ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ছোটগল্পে স্বাতন্ত্র্য

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৯ নভেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের ছোটগল্পে স্বাতন্ত্র্য

ব্যাপারটা রীতিমতো ভাবনার শুধু নয়, বিস্ময়কর বিষয়ও বৈকি। একদল সগর্বে বলছেন যে, বাংলাদেশের সাহিত্যে ছোটগল্পের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদল, বিশেষত তরুণরাই সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, বলছেন ছোটগল্পের মৃত্যু হয়নি; তার মারা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ইচ্ছে আর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকলেই ছোটগল্প আবার লেখা যাবে। পৃথিবীর কোন ভাষার সাহিত্যে এ রকম বিতর্ক হয়েছে এমন নজির আমাদের জানা নেই। গল্পের প্রকরণ প্রসঙ্গ, এমনকি বিষয় নিয়ে কোর্টের কাঠগড়ায় লেখক দাঁড়িয়েছেন, যেমন বিদেশে লরেন্স ও আমাদের দেশে সমরেশ বসু। কেউ আবার অশ্লীল লেখক বলে পরিচিহ্নিত হয়েছেন। বিতাড়িত লেখকের পরবর্তীকালে সম্মানিত হওয়ার কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু কোন গল্পকার বলেননি যে, ছোটগল্পের মৃত্যু হয়েছে, অতএব উপন্যাস লেখ। বেশ কিছুদিন আগে একজন গল্পকার এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ছোটগল্পকে ঐতিহ্যহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। মন্তব্যটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যমন্ডিত। কারণ দেশের পরিবেশ কাঠামো বেশির ভাগ আমাদের ছোটগল্পে ঠাঁই পায়নি। আমাদের সাম্প্রতিক ছোটগল্পের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য প্রস্ফুটিত হয়েছে, সেগুলো হলো : এক. অনেক গল্পকার নিটোল গল্প লেখায় বিশ্বাস করেন না। গল্পহীন গল্প লেখায় ক্রমশ পারদর্শী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রত্যেকেই নিজেকে ভাবছেন একেকজন গ্যাব্রিয়েল ম্যার্কেজ কিংবা নিদেনপক্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। দুই. আজকের অধিকাংশ তরুণ গল্পকার পশ্চিমা গল্প লেখকদের অনুসরণ করতে গিয়ে সমাজবিচ্ছিন্ন গল্প লেখার অভ্যাস করছেন। তাদের গল্প পড়ে বোঝাই যায় না তারা কোন সমাজের কথা বলছেন। তাহলে স্বভাবত প্রশ্ন উঠতে পারে ছোটগল্পের মৃত্যু হয়েছে এমন মন্তব্য কেন শোনা গেল। তাহলে কি ধরে নিতে হবে এই মন্তব্যের আগে প্রচুর শিল্পসফল ছোটগল্প লেখা হয়েছে? আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বাতন্ত্রিক ঐতিহ্যকে গল্পের ভেতর দেশে মেলাবার প্রচেষ্টা আর খুব একটা পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। অথচ এই সময় পশ্চিমবঙ্গে শিল্পসফলতাযুক্ত গল্পের সংখ্যা দেখলে অবাক হতে হয়। ভাবাই যায় না তাদের কেউ একজনও নিজস্ব সম্প্রদায়কে এড়িয়ে গল্পচর্চা করেছেন। আমার তো মনে পড়ছে না। বিশ্বাস না হলে রাজনৈতিকভাবে কমিউনিস্ট গল্পকার দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহুল আলোচিত ‘জটায়ু’ গল্পটি পড়ে দেখতে পারেন। কারণ অত্যন্ত স্বাভাবিক। তারা তাদের ঐতিহ্যের বর্ধিষ্ণু স্রোতধারাকে গল্পের বিষয় হিসেবে আশ্রয় করেছেন। আর মেধাকে