূরের সমর্থকদের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষের ঘটনা প্রবাহ ছিল ২২ ডিসেম্বর এর ঘটনাটি। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিনেট সদস্য সনজিত চন্দ্র দাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ঘটনার শেষে সেখানে উপস্থিত হয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন। অন্যদিকে ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলেনই না। তাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ডাকসু এবং ছাত্রলীগের যে সকল নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করা হয়েছে অনতিবিলম্বে তাদের নাম প্রত্যাহার না করলে ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। ডাকসুতে হামলার ঘটনাকে বেদনাদায়ক ও অনাকাক্সিক্ষত বলে উল্লেখ করে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেছেন, ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ডাকসুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। নেতাকর্মীদের তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এ ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে চাইলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর বলেছেন, ভিপি নিজের ব্যক্তিস্বার্থে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাদের সঙ্গে ঘটনার সম্পৃত্ততা কতটুকু। মামলায় ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী হলে ছিল, যা তার হলের সেই ঘটনার সময়ের সিসি ফুটেজ দ্বারা প্রমাণিত। ভিপি অবৈধ কাজের ভিডিও সবার সামনে তুলে ধরাই সাদকে আক্রোশে পড়তে হলো। ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ঘটনার সময় স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আর্মি স্টেডিয়ামে ছিল। ওই সময়ে নুরুল ডাকসুর পরিবেশ স্বাভাবিক না করে উল্টা বহিরাগতদের নিয়ে নিজেই অবস্থান নিল ডাকসু ভবনে। তারা ফিরে এসেও তাকে ঘটনা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও নুরুল তাদের সঙ্গে সেই সহযোগী মনোভাব পোষণ করেনি। তিনি আরও বলেন, নূর চাইলেই এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হতো না, সে নিজ স্বার্থে উক্ত ঘটনাকে আরও বড় করে সাজিয়েছে নিজের সম্প্রতি প্রকাশিত অনৈতিক কর্মকে ঢামাচাপা দেয়ার জন্য। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের জিএস হাসিবুল হোসেন শান্তকে ভিপি নূরের মামলায় অভিযুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছে হল সংসদ। উক্ত হল ছাত্র সংসদের সকল সদস্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ও মৌলবাদী রাজনীতির হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মিথ্যা মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাই। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে নূরের সঙ্গে ডাকসুতে কেন ছিল বহিরাগতরা? ডাকসুর সদস্যরাই বলছেন, ভিপি নূর ডাকসুতে বহিরাগতদের নিয়ে এনেছিলেন। তাদের কারণেই সেখানে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব বহিরাগতদের উস্কানিতেই ওইদিন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। নূরদের ওপর হামলার বিষয়ে ডাকসুর জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেন, ওইদিন সকাল থেকে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুতে জড়ো হন নূর। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠি ছিল। পরে ডাকসু ভবনের ওপর থেকে নূরের নেতৃত্বে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা এই ঘটনা থামানোর জন্য চেষ্টা করেছি। আমি আর আমাদের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসু ভিপির রুমে গিয়েছি যেন কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে। কিন্তু সেখানে বহিরাগতরা ছিল। এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য সে নিজেই (নুরুল হক নূর) দায়ী। ডাকসুর এজিএস আরও বলেন, সেদিন ছাত্রলীগ সভাপতি নয়, বরং নূরই ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তথ্যমন্ত্রীকে ‘বাচালমন্ত্রী’ বললেন নূর! তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে ‘বাচালমন্ত্রী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নূর বলেছেন, সরকারের আরেক মন্ত্রী রয়েছেন, বাচালমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তিনি বলেছেন ডাকসুতে কেন বাহিরাগত নিয়ে ভিপি ঢুকল? ডাকসুতে ভিপি কাকে নিয়ে ঢুকবে সেটা কী বাচালমন্ত্রী ঠিক করে দেবেন? আমার সংগঠনের নেতাকর্মীরা থাকবে না? এটা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, হামলায় সরকারের ইন্ধন ছিল।’ ভিপি নূর বলেন, ‘তিনি (হাছান মাহমুদ) কেন এমন কথা বলবেন। যেখানে আক্রান্ত হয়ে ছেলে-পুলে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আর তিনি বলছেন আমি কেন ভারতে বিষয় নিয়ে কথা বলব, ডাকসুতে কেন বহিরাগত নিয়ে যায়? তিনি তো সরকারের একজন মন্ত্রী। এটা দ্বারা পরোক্ষ নির্দেশ করে যে সরকারের ইন্ধন থাকতে পারে এই হামলায়।’ নূরের এ ধরনের বক্তব্যকে ঔদ্ধত্য অভিহিত করে সমালোচনা শুরু হয়েছে ঢাবিতে। ফুটেজ দেখে দোষীদের খোঁজা হবেÑ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডাকসুতে হামলার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের খোঁজা হবে। হামলাকারীরা কেউ পার পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে হামলা ও ডাকসু ভবন ভাংচুরের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম। বনানীতে হোলি স্পিরিট চার্চ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভিপি নূরের ওপর হামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে মারমুখী অবস্থায় দেখা যাওয়া আর মারামারিতে অংশ নেয়া দুটো এক বিষয় নয়। সোহেল-ফারাবী শঙ্কামুক্ত নয়Ñ দাবি রাশেদের ডাকসুতে হামলায় আহতদের শারীরিক সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বুধবার দুপুর ২টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সংবাদ সম্মেলন করেন সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, মশিউর রহমান ও বিন ইয়ামিন মুল্লা। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান জানান, আমাদের সংগঠনের দুজনকে আবারও আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভর্তিদের অনেকে রক্তবমি করছে, কাতরাচ্ছে, ঘুমাতে পারছে না এবং অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। এপিএম সোহেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তার মাথায় রক্ত জমাট বাঁধা ছিল। প্রথম বার সিটি স্ক্যানে রক্ত জামটের বিষয়টি বুঝা যায়নি। আমাদেরকে মাত্র আধঘন্টা আগে জানিয়ে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে অপারেশন করা হয়। তিনি আরো বলেন, যদি অপারেশন করাতে দেরি হতো আজকে হয়তো সে আর আমাদের মাঝে কথা বলতে পারতো না। আইসিইউতে থাকা তুহিন ফারাবির অব¯’া এখনো আশংকাজনক। শুধু মানুষকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে আনা হয়েছিল। আজকে বাধ্য হয়ে তাকে আবারো আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া নুর মাঝে মধ্যে বমি করছে। বাম পাশে রক্ত জমাট হয়ে আছে; আরিফুল ইসলাম বমি করছে। চোখে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে, নাজমুল ইসলামের হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, ফারুক হাসানের কানে আঘাত করা হয়েছে, কানে শুনতে পা”েছ না এখনও। নুরের ছোট ভাই আমিনুর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মাঝে মধ্যে। মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনায় রাশেদ বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাচ্ছি না। মানুষকে জাস্ট ধোঁকা দেয়ার জন্য তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল আসামী সনজিত ও সাদ্দাম। তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না। প্রক্টরের মদদেই ডাকসুর সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে দাবি করে রাশেদ বলেন, কাকুতি মিনতি করার পরও তিনি আমাদের কথা শুনেননি। আমাদের গালিগালাজ করেছে। এই হামলার সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সিসিটিভি ফুটেজ তার মদদেই গায়েব করা হয়েছে।
×