ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হাসনা হেনা

মজুদদারের ক্ষমা নেই

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

 মজুদদারের ক্ষমা নেই

বাঙালীর রসুইঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় এক পণ্যের নাম পেঁয়াজ। দুই মাস ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। গত মাসের চেয়ে এ মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজের ঝাঁজে স্বল্প আয়ের মানুষেগুলোর চোখ ঝাপসা। অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। সব জায়গায় আলোচনার বিষয় একটিই ‘পেঁয়াজ’। পেঁয়াজ চাষে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, দেশের চাহিদা মেটাতে তাই নির্ভর করতে হয় আমদানির ওপর। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে আকস্মিকভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর ভোগান্তি যেন শেষ হতে চাচ্ছে না। অতীতে প্রতিবছর এই সময়টায় পেঁয়াজের দাম বাড়লেও এতটা অস্বাভাবিক হতে দেখা যায়নি। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন করে। যা কিনা পেঁয়াজের মোট চাহিদার ৬০%। চাহিদার বাকি ৪০% অথবা ৭ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। আমদানির ৯৫% আসে ভারত থেকে। বাকি পেঁয়াজ আসে মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক থেকে। পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর এই অতি নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, পণ্যটি পচনশীল হওয়ায় কম সময়ের মধ্যে বাজারে আনার জন্য কাছের দেশ থেকে আমদানি করার অনেক সুবিধা, পরিবহন খরচও অনেকটা কম পড়ে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন কোনভাবেই পেঁয়াজের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়, চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ ছিল। কিছু অসৎ মুনাফালোভী গুদামে পেঁয়াজ মজুদ করে রাখায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। বেশি লাভের আশায় অনেক ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা বিভিন্ন জায়গায় ভাগারে শত শত মণ পচা পেঁয়াজ ফেলে দেয়ার ছবিই প্রমাণ করে মজুদদারের সংশ্লিষ্টতা। গুদামে পেঁয়াজ পচে গেলেও তারা বাজারে ছাড়েননি। ফলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। কোন বিষয় সত্যতা যাচাই না করে, গুজবে কান দেয়ার বাতিক রয়েছে আমাদের। যার কারণে বার বার অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি। তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম সঙ্কট। কিছুটা সঙ্কট কিছুটা গুজবে যখন দেশ ভাসে ঠিক সেই মোক্ষম সুযোগটা কাজে লাগিয়েই এদেশে চিরকাল একটি শ্রেণী রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি , মজুদদারি ও দূরদর্শী পরিকল্পনা না থাকা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার কঠোর নজরদারির অভাব এজন্য দায়ী। সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে তা অস্বীকার করার পথ নেই। পণ্য সঙ্কটে বরাবরই চরম খেসারত গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, টিসিবির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় খোলাবাজারে ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করেও লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন সংবাদ সূত্র থেকে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার ব্যবসায়ীর নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে যুক্ত। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এনে বাজারের ওপর সরকারের কড়া নজরদারি থাকা উচিত। ব্যবসায়ী, আড়তদার বা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে যারা অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়ে মানুষকে বিপাকে ফেলেছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে তদন্তের মাধ্যমে এদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। শ্রীপুর, গাজীপুর থেকে
×