তারা প্রধানতম মাধ্যম হিসেবে মেনে নিয়েছেন। সে কারণে কেউ তাদের প্রতিক্রিয়াশীল বলে সমালোচনা করেছেন এমন উদাহরণ বিরল। পশ্চিমবঙ্গের গল্প যে এখনও অবিশ্বাস্য গতিতে ভাল হচ্ছে তার মূল রহস্য এখানেই। আসলে তারা জানেন যে, একজন ছোটগল্পকারকে জীবনশিকারী হয়ে গল্পের বিষয়-আশয় অনুসন্ধানে রত হতে হয়। ফলত সেখানকার যে লেখকরা পঞ্চাশ দশকে গল্পকে ভাঙ্গাচোরার প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন তারাও কেউ বলেননি যে, ছোটগল্পের মৃত্যু হয়েছে, যেমন বলেছেন আমাদের একজন গল্পকার সৈয়দ শামসুল হক। পাশাপাশি ধরা যাক পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট গল্পকার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্পচর্চার ইতিবৃত্ত। তিনিও পঞ্চাশের অন্যতম সারথি, তিনিও প্রচলিত অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখেই গল্পের আঙ্গিক ভাঙার কাজটি করেছেন। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়-এর পক্ষে এই কাজটি করা সম্ভবপর হয়েছিল এই জন্য যে, তাদের গল্পের উত্তরাধিকারীদের ভা-ারটি ছিল পরিপূর্ণ। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, সন্তোষকুমার ঘোষ ও নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্পের অবিশ্বাস্যরকম ভক্ত ছিলেন তিনি। যদিও জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী পরবর্তীকালের এক সাক্ষাৎকারে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়দের গল্পের পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে খুব একটা সমর্থন করেননি। তবুও তারা, বিশেষত শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অতীন বন্দ্যেপাধ্যায় ও মতি নন্দীরা বিমল কর-এর নেতৃত্বে নতুন চেতনারীতির গল্প আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। আমাদের গল্পসাহিত্যে সেই সময় এই রকম কোন আন্দোলনই হয়নি। এই দশকে কেবল শাহেদ আলী ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছাড়া আর কারো লেখায় তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিশীলতা পাওয়া গেল না। তবে ষাট দশকে আমাদের গল্পে এই রকম এক সচেতন আন্দোলন দেখা গেল। গল্পসাহিত্যে নতুন আঙ্গিক তৈরির কাজে অনেককে অগ্রসর হতে দেখা গেল। কিন্তু সেই আন্দোলন সীমিত থাকলো কেবল ভাষারীতিকে ঘিরে, তার পরিপূর্ণতা শেষাবধি পাওয়া গেল না। হাসান আজিজুল হক যেমন অন্য মেরুর সৃষ্টি করেছিলেন পাশাপাশি মাহমুদুল হক ছিলেন তেমনি অন্যধারার প্রতিভূ গল্পকার। মাহমুদুল হকের লেখনী অনেক আগেই (মৃত্যুরও অনেক আগে) থেমে গেছে, আর হাসান আজিজুল হক এখন আর গল্প লেখেন না, অন্য এক মহাদেবের সেবা করছেন। আর সত্যি বলতে কি ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছে’র পর হাসান আজিজুল হক তেমনভাবে উল্লেখযোগ্য গল্প লিখতে পারেননি। আগেই উল্লেখ করেছি যে, বাংলাদেশের সাহিত্যের ছোটগল্প এক প্রকার ঐতিহ্যহীন হয়ে পড়েছে। পঞ্চাশ দশকে আলাউদ্দিন আল আজাদ-এর উজ্জ্বলতাহীন গল্প সৃজন তথাকথিত প্রগতিশীল মহলে মাতামাতির ঝড় তুলেছিল। আজকে সেই সমস্ত গল্প পড়ে মনে হয় যে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরলীকৃত সংস্করণ সেগুলো। গল্পের ঐতিহ্যহীন সাহিত্যে এই রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ সমালোচনা এখানে পিঠ চাপড়ানি ছাড়া আর কিছু নয়। সেই যে চল্লিশ-পঞ্চাশ দশকে বামপন্থী সমালোচকরা শুরু করেছিলেন, তাদের মতাদর্শপন্থী দুর্বল গল্পকারদেরও ভ’যসী প্রশংসা করতেন, গল্পের ভেতরদেশে সমাজবাদী আদর্শের কথা উল্লেখ না থাকলে সেই লেখককে প্রতিক্রিয়াশীল বলে আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করতেন না। অথচ বিপরীত মতাদর্শের শক্তিশালী গল্পকাররাও তাদের দৃষ্টির আড়ালে-আবডালে থেকে যেত। আজো সমালোচনার সেই ধারা অব্যাহত আছে। ছোটগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর গভীরতা সেটা অনেকাংশ রক্ষিত হয়েছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর গল্পে। সৈয়দ শামসুল হকের প্রচেষ্টা ষাট দশকের শেষ সীমায় প্রশংসনীয় হলেও পরবর্তীকালে প্রবন্ধ-গল্প লেখার দিকে ঝুঁকে গল্পকে একটা ভজকট অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। সেই প্রভাব এখন তরুণ লেখক সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। শাহেদ আলীর ‘জিবরাইলের ডানা’র মধ্যে কিছুটা প্রতিশ্রুতির আশ্বাস পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে তার আর পরিপূর্ণতা পাওয়া গেল না। অনেক পরে তার সৃজিত ‘শা’নজর’ গল্পটি এক অর্থে বাংলা গল্পসাহিত্যে শুধু নয়, এমন আশ্চর্য আধ্যাত্মিক গল্প বিশ্বসাহিত্যেও খুব কম আছে বলে আমার বিশ্বাস। এই গল্পটি শাহেদ আলীকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবে। তবে ষাট দশক আমাদের গল্পসাহিত্যে সত্যিই এক উজ্জ্বল উন্মাতাল দিক। সত্যিকারভাবে এই দশকেই আধুনিকতার ভাবধারাটা আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠে। গল্পসাহিত্যে প্রকরণগত ধ্যান-ধারণার আমদানি ও ভাষাকে শক্তিশালী করার কাজে প্রধানত তিন জনের কৃতিত্ব। এরা হলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও মাহমুদুল হক। মূলত এই দশকে প্রবীণ গল্পকারদের চেয়ে নবীন গল্পকাররা স্বাভাবিকতার চেয়ে বেশি শক্তিময়তা প্রদর্শন করেছিলেন। আবার সেই কারণে বিপদের প্রবণতা সেখানেই নিহিত ছিলো। তরুণদের মধ্যে আজকাল যারা গল্পচর্চা করছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া আর সবাই ভাষা-ব্যবহার-চেতনায় আক্রান্ত। আজও যখন তাদের গল্পে অজস্র অশ্রুধারার মতন বাক্য ব্যবহৃত হতে দেখি তখন সত্যিই বিস্ময় জাগে। আমাদের গল্পসাহিত্যে মাহমুদুল হক বেশ প্রভাবসঞ্চারী ক্ষমতার অধিকারী হয়েও পরবর্তীতে কী এক রহস্যময় কারণে ক্ষণজীবী হয়ে পড়লেন। অথচ তার আগমন আমাদের বাংলাসাহিত্যে ছিলো একটি ঘটনা। তার ‘বেওয়ারিশ লাশ’, ‘জোনাকী’, ‘বুড়ো ওবেদের জমা খরচ’ ও ‘প্রতিদিন একটি রুমালের’র মতো গল্প আমাদের সাহিত্যে উজ্জ্বল সংযোজন হিসেবে পাঠকের মনে সঞ্চারিত হবার ক্ষমতা রাখে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অবশ্যই বিরলপ্রজ গল্পকার, জীবনে মাত্র ২৩টি গল্প লিখে আমাদের মতো ঐতিহ্যহীন গল্পের পাঠকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন গল্পের লেখক আলোচিত হবেন গল্পের গল্পময়তার গুণে। তাঁর প্রথম দিককার গল্পে