ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা প্লাটুনের প্রতিপক্ষ আজ রাজশাহী রয়্যালস

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকা প্লাটুনের প্রতিপক্ষ আজ রাজশাহী রয়্যালস

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল টি২০) বিভাগীয় দলগুলোর নামকরণেই খেলা হয়। বিভাগের দলের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি বা স্পন্সররা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নাম যুক্ত করে নেন। দলগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল হচ্ছে ঢাকা। আগের ছয়বারের লীগে তিনবারই ঢাকা নামটির সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন যুক্ত হয়েছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রথম দুইবার এক কোম্পানি এবং তৃতীয়বার আরেক কোম্পানি ছিল। তবে ঢাকা নামের দলটি ঠিকই বিপিএলে সফলতা পেয়েছে। এবার ঢাকা কী করবে? এবার দলটি ঢাকা প্লাটুন নামে খেলছে। স্পন্সরও বদল হয়েছে। এবার কী ঢাকা পারবে শিরোপা ঘরে তুলতে? রাজশাহী রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে আজ ঢাকা প্লাটুনের বঙ্গবন্ধু বিপিএল মিশন শুরু হচ্ছে। দুপুর দেড়টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এ দুই দলের ম্যাচটি হবে। প্রথমদিন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, সিলেট থান্ডার, রংপুর রেঞ্জার্স, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স মাঠে নামে। আজ ঢাকা প্লাটুনের প্রতিপক্ষ রাজশাহী রয়্যালস। মাঠে নামছে খুলনা টাইগার্সও। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিরুদ্ধে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে লড়াই করবে খুলনা টাইগার্স। খুলনা ক্রিকেটারদের মাঠে নামার মধ্য দিয়ে এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলের সাত দলই মাঠের লড়াইয়ে নেমে পড়বে। এর আগে ছয়বার বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দুইবার ২০১২ ও ২০১৩ সালের লীগে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স চ্যাম্পিয়ন হয়। মাঝখানে ম্যাচ গড়াপেটা হওয়ায় সব শুদ্ধ করে বিপিএল আয়োজনের জন্য এক বছর লীগ বন্ধ থাকে। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল শিহাব ট্রেডিং হাউস। ম্যাচ পাতানোতে জড়িত থাকায় তাদের বিদায় ঘটে। আবার ২০১৫ সালে শুরু হয়। তৃতীয় আসর হয়। এবার ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি হয় বেক্সিমকো গ্রুপ। ঢাকা ডায়নামাইটস নামে খেলে তারা। এবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৬ সালের চতুর্থ বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটস শিরোপা জিতে। ২০১৭ সালের বিপিএলে রংপুর রাইডার্স চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিপিএল পিছিয়ে যায়। ষষ্ঠ আসর হয় এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ছয়বারের বিপিএলে তিনবার শিরোপা ঘরে তুলে ঢাকা। দুইবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। একবার রংপুর রাইডার্স। এবার কোন দলই নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেদের অধীনে এবার বিপিএল আয়োজন করছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার হচ্ছে লীগ। বিসিবির অধীনেই হচ্ছে। আগের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বাদ দেয়া হয়েছে। এবার শুধু স্পন্সর নেয়া হয়েছে। ঢাকার স্পন্সর এবার যমুনা গ্রুপ। এবারও ঢাকাকে নিয়ে অনেক আশা করা হচ্ছে। ঢাকাও শক্তিশালী দলই গড়েছে। বিপিএলের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক, জাতীয় দলের সফল ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা আছেন। আবার জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, মেহেদী হাসান, আরিফুল হক, মুমিনুল হক, শুভাগত হোম, রকিবুল হাসানের সঙ্গে বিদেশী থিসারা পেরেরা, লরি ইভান্স, ওয়াহাব রিয়াজ, শহিদ আফ্রিদি, লুইস রিচ ও শাদাব খান রয়েছেন। শক্তিশালী এবং ব্যালান্স দল। দলটিতে এবার বিপিএলের একমাত্র দেশী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও