ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটারদের মতামত নিয়েই পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনা!

প্রকাশিত: ১০:০২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

 ক্রিকেটারদের মতামত নিয়েই পাকিস্তান  সফরের পরিকল্পনা!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগামী বছরের শুরুতেই পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের। তবে সেই সফর নিয়ে উদ্বিগ্নতা রয়েছে বরাবরের মতো এবারও। কারণ পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব বেশি সন্তোষজনক নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতায় পাকিস্তানের পরিস্থিতি সবসময়ই অস্থিতিশীল। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) কাছে বিকল্প ভেন্যুর দাবিও করা হতে পারে জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু সম্প্রতিই পিসিবি জোরালোভাবেই জানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের বাইরে কোন ঘরোয়া সিরিজ আয়োজন করতে চায় না তারা। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে সেই সফরের আগে নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে একটি নিরাপত্তা দল পাকিস্তান সফর করে এসেছে। সেই প্রতিবেদন থেকে সরকারের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পর ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসবে বিসিবি। পরে তা পর্যালোচনা করে ক্রিকেটারদের মতামত নিয়েই পাকিস্তান সফরের ভবিষ্যত নির্ধারণ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। এই সফরে বাংলাদেশ দলের ২ টেস্ট ও ৩ টি২০ ম্যাচের সিরিজ রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ভবিষ্যত ট্যুর প্রোগ্রামের (এফটিপি) আওতায় অনেক আগেই নির্ধারিত হয়ে আছে আগামী বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরটি। এফটিপি অনুসারে সেখানে গিয়ে ২ টেস্ট ও ৩ টি২০ ম্যাচের সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু পাকিস্তান সফর এগিয়ে আসলেই তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। গত ১০ বছরে খুব কমই পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছে। মূলত ২০০৯ সালে পাকিস্তান সফরে থাকা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ওপর লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টিম বাসে করে যাওয়ার সময় বন্দুকধারীদের হামলায় কয়েকজন ক্রিকেটার গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই কোন বিদেশী জাতীয় দল পাক সফরে যায়নি। বাধ্য হয়ে পিসিবি ঘরোয়া সিরিজগুলো আরব আমিরাতে আয়োজন করেছে। তবে ২০১২ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ দলের পাক সফর নিয়ে পিসিবি কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তারা বাংলাদেশকে নিয়ে বিকল্প কোন ভেন্যুতে সিরিজ আয়োজনে অস্বীকৃতি জানায়। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং কিছু ক্রিকেটীয় আদান-প্রদানের কারণে সেবার দল পাঠাতে সম্মত হয়েছিল বিসিবি। কিন্তু পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে সফরে না যাওয়ায় পিসিবিকে মোটা অঙ্কের অর্থ জরিমানা দিয়েছিল বিসিবি। এছাড়াও অনেকবার বাংলাদেশ দলকে পাক সফরে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেছে পিসিবি। কিন্তু রাজি হয়নি বিসিবি কিংবা ক্রিকেটাররা। ২০১২ সালের চেয়ে এবারের প্রেক্ষিতটা ভিন্ন। কারণ সম্প্রতি পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রায় নিয়মিত হতে শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ে দল সংক্ষিপ্ত সফরে ক্ষুদ্র ফরমেটের সিরিজ খেলেছে এবং আইসিসি বিশ্ব একাদশকে পাঠিয়ে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলেছে। নিয়মিতই সেখানে আন্তর্জাতিক তারকাদের নিয়ে হওয়া পাকিস্তান সুপার লীগের (পিএসএল) ম্যাচ হয়ে থাকে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজ এবং বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ ক্রিকেট দল ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে পাকিস্তানে গিয়ে। সেই সফরটির আগেও নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে দল দুটি পাঠিয়েছিল বিসিবি। উভয় সিরিজ একেবারে নিষ্কন্টক নির্বিঘ্নতায় শেষ হওয়ার কারণে পিসিবি বেশ ভালভাবেই পেয়ে বসেছে বিসিবিকে। বিসিবিকে রাজি করানোর যৌক্তিকতাও পেয়ে গেছে। তাই জানুয়ারিতে জাতীয় দলকে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে উল্টো বিসিবিই আছে বিপাকে। তাছাড়া এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আবার শ্রীলঙ্কা দল ৩ ম্যাচের ওয়ানডে ও ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলে এসেছে। তারা চলতি মাসেও ২ টেস্টের সিরিজ খেলতে যাচ্ছে পাকিস্তানে। ক্ষুদ্র ফরমেটের সিরিজে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) রাজি হলেও নিয়মিত ১০ ক্রিকেটার তাতে সম্মত হয়নি। ফলে আনকোরা একটি দল পাঠিয়েছিল লঙ্কানরা। তবে টেস্ট সিরিজে আবার ঠিকই নিয়মিত দলটাকেই পাঠাচ্ছে তারা। এর ফলে পিসিবি এখন আরও ভালভাবেই বিসিবিকে রাজি করানোর উপায় পেয়ে গেছে। কিন্তু এখানে সরকারের পক্ষ থেকে সম্মতি পাওয়ার বিষয়টি আগে। সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো বাংলাদেশের একটি নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল ইতোমধ্যে পাকিস্তান ঘুরে এসেছে। আপাতত তাদের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে বিসিবি, জানিয়েছেন বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই ক্রিকেটারদের মতামতের সুযোগ আছে। সরকারী একটি দল ইতোমধ্যে পাকিস্তান সফর করেছে এবং আমরা তাদের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। বাংলাদেশ হাইকমিশন, এছাড়া যেহেতু আন্তর্জাতিক ম্যাচ তাই আইসিসির সম্পৃক্ততাও রয়েছে এখানে। সবকিছু সবার সঙ্গে আলোচনা করেই একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব আমরা। চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে এবং আমরা এ নিয়ে কাজ করছি।’ এখনও প্রায় দেড় মাস বাকি আছে সিরিজটি শুরুর। কিন্তু এখন তা যতই এগিয়ে আসছে আলোচনা আর জল্পনা-কল্পনা বেড়ে চলেছে। কারণ নিরাপত্তার ইস্যুটা থেকেই যাচ্ছে। সেখানে ক্রিকেটারদের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরই নিউজিল্যান্ড সফরে ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে বন্দুকধারী যখন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করছিল, ওই সময় টিম বাসে করে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সেখান উপস্থিত হন। একজন পথচারী মহিলা সতর্ক করার ফলে সেই যাত্রা বেঁচে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। পরে আর তৃতীয় টেস্ট না খেলেই দেশে ফিরে আসে বাংলাদেশ দল। সেই ভয়াল স্মৃতি অনেকদিন ক্রিকেটারদের মনে দাগ কেটে রেখেছিল। মানসিক দৃঢ়তা ফিরিয়ে আনতে বিসিবি ক্রিকেটারদের জন্য মনস্তত্ত্ববিদও এনেছিল। সময়ের সঙ্গে সেই ঘটনা ভুলে গেলেও এখন সহিংসতায় পূর্ণ পাকিস্তান সফর এগিয়ে আসায় নতুন করে ক্রিকেটারদের মনে হয়তো আবার নাড়া দেবে কোনক্রমে ক্রাইস্টচার্চে বেঁচে যাওয়ার সেই দুঃসহ স্মৃতি।
×