কাব্যময়তার প্রভাব থাকলেও পরবর্তীকালে বাস্তবতাবোধ এত বেশি প্রভাব ফেলেছে যে, তাঁর গল্পপাঠ আমাদের আশাবাদিতার পরিবর্তে এনে দেয় হতাশাবোধ। তবুও আমাদের মানতে হবে তিনি একজন শক্তিশালী গল্পকার। আমাদের দুঃখবোধ হলো, এরা প্রত্যেকেই এতটা বিরলপ্রজ (অবশ্যই আবদুল মান্নান সৈয়দ বাদে) লেখক যে, পরবর্তী গল্প লেখকদের উপর এদের প্রভাব শুধু সাদামাটা নয়, বিকৃতও। ফলশ্রুতিতে এখন পর্যন্ত গল্পকারদের আসল যাত্রাপথ কোন দিকে সেটা বলা যাচ্ছে না। বস্তুত সেটাই একটা সমস্যা। তবে এই দশকের হুমায়ুন কাদির গল্পকার হিসেবে খুব বেশি পরিমাণে অনালোচিত থেকে গেছেন। তিনি অবশ্যই সমাজসচেতন গল্পকার, কিন্তু রোামান্টিকতা তার গল্পমালাকে আলাদা স্বাতন্ত্র্যময়তার জগতে নিয়ে যায়। আমাদের দেশে সমাজবাদী সমালোচকরা এই ধরনের গল্পকারদের তেমনভাবে গুরুত্ব দিতে চান না। ফলে তাকে নিয়ে প্রত্যাশিত আলোচনা চোখে পড়ে না। অন্তত তিনটি গল্প ‘বিমর্ষ বিকেল’, ‘উত্তরণ’, ‘শিলার জন্য সাধ’ আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের ব্যাথা-বেদনার অবলোকনের আয়না হিসেবে কাজ করবে। আসলে এই গল্পকার কখনো মধ্যবিত্তকে নিয়ে বানানো গল্প বলতেন না। আবদুল মান্নান সৈয়দ জীবনের শেষ দিন অবধি গল্প লিখে গিয়েছেন। ক্রমশ সহজতার দিকে তিনি অগ্রসর হলেও গল্পের স্বতন্ত্র মঞ্জিলে পৌঁছেছেন কিনা সেটা পরবর্তীকালের সমালোচকরা বলতে পারবেন। তবে ৭০ দশকের শেষ দিকে গল্পলেখার প্রবণতা গল্পকারদের মধ্যে কমে যেতে থাকে। এর কারণ হিসেবে কেউ রাজনীতিকে দায়ী করলেও আমরা এটিকে অন্যভাবে দেখার পক্ষপাতী। সৈয়দ শামসুল হকের মত শক্তিশালী গল্পকাররা অতিমাত্রায় স্বাতন্ত্র্যবাদী হওয়ার প্রত্যাশায় এক অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় গল্প লিখতে শুরু করলেন। বললেন এখন হবে গল্প-প্রবন্ধ, মোটামুটি তখন থেকেই অধঃপতনের ধারার সূচনা। এই মন্তব্যের অর্থ এই নয় যে, আমি গল্পে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিরোধী। এর ফল হলো এই যে, দেখা গেলো পত্র-পত্রিকায় ছোটগল্পের তেমন চাহিদা আর নেই। গল্পকাররা শুরু করলেন উপন্যাস লিখতে। বলাবাহুল্য এই প্রবণতা গোটা আশির দশকে একেবারে প্লাবনের মতো ছড়িয়ে পড়লো। এই সময়ে পত্র-পত্রিকায় উপন্যাসের নামে দ্রুত গতির লেখা বড়গল্পকে উপন্যাস বলে চালানোর চেষ্টা শুরু হলো। সেটি এখন হাস্যকর পর্যায়ে চলে গেছে। তবে এর মধ্যে একেবারে ভালো গল্পকার আসেননি তা নয়, এসেছেন ইমদাদুল হক মিলন, সিরাজুল ইসলাম সাগর ও বশীর আহমদের মতো গল্পকার। তবে মিলন তার ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি করেছেন। হয়তো লেখালেখিকে পেশা করার কারণে এরকম হয়েছে। কিন্তু তাতেই সর্বনাশের বীজ রোপণ হয়ে গিয়েছিলো। ৯০ দশকে আমাদের গল্পসাহিত্যের জগতে কয়েকজন প্রতিভাবান গল্পকার অসামান্য ক্ষমতা নিয়ে আবির্ভূত হন। এরা ছোটগল্পের মৃত্যু হয়েছে এমন তত্ত্ব মানতে নারাজ। এরা হলেন মঞ্জু সরকার, বুলবুল সরওয়ার, মোশাররফ হোসেন খান, নাজিব ওয়াদুদ, কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, মামুন হুসাইন, জাকির তালুকদার, আরো অনেকে। তাদের সবাই এক মানসিকতার লেখক নন। অনেকেই সাম্যবাদী চেতনার দাবীদার