আছেন। যিনি বিপিএলের সবচেয়ে সফল কোচও। দুইবার কুমিল্লাকে চ্যাম্পিয়ন করান। সব সফলদের নিয়ে তাহলে ঢাকার তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথাই? বিজয় আবার বলেও দিয়েছেন, ‘আসলে আমরা সবাই এক সঙ্গে অনেকদিন ধরে খেলেছি। শেষ যে দলে খেলেছি (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স) সেই দলের অনেক খেলোয়াড় এখানে আছে, বিদেশী এবং দেশ। এজন্য আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুবই ভাল। কোচও আগের বছরে যিনি ছিলেন (মোহাম্মদ সালাউদ্দিন) তিনিই আছেন। সেই জন্য আমি বলতে চাইছি আমাদের বোঝাপড়াটা খুব ভাল। আমরা নিজেদের সেরা খেলাটা দেয়ার চেষ্টা করছি এবং সবাই সেটা নিয়েই আলোচনা করছি। নিজেরা চেষ্টা করছি যে যার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখার। আমার কাছে মনে হয় এই জিনিসটা অনেক বড় একটা সুবিধা আমাদের জন্য। এ কারণে আমাদের বাইরের চিন্তা একটু কম।’ প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের নিয়েই ভাবতে রাজি ঢাকা প্লাটুনের ক্রিকেটাররা। তবে খেলাটি রাজশাহী রয়্যালসের বিরুদ্ধে। যে দলে লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসেন ধ্রুব, আবু জায়েদ রাহী, ফরহাদ রেজা, অলক কাপালী, কামরুল ইসলাম রাব্বি, ইরফান শুকুর, মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদি, নাহিদুল ইসলামের সঙ্গে বিদেশী আন্দ্রে রাসেল, রবি বোপারা, হযরতুল্লাহ জাজাই, মোহাম্মদ ইরফান, শোয়েব মালিকের মতো ক্রিকেটাররা রয়েছেন। ঢাকার শুভ সূচনা করায় বিপত্তি ধরা দিতে পারে। আফিফ হোসেন যেমন বলেছেন, ‘আসরে মেমেন্টাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাল একটা শুরু করতে পারলে পুরো আসর ভাল যায়। আমরা চেষ্টা করছি প্রথম ম্যাচ ভালভাবে শুরু করার। আমাদের দলও ভাল। বেশ ভাল কম্বিনেশন আছে। সবাই একসঙ্গে অনুশীলন করতে পেরে ভাল লাগছে।’ বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্রথম ম্যাচে, লীগের সপ্তম আসরের প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে নেয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দলে দলে ক্রিস গেইল, লেন্ডল সিমন্স, কেসরিক উইলিয়ামস নেই। আবার শুরুতে ইনজুরির জন্য অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও খেলতে পারছেন না। এরপরও সিলেট থান্ডারকে সহজেই হারায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। ইমরুল কায়েসের ৬১, ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাডউইক ওয়ালটনের অপরাজিত ৪৯ ও শ্রীলঙ্কার আভিস্কা ফার্নান্দোর ৩৩ রানে সিলেট থান্ডারের করা ১৬২ রান সহজেই অতিক্রম করে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। আজ দলটি খেলবে খুলনা টাইগার্সের বিরুদ্ধে। যে দলটিতে মুশফিকুর রহিম, শফিউল ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত, শামসুর রহমান, সাইফ হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে বিদেশী রাইলি রুশো, রবার্ট ফ্রাইলিঙ্ক, মোহাম্মদ আমির, নজিবুল্লাহ জাদরান, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার মতো ক্রিকেটাররাও রয়েছেন। খুলনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলেছেন, ‘আমাদের দলে হয়তোবা বড় বড় নাম নাই। কিন্তু যারা আছেন তারা টি২০’র জন্য খুবই ভাল খেলোয়াড়। এমনকি তারা গত বিপিএলগুলোতেও ভাল করেছে। ফ্রাইলিংক আছেন, রাইলি রুশো আছেন, আমাদের যারা স্থানীয় আছেন শফিউল, বিপ্লব, মিরাজ, শান্ত। ইনশাল্লাহ আমরা অনেক ভাল দল আর টি২০তে নিজেদের দিনে যারা ভাল করবে কাগজে কলমের থেকে তারা বেশি এগিয়ে থাকবে।’ মুশফিকরা এখন এগিয়ে থাকবেন, নাকি পিছিয়ে থাকবেন, তা সময়ই বলবে। তবে লীগে শুভ সূচনা করতে হলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে রুখতে হবে। খেলা হবে ঢাকায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। তাই রাজধানী দল ঢাকা প্লাটুনের দিকেই বেশি নজর থাকবে। তারা আজ রাজশাহী রয়্যালসের বিরুদ্ধে শুরুর মিশনেই কি করেন সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে।
×