ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গড়ে ১১টি করে শেয়ার রয়েছে

এজিএমের জন্যে ১৫৮ কোম্পানিতে বিনিয়োগকারী নেতার বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৯

এজিএমের জন্যে ১৫৮ কোম্পানিতে বিনিয়োগকারী নেতার বিনিয়োগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঐক্যপরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরীর সেকেন্ডারি মার্কেটে নামমাত্র বিনিয়োগ থাকলেও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের রয়েছে ১৫৮ কোম্পানিতে বিনিয়োগ। তবে বিনিয়োগের দিক থেকে ১৫৮ কোম্পানিতে বিনিয়োগ থাকলেও টাকার পরিমাণে বিনিয়োগ খুবই নগণ্য। তিনটি বেনিফিশারি ওনার্স (বিও) হিসাবের বিপরীতে প্রতিটি কোম্পানির গড়ে ১১টি শেয়ার কিনেছেন তিনি। তার এই বিনিয়োগের সঙ্গে নিয়মিত এজিএমে যান এমন বিনিয়োগকারীর সাদৃশ্য রয়েছে। এমনিতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর এজিএম নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে শুরু থেকেই। কারণ বেশিরভাগ কোম্পানির এজিএমই কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এজিএম পার্টিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত নিজেদের পক্ষে মত নিয়ে থাকেন। আর এই কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি চক্র সব সময়ই কিছু কোম্পানির নামমাত্র শেয়ার কিনেই পার্টিতে যান, প্রভাব খাটিয়ে অর্থ উপার্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদকের এই বিনিয়োগেও ধরনও ঠিক একই রকমের। যদিও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন করে এখন এজিএম পার্টিতে উপহার প্রদান নিষিদ্ধ করেছে। তবুও এজিএম পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী আব্দুর রাজ্জাকের বর্তমানে ৩টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব রয়েছে। এগুলো ইবিএল সিকিউরিটিজ, হাবিবুর সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজে খোলা হয়েছে। সবই তার শেয়ার রয়েছে। তবে মূলত তিনি ইবিএল সিকিউরিটিজের বিও হিসাবে সব শেয়ার কিনেছেন। তিনি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩১৯ কোম্পানির মধ্যে ১৫৮টি বা ৫০ শতাংশ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি ওইসব কোম্পানির ১ হাজার ৭০৫টি শেয়ার কিনেছেন। গড়ে প্রত্যেকটি কোম্পানির ১১টি শেয়ার কিনেছেন। গত ৩১ আগস্টে শেয়ারবাজারের প্রতিটি শেয়ারের গড় দর ছিল ৪৮ টাকা। এ বিবেচনায় রাজ্জাকের ১ হাজার ৭০৫টি শেয়ারের দর হয় ৮১ হাজার ৮৪০ টাকা। যেখানে বর্তমানে প্রতিটি বিও হিসাবে গড়ে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। তার পোর্টফলিওতে কোন মিউচুয়াল ফান্ড নেই। কারণে ফান্ডের কোন এজিএম হয় না। জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, এজিএমে গিয়ে আমি ভাল কোম্পানির প্রশংসা এবং খারাপ কোম্পানির দুর্নাম করি। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে ভাল করার জন্য পরামর্শ দেই। এছাড়া অনেক কোম্পানির এজিএমে ভাল বক্তব্যও হয়। একইসঙ্গে এজিএম পার্টির অনেকে প্রতিবাদও করেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি এজিএমে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য নামমাত্র শেয়ার ধারণ করে, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত। এছাড়া এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এজিএমে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার করা যেতে পারে। একজন বিনিয়োগকারী ১টি শেয়ার ধারণের কারণেও এজিএমে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এখন সে যদি ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এজিএমে ঝামেলা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। এক মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আইপিও অনুমোদনের পরপরই বিনিয়োগকারী নেতাদের কেউ কেউ টাকা দাবি করে বসে। না হলে আবার উকিল নোটিস পাঠায়। এছাড়া বিএসইসিতে আইপিও বাতিল চেয়ে চিঠি দেয়। যদিও কমিশন তাদের চিঠির পেছনে উদ্দেশ্য জেনে গেছে, যে কারণে তাদের এখন আর গুরুত্ব দেয় না। সম্প্রতি তারা আইপিও লটারিতে গিয়েও টাকা পাওয়ার প্রত্যাশা শুরু করেছেন। বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ঐক্যপরিষদের ব্যানারে কিছু নামধারী বিনিয়োগকারীর অনৈতিক কর্মকা-ের অভিযোগ অনেক দিনের। কিন্তু কেউ তাদের বিরুদ্ধে কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করে না। অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। আব্দুর রাজ্জাকের হাবিবুর রহমান সিকিউরিটিজে ১২০২০৮০০৫৮১৪৭৮১৫ নম্বরের বিওতে ২৫ কোম্পানির ১৮৫টি শেয়ার কেনা আছে। এছাড়া বানকো সিকিউরিটিজে ১২০২১৫০০১৬০৪১৬২৭ নম্বরের বিও হিসাবে ২টি কোম্পানির ৬৩টি শেয়ার এবং ইবিএল সিকিউরিটিজে ১২০১৯৫০০৬২৫৬৫৯৫৭ নম্বরের বিওতে ১৩১টি কোম্পানির ১৫০২টি শেয়ার কেনা আছে। এক্ষেত্রে ১৫৮ কোম্পানিতে গড়ে ১১টি শেয়ার কেনা হয়েছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কোন কোন কোম্পানির মাত্র ১টি করে শেয়ার কিনে ওই কোম্পানির মালিকানায় অংশগ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে ওই কোম্পানির এজিএমে প্রবেশেরদ্ধারও পরিষ্কার রেখেছেন। এমন ১টি শেয়ার কেনা কোম্পানির তালিকায় রয়েছেÑ সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও রূপালী ব্যাংক। যিনি ২টি করে শেয়ার কিনেছেন আরএকে সিরামিকস, এসিআই ফরমুলেশনস, এসিআই লিমিটেড, এপেক্স ফুটওয়্যার, ন্যাশনাল টি, নাভানা সিএনজি ও রহিম টেক্সটাইলের। শেয়ারবাজারে আব্দুর রাজ্জাক সবচেয়ে বেশি শেয়ার কিনেছেন ইভিন্স টেক্সটাইলের। এ কোম্পানিটির ১৫০টি শেয়ার রয়েছে তার বিও হিসাবে। এরপরের অবস্থানে থাকা পিপলস লিজিংয়ের ৬০টি, আরগন ডেনিমসের ৫০টি, বিআইএফসির ৪০টি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৩৪টি, বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩৫টি, আফতাব অটোমোবাইলসের ২৮টি ও ঢাকা ব্যাংকের ২৭টি শেয়ার রয়েছে।
×