ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল দামে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

ভাল দামে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর মোহনপুরের সুমিষ্ট পানের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এখানকার পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হয় বিদেশেও। রোগ- বালাইসহ নানা কারণে কয়েকবছর ধরে ক্রমেই কমছিল এ জেলায় পান চাষ। তবে অনুকূল আবহাওয়া ও বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় এবার পান চাষে ঝুঁকেছেন রাজশাহীর চাষীরা। পান নিয়ে চাষীরা আগাম স্বপ্নের জাল বুনছেন। রোগ বালাই পানের নিত্যসঙ্গী হওয়ায় অনেকে আগ্রহ হারিয়েছিলেন পান চাষে। অনেকে পানের বরজ ভেঙ্গে অন্য আবাদেও ঝুকেছিলেন। তবে লাভের মাত্রা বেশি হওয়ায় জেলার পান বরজ অধ্যুসিত মোহনপুর ও বাগমারা উপজেলায় দিনদিন চাষীদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে পান চাষে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় গতবছরই পানের আবাদ বেড়েছে ২ হাজার সাড়ে ৪শ’ বিঘা জমিতে। এ বছর আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামেই পানের বরজ দ্বিগুণ হচ্ছে। অন্যান্য আবাদের তুলনায় পানচাষে লাভ হওয়ায় চাষীরা ঝুঁকছেন সেদিকেই। এ বছর নতুন বরজ করেছেন মৌগাছি গ্রামের গাজিমুদ্দিন শেখ, আব্দুস সালাম, আলতাফ হোসেনের মতো প্রায় ২০ জন চাষী। তারা বলেন, প্রতিবছরই মোড়কে পানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পানের বরজও ভাঙ্গা-গড়া চলে প্রতিবছর। কিন্তু পান চাষীদের জন্য গবেষণা কেন্দ্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে বর্তমান বাজারে পানের দাম ভাল পাওয়ায় চাষীরা পানের বরজ তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে জেলায় ছয়টি উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৮শ’ ২১ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। এবার পান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৯শ’ ৫৪ মে.টন। বর্তমান বাজার মূল্যে যার গড়দাম প্রায় ১০০ কোটি টাকা। জেলায় প্রায় ২৫ হাজার সাড়ে ৫শ’ বিঘা জমিতে পানের বরজ আছে। আর এইসব বরজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন প্রায় এক লাখ চাষী। জেলার পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর উপজেলায় পান চাষ হয়ে থাকে। এসব উপজেলায় পান বিক্রির জন্য গড়ে উঠেছে হাট। জেলার বড় পান হাটগুলোর মধ্যে বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ, তাহেরপুর, মছমইল, একডালা, পবা উপজেলার তেকাঠাপাড়া, নওহাটা, দুর্গাপুর উপজেলার দাওকান্দি, কালিগঞ্জ, কানপাড়া, মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি, ধুরইল, একদিলতলা, কুঠিবাড়ি এবং ধোপাঘাটা। সরেজমিন মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি পান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বড়-ছোট আকৃতি অনুযায়ী প্রতি পোয়া (২০৪৮টি) পানের দাম ২ হাজার ৫শ’ টাকা। মৌগাছি গ্রামের মাহবুব আলম তোতা শেখ, সুনখেজুর গ্রামের সাইবত আলী এবং দুর্গাপুরের কানপাড়া দুর্গাদহ গ্রামের তমিজউদ্দিন বলেন, মড়ক না লাগলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণই অনেক বেশি। পানকে তারা সোনার পাতার সঙ্গে তুলনা করেন। ভাল পান হলে ১০ কাঠার বরজ থেকে বছরে তিন থেকে চার লাখ টাকা লাভ করা যায়। তারা আরও বলেন, পান বহন করা সহজ। তারা বলেন, মাঝে মাঝে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পানের বরজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তবে ফলাফল এখনও শূন্য রয়েছে। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃত পান চাষীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসন তা করেন না। পান ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার এবং মকবুল হোসেন বলেন, ভারত থেকে এলসি’র মাধ্যমে পান দেশে না আসলে দেশের বাজারে পানের দাম আরও বৃদ্ধি পেত। এলসি’র কারণে দেশের পান ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে। আবার এলসি’তে যে পান আসে সে পানগুলোর আকার বড় হলেও স্বাদহীন। জেলার পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, পান চাষীদের পান বরজ পরিষ্কারসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পানের রোগে কোন নির্ধারিত কীটনাশক না থাকায় এবং পান নিয়ে গবেষণার কোন সুযোগ না থাকায় মাঝে মাঝে পান চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক বলেন, পানে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বাজারে পানের ভাল দাম পাওয়ায় জেলায় পানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বরজ বৃদ্ধি পাচ্ছে মোহনপুর উপজেলায়। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘মড়ক ধরলে এবং পানের কোন ধরনের ব্যত্যয় হলে চাষীরা বিষ প্রয়োগ করছেন এবং সেই পান বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। কীটনাশক প্রয়োগ না করে স্বাভাবিকভাবে পান উৎপাদন সম্ভব কিনা সে বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন।
×