হলেও গল্প লেখার বেলায় সাম্যবাদী রীতি-নীতির কোনও রকম বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় না। এই গল্পকারদের মধ্যে মোটা দাগে দুটি ধারা প্রবহমান। উদাহরণস্বরূপ নাজিব ওয়াদুদের কথা বলা যায়। তিনি নিঃসন্দেহে এদের মধ্যে উজ্জ্বলতম। তাঁর গল্পমালায় তিনি নিজের আলাদা চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি যখন গ্রামীণ জীবনের ছবি আঁকেন তখন স্বক্ষেত্রে সম্রাটের মতো পা ফেলেন। তিনি যা বিশ্বাস করেন তাকে গল্পে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। তার গল্পে আধ্যাত্মিকতার এক ধরনের চোরাটান সব সময় থাকে। তাঁর ‘মেঘ ভাঙা রোদ’, ‘আবাদ’, ‘পদ্মাবতী’, ‘খনন’ প্রভৃতি গল্পে ভাষা, বিষয় ও আঙিকচেতনায় সৃজনশীলতার উৎকর্ষ দেখা গিয়েছে। তাঁর গল্পে যত অকিঞ্চিতকরই হোক না কেন একটা গল্প থাকে, যদিও ঘটনার ঘনঘটা প্রায়শই থাকে না। এছাড়া বড়গল্প রচনায় তাঁর দক্ষতাও ঈর্ষণীয়। এই গল্পগুলো মধ্যে ‘দখল’ এবং ‘কমরেড ও কিরিচ’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দুঃখের বিষয়, তিনি লেখেন কম। তিনি তার যোগ্যতার তুলনায় সে পরিমাণে আলোচিত হননি। এর জন্য অবশ্যই আমাদের সমালোচনাসাহিত্যই দায়ী। তাঁর ‘আবাদ’ গল্পের শুরুটা পড়া যায়- -ভিষম নিষ্ফলা জমিন গো। শুখালে ইটের চাতাল, ভিজলে মানুষের গুয়ের লাহান। কিচ্ছুটি হয় নাখো। জগলু গরুর লেজ মুচড়ায়। গরু ছোটে মোচড় খেয়ে। লাঙ্গলের ফাল চলে পড়পড় শব্দ করে। মাটির বুক ফেড়ে আলগা হয়। -আরে বাঁ বাঁ বাঁ! ডানের গরুটাকে পান্ঠির সাবাড় দিয়ে বাগে আনে জগলু। -পাশলা জমিতে আবাদ হলে এডিতে হবে না ক্যানে? পায়ের আগায় ঢেলা ভেঙ্গে মাটির দানা পরখ করে ঝড়ু। -রোদ লাগবে জো ধরতে। মাটিতে রস আছে গো। খ্যাক খ্যাক করে হাসে জগলু। -বিবি আমার ঋতুমতী হয়ছেন। কিন্তুক বাঞ্জা। মুন বসে না। ঝড়ুর এসব পছন্দ হয় না। -মাটি হলো মায়ের মুতন। তাখে লিয়ে বদ-মস্করা ভালো লয়। মাটি কি আর অমনি নিষ্ফলা হয় গো? বুক ছিদরি কইরে দুধ টানবে কিন্তুক তাখে ইজ্জৎ কইরবে না তাকি হয়? নিজের পথ ধরে ঝড়ু। স্বচ্ছতা, সাবলীল গতিময়তা, ইঙ্গিতময়তা, রসবোধ, রূঢ় বাস্তবতার পাশাপাশি হালকা চালের দার্শনিকতা, সব মিলিয়ে একটা রহস্যময় অথচ বোধগম্য পরিবেশ রচনা করেন নাজিব ওয়াদুদ। আর একটি ধারা হচ্ছে আত্মবুদ্ধিবাদী ধারা। এরা দাবি করেন, তারা মনে-প্রাণে স্বদেশী ও প্রগতিশীল, কিন্তু প্রায়শ তাদের গল্পে বিদেশী লেখকদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এরা কথায় কথায় কাফকা, মার্কেজ, বোর্হেস, আচেবে, সারামাগোর নাম উচ্চারণ করেন। তাদের গল্পে চেতনাপ্রবাহের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এরা হলেন শহীদুল জহির, মহিবুল আজিজ, কাজল শাহনেওয়াজ, মামুন হুসাইন, সাদ কামালী প্রমুখ। এদের গল্পে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য প্রস্ফুটিত হয়েছে: ১. গল্পে গল্প থাকতে হবে এই নীতিতে তারা বিশ্বাসী নন। গল্পের মধ্যে একই সঙ্গে গল্প ও প্রবন্ধের সমন্বয় থাকতে হবে। দরকার হলে একাধিক গল্প থাকতে পারে। ২. গল্পের পাঠককে গল্পকারের মতন সমান পরিশ্রমী হতে হবে। অন্যথায় গল্পের রস আস্বাদন করা সম্ভবপর হবে না। ৩. গল্পের নায়ক-নায়িকারা বিমূর্ত জগতের মানুষ হিসেবে প্রতিভাত হয়। