স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঙ্গীত আকাশে তিনি অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুধা সিঞ্চন করে চলেছেন দেশ-বিদেশে। রবীন্দ্র সঙ্গীতভক্ত হৃদয়ে সমুজ্জ্বল শিল্পী অদিতি মহসিন গৌরবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সঙ্গীতচর্চার ২০ বছর অতিক্রম করেছেন। তার এই সমৃদ্ধ সঙ্গীত জীবনকে উদ্যাপন করতে ‘অরুণ আলোর অঞ্জলি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এক্সপ্রেস ইভেন্টস লিমিটেড এবং ডিজিটাল কমিউনিকেশন্স পার্টনার ডিজিটাল এক্সপ্রেশন্স। আগামী ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস ও সংসদ সদস্য সংস্কৃতিজন আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করবেন উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। এই সন্ধ্যায় শিল্পী অদিতি মহসিন তার পছন্দের গান গেয়ে শোনাবেন। এ উপলক্ষে রবিবার দ্য ডেইলি স্টার ভবনের তৌফিক আজিজ খান সেমিনার হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এক্সপ্রেস ইভেন্টস লিমিটেডের পরিচালক উৎপল কর্মকার, উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের সমন্বয়ক সৈয়দ আপন আহসান ও সদস্য আফরিন মল্লিক। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে শিল্পী অদিতি মহসিন তার পছন্দের গান গেয়ে শোনাবেন। আয়োজক প্রতিষ্ঠান এক্সপ্রেস ইভেন্টসের পরিচালক উৎপল কর্মকার বলেন, এক্সপ্রেস ইভেন্টস থেকে অদিতির সঙ্গীত জীবনের বিশ বছর উৎসবের আয়োজন করছি। এটার জন্য আমরা গত ২৬ অক্টোবর থেকে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমাদের ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন সংখ্যা এক হাজার ছুঁয়ে গেছে। সাদিয়া আফরিন মল্লিক বলেন, ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন সাড়ে আট শ’ ছাড়িয়ে গেছে, আজ সকালে হয়ত এক হাজার ছুঁয়ে গেছে। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি বিশেষ শিল্পীদের নিয়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান বেশি হতো। অদিতির একটা ব্যাপার আমি সব সময় লক্ষ্য করি, শিল্পীদের যে তিনটি গুণ থাকা দরকার তা হচ্ছে রূপ, গুণ ও গায়কী। এই ত্রিবেনী সঙ্গম যখন কোন শিল্পীর মধ্যে থাকে তখন সে কিন্তু সত্যিকার অর্থে একজন শিল্পী হয়ে ওঠে। একজন শিল্পীর জীবনে বিশ বছর খুব বিরাট কিছু নয়। আমি মনে করি অদিতির যাত্রা সবে শুরু। এই শুরুতেই সে শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গেও অত্যন্ত আলোচিত নাম। এছাড়া ইউরোপ, আমেরিকা, চায়না, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু দেশে সে রবীন্দ্রনাথের বাণী-গান ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা একজন শিল্পীর জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং আমাদের জন্যও গর্বের। তার নাম আরও দিক-বিদিক ছড়িয়ে যাক এই কামনা করছি। উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের সমন্বয়ক সৈয়দ আপন আহসান বলেন, এ উৎসব উদ্যাপন পর্ষদের সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। অন্যান্য সদস্য হচ্ছে আনিসুল হক, আবদুল হাই সরকার, ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম, ম. হামিদ, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, মুহাম্মদ এ (রুমী) আলী, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী, সাদিয়া আফরিন মল্লিক, সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ও চিত্রশিল্পী হাশেম খান। শিল্পী অদিতি মহসিনের পৈত্রিক নিবাস মানিকগঞ্জে। তিনি জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠেছেন একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিম-লে। তার মা ও বাবা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের আদর্শে বিশ্বাসী। বাবা-মায়ের অনুপ্রেরণাতেই তিনি সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তার মা শৈশবেই তাকে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসে (বিএএফএ, বাফ) তাকে ভর্তি করান। ১৯৯২ সালে তিনি সরকারী বৃত্তি নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে উচ্চতর সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এ সময় কণিকা বন্দোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শান্তিদেব ঘোষের মতো প্রখ্যাত সঙ্গীত গুরুর কাছে শিক্ষা লাভ করেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতে তিনি বিশ্বভারতীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়া তিনি মোহন সিংয়ের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন। অদিতি মহসিনের প্রথম রেকর্ডটি ছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ‘আমার মন চেয়ে রয়’ শিরোনামের একটি সিডি ও ক্যাসেট। তিনি ড. নওয়াজেশ আহমেদের তোলা ফটোগ্রাফকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর নির্মিত ‘ছিন্নপত্র’ তথ্যচিত্রে গান গেয়ে প্রশংসিত হন।
এ গুণী শিল্পী ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ছায়ানটের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অদিতি মহসিন তার কণ্ঠ মাধুর্য সঙ্গীত সাধনার জন্য নানা স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২০০৪ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ, ২০০৬ সালে সিটিসেল চ্যানেল আই পুরস্কার, ২০১৬ সালে সিম্ফনি চ্যানেল আই সঙ্গীত পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।