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো, তাদের গল্পে আমাদের বৃহত্তর সমাজপরিবেশের পরিচয় মেলে না। ফলে গল্পে যতখানি ভাষাদক্ষতা পাওয়া যায় ততখানি জীবনবোধের পরিচয় পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাহলে তো সরাসরি প্রশ্ন উঠতে পারে যে এই সমস্ত গল্পকার এই সমাজের বাসিন্দা হয়ে কেমন করে গল্প লিখছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো : আমাদের দেশের এক শ্রেণীর সমালোচক এদেরকে দেশের সেরা গল্পকার বলে আখ্যায়িত করতে দ্বিধা করছে না। ফলে আমাদের তরুণ গল্পকাররা প্রভাবিত হচ্ছে তাদের পথ অনুসরণ করতে। মামুন হুসাইনকে এই শ্রেণীর প্রধানতম গল্পকারদের একজন প্রতিনিধি বলা যায়। লেখক জীবনের শুরুতে মামুন হুসাইন এই নীতিমালায় বিশ্বাসী ছিলেন না। রাজশাহী থেকে প্রকাশিত, হাসান আজিজুল হক সম্পাদিত ‘কথা’ পত্রিকায় ছাপা ‘রং তুলি’ গল্পে তিনি গল্প কথনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন; পরবর্তীকালে দেখা গেল অন্যরকম মামুন হুসাইনকে। আমি আপাতত তার একটি গল্প থেকে কিছু অংশ তুলে ধরলাম- এই ঝাউবন ছাড়িয়ে কারখানার পেছনে নদী ঘেঁষে খুব চওড়া একটা শান করে দিয়েছিলো দেশভাগের আগে এক পশ্তুভাষী, যে তখন কারখানাটির মালিক। প্রতি বছর ঘটা করে তখন সেই শানের উপর ওয়াজ মাহফিল হতো এবং ওয়াজ শেষে প্রায়ই সবাই ভাবিত হয়ে পড়ত। মানুষ কি বানর জাত না মাটির জাত। (গন্ধহীন পচা সংবাদ) এই গল্পের ভাষা পড়লে বোঝা যায় মামুন হুসাইন সত্যিকারভাবে গল্পকথকের ভূমিকা ত্যাগ করে গল্পসৃজনে বর্ণনাত্মক রীতির (narrative style) আশ্রয় নিয়েছেন। ভাষা জটিল ও গতিহীন। তার একটি গল্পগ্রন্থের আলোচনায় তারই ধারার গল্পকার সাদ কামালী আক্ষেপ করে লিখেছেন- ‘মামুন হুসাইন সত্যি বলতে কি শক্তির অপচয় ঘটিয়েছেন। কারণ তার প্রত্যেকটি গল্পের ভাষা একই রকম।’ আমিও ব্যক্তিগতভাবে সমালোচকের এই মতামতকে সমর্থন করি। কারণ তার গল্পের ভাষার সঙ্গে তার প্রবন্ধের ভাষার, কিংবা এক গল্পের ভাষার সঙ্গে আরেক গল্পের ভাষার কোনও পার্থক্য দেখা যায় না। একেবারেই বৈচিত্র্যহীন, রস-কষহীন ভাষা। তাছাড়া সাম্প্রতিককালে লেখা তার গল্প পড়ে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তিনি কেন এই গল্প লিখলেন বা গল্পের মেসেজ কী? প্রয়াত শহীদুল জহির সম্পর্কেও একই মন্তব্য করা যায়। তার অকালপ্রয়াণ তাকে বিখ্যাত করেছে কিনা মাঝে মাঝে আমার মনে সে প্রশ্ন জাগে। তার গল্প পড়লে বোঝা যায় তিনিও গল্পের ভাষাকে অকারণে জটিল করে নিজের প্রাজ্ঞময়তা জাহির করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থেকেছেন। মনিরা কায়েস ও অদিতি ফাল্গুনির গল্পও একই ধারার। একটি বিষয় লক্ষণীয়, এই সমস্ত গল্পকার প্রায়শ তাদের গল্প সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের শাস্ত্রবিরোধী গল্প আলোচনার কথা বলেন। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, আত্মস্বাতন্ত্রিক গল্পের সন্ধান করতে আমাদের গল্পকাররা কি সত্যিই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন? আমরা সেই উত্তর দেবার আগে গল্পকাররা কী কী সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সেগুলো জানা দরকার। আমাদের গল্পের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কোনও প্রতিনিধিত্বশীল ঐতিহ্য নেই। আমাদের দেশের অধিকাংশ পত্র-পত্রিকার সম্পাদকরা এখন অবধি ছোটগল্পকে শিল্প বলতে নারাজ। গল্পের প্রকাশনা হয় কেবল মাত্র পাতা পূরণের জন্য। প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গের গল্পকারের পূর্ব-প্রকাশিত গল্প ছাপেন। আমাদের দেশে গল্প পত্রিকার যেমন অভাব, পাশাপাশি গল্পের উপর আলোচনাও কম হয়। এই দেশের গল্পকারদের কোন ধরনের মননধর্মিতা নেই বললেই চলে। ফলে সতীথদের্র গল্প সম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে ভয় পান। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, যেমন আবদুল মান্নান সৈয়দ। গল্পের ওপর তার নিবিড়তম আলোচনা আমাদের গল্পসাহিত্যের অগ্রগতির অন্যতম পাথেয়। এই সম্পর্কে আবদুল মান্নান সৈয়দ তার একটি গল্প বিষয়ক আলোচনায় ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন: ‘ছোটগল্পের লেখকেরা ছোটগল্প রচনা করেন গদ্যে, কিন্তু গদ্যে তারা সাধারণত ছোটগল্প সম্পর্কে কিংবা পূর্বজ, উত্তর বা সমসাময়িক গল্পকারদের সম্পর্কে কিছুই লেখেন না। দৈববলে সে রকম যদি ঘটে আর সেই রকম ঘটে একমাত্র ফরমাইসে, অন্তঃপ্রেরণায় নয়, তাহলে মননের অংশ থাকে শোচনীয়ভাবে সীমিত। [পঁচিশ বছরের ছোটগল্প, একটি আন্তঃজরিপ, নির্বাচিত প্রবন্ধ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, প্রথম প্রকাশ ১৯৭৬।] দুর্ভাগ্যবশত সেই প্রচেষ্টা আমাদের চোখে এখনও পর্যন্ত পড়ছে না। অথচ পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার পূর্বসরী গল্পকার কমলকুমার মজুমদার, জগদীশ গুপ্ত ও সতীনাথ ভাদুড়ীর সৃজিত গল্পের উপর আলোচনা করে ঋণ পরিশোধ করেছেন। আমাদের দেশের প্রবীণ গল্পকাররাও এ ব্যাপারে কোন রকম ভূমিকা পালন করছেন না। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, প্রবীণরা যখন এই দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম, তখন তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে। গল্পচর্চার সঙ্গে গল্পকারদের গল্প আলোচনাও জরুরী। আর এটাই তো স্বাভাবিক যে, পৃথিবীর যে কোন ভাষার সাহিত্যিক কোন রকম স্বয়ম্ভু প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। তাকে ক্রমশ ধারাবাহিকতার পথ বেয়ে আসতে হয়। আর মহৎ লেখকদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা একজন মহৎ লেখকই পাবেন। সেটাই হবে প্রয়াত লেখকদের যথোপযুক্ত সম্মান। গল্পের নতুনত্ব আবিষ্কার মূলত প্রতিভার উপর নির্ভরশীল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সে কাজ করেছেন। নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতার উপর আন্তরিক থাকলেই মানসম্পন্ন গল্প লেখা যেতে পারে। আমাদের দেশের অধিকাংশ গল্পকারের গল্পের বিষয়বস্তু অ্যাবস্ট্রাক্ট ধরনের হয়। এটা পরিত্যাগ করা প্রয়োজন। গল্পহীনতা অনেক গল্পকারের অক্ষমতার পরিচায়ক। পৃথিবীর সমস্ত ভাষার গল্পসাহিত্যের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য হলো গল্পের মধ্যে গল্প থাকা। পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রনাথ মিত্র আশ্চর্য সফলতার সঙ্গে গল্পচর্চা করেছেন। এই কারণে বুদ্ধদেব বসু একবার বলেছিলেন- এই গল্পকার গল্প নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন। মূলত ষাট দশক থেকে আমাদের গল্পসাহিত্যে গল্পহীনতার প্রবণতা শুরু হয়। আমি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে এই ধারার অন্যতম পুরোধা বলে মনে করি। দুর্ভাগ্যবশত আমি তার একটি গল্পও বুঝতে পারিনি। এই না পাবার ব্যর্থতাকে আমি আমার অক্ষমতা বলেও মনে করি না। কারণ প্রতীকী বুদ্ধিময়তায় আমার আস্থা কম। গল্পে আমি গল্প রাখার পক্ষপাতী। আমি আগেই বলেছি, ছোটগল্প বিকাশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঐতিহ্য থাকা দরকার। সেই কারণে গল্প প্রতিযোগিতা চালু করা জরুরী। এই রকম প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মতি নন্দী, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মত শক্তিশালী কথাসাহিত্যিকরা বেরিয়ে এসেছেন। এদের থেকে অধিকতর শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক আমাদের দেশে নেই- সেটা আমার বিশ্বাস হয় না। তরুণরা যদি অধিকতর পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার মনোভাব নিয়ে উন্মাতাল হন, তাহলে ছোটগল্পের মৃত্যু সম্ভব নয়। আর আমাদের মতে অনুন্নত দেশে দারিদ্র্যের প্রকোপ বেশি থাকলেও জীবন এখনও অবধি স্লোগানে পরিণত হয়নি। সেটাই তরুণদের জন্য সবচেয়ে আশাপ্রদ বিষয়। দেশের সমাজপরিবেশের প্রতি পরতে পরতে গল্পের ভান্ডার সংগুপ্ত রয়েছে। শুধু প্রয়োজন সৃজনশীল মানসিকতা নিয়ে সত্যের উপর চোখ ফেরানো। তাহলেই আমাদের ছোটগল্প আবার সজীব হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে শেষমেষ একথা বলা দরকার- আমাদের প্রবন্ধের শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশের ছোটগল্প : আত্মস্বাতন্ত্র্যের স্বরূপ’, সেই কারণে কয়েকটি রীতিনীতি আমাদের গল্পকারদের অনুসরণ করা দরকার। প্রথমত বিদেশী প্রভাব এড়িয়ে নিটোল ছোটগল্প সৃজনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কেবল গল্পহীন গল্পচর্চা করা ছোটগল্পকে ধ্বংস করার নামান্তর মাত্র। মনে রাখতে হবে বাংলাসাহিত্যে ছোটগল্পের বিশাল ঐতিহ্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত আপন সমাজবাস্তবতার দিকে আলোকপাত করা। আমাদের সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে জীবনাচরণ ও সাংস্কৃতিক ধারার অনুসারী গল্পের ভাষা, প্রেক্ষাপট, বিষয়বস্তু, প্রভৃতিতে তার ছাপ থাকা উচিত। সমাজবাদী সমালোচকরা আমাদের গল্পকারদের ওপর এ যাবৎ প্রভাব বিস্তার করে এসেছে। সেটা কতখানি উপকারী হয়েছে এই বিষয়ে ভাবনার অবকাশ আছে। তাই আমাদের উদীয়মান গল্পকারদের দেশমাতৃকার মানুষদের সন্ধানে নতুন করে অগ্রসর হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে গল্পকাররাও এক ধরনের সমাজসংস্কারক। সুতরাং তাদের ভাবনা-চিন্তা হতে হবে আমাদের সমাজকেন্দ্রিক, আমাদের মানুষকে নিয়ে, আমাদের মানুষের বিশ্বাস, জীবনচেতনা, সমস্যা ও সম্ভাবনাকে আবর্তন করে। তাহলেই কেবল আত্মস্বাতন্ত্রিক গল্পের সন্ধান মিলবে।
×