ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্দোর টেস্টে তিনদিনেই কুপোকাত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:১৬, ১৭ নভেম্বর ২০১৯

ইন্দোর টেস্টে তিনদিনেই কুপোকাত বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ ইন্দোর টেস্টে তিনদিনেই কাত হয়ে গেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিরুদ্ধে উড়ে গেছে। ইনিংস ও ১৩০ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে। ভারতের মাটিতে টেস্টে সবচেয়ে বড় হারটি হয়েছে। ভারত এক ইনিংসই খেলেছে। এর বেশি খেলেনি। দ্বিতীয়দিন যে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান করে দিন শেষ করে, তৃতীয়দিন সেখানে থেকেই ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলিয়েও ভারতের সমান রান করতে পারেনি। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অনেক কষ্টে ব্যাটসম্যানরা একের পর এক ‘নতুন জীবন’ পাওয়ার পর ২১৩ রান করতে পারে। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়েই নামতে হয়নি। আবার ভারত এক ইনিংসে যে স্কোর করে তা থেকে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৩০ রান কম করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে খানিক ভাল ব্যাটিং হয়। মুশফিক ৬৪ রান করায় তা সম্ভব হয়। কিন্তু সন্তুষ্টিজনক ব্যাটিং নয়। এমন হারের পর কী আর সন্তুষ্টি খোঁজার কোন উপায় আছে? দুই দলের মিলিয়ে তিন ইনিংস খেলা হয়েছে। ভারত এক ইনিংস ও বাংলাদেশ দুই ইনিংস ব্যাটিং করেছে। কিন্তু সময়ের হিসেবে আসলে প্রায় তিনদিনে শেষ হওয়া খেলার দেড়দিন খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। দেড়দিনে দুই ইনিংসই কাত বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংস প্রায় একদিনে শেষ হওয়ার পর ভারত প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে প্রায় চার ইনিংস খেলে। প্রথমদিনের শেষদিক এবং দ্বিতীয়দিন পুরোটা খেলে। তাতেই কাজ হয়ে যায়। বাংলাদেশের ১৫০ রানের জবাবে দ্বিতীয়দিন ৪৯৩ রান করে ভারত। রবীন্দ্র জাদেজা (৬০*) ও উমেশ যাদব (২৫*) তৃতীয়দিন খেলতে নামবেন, না ভারত ইনিংস ঘোষণা করে দেবে? এ নিয়ে জল্পনা ছিল। ভারত ইনিংস ঘোষণা করে দিল। বাংলাদেশও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামল। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম সেশনেই যখন ৪ উইকেট হারিয়ে বসে, তখনই বড় হারের সম্ভাবনা জেগে যায়। ইমরুল কায়েস, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুন দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন। দলের ৪৪ রানে ৪ উইকেটের পতনে বাংলাদেশের ইনিংসের মেরুদ- ভেঙ্গে যায়। মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটিংয়ে থাকেন। কিন্তু তারা কী ইনিংস হার এড়াতে পারবেন? সেই প্রশ্ন ওঠে। শেষ পর্যন্ত তারা পারেননি। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও মোহাম্মদ শামি, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মার গতি আর সুইং এবং রবীচন্দ্রন অশ্বিনের স্পিনে নাজেহাল হয় বাংলাদেশ। এবার শামি তো আরও বিধ্বংসী বোলিং করেন। ৪ উইকেট তুলে নেন। আর ৩ উইকেট নেয়া অশ্বিন স্পিন জাদুতে বস করেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে আর ১৫০ রানে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। তবে ২১৩ রানের বেশি করতেও পারেনি। এক মুশফিকুর রহীম (৬৪) ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। দুই ইনিংস মিলিয়ে মুশফিকই শুধু হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ, লিটন, মিরাজরা চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়। নিজেরাও বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। দলকেও এগিয়ে নিতে পারেননি। মাহমুদুল্লাহ তো ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবার পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে গিয়ে পুরাই ‘ফ্লপ’। টি২০তে যেমন ব্যর্থ, প্রথম টেস্টেও তাই। প্রথম ইনিংসে ১০ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি। ইমরুল, সাদমানের মতো দুই ইনিংসেই মাহমুদুল্লাহ ব্যর্থ হয়েছেন। লিটন কুমার দাস একই কাহিনী ঘটিয়েছেন। উইকেটে সেট হওয়ার পর যখন সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন তখনই আত্মঘাতী আউট হন। তাড়াহুড়ো করে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাই হলেন। এবার মুশফিককে সঙ্গ দিতে পারেননি মুমিনুল। ৭ রানেই আউট হয়েছেন। লিটন সেই কাজটি ভালভাবেই করতে থাকেন। মুশফিক ও লিটন যেভাবে এগিয়ে চলতে থাকেন, একটা সময় আশা জাগে। ইনিংস হার তাহলে এড়ানো যেতে পারে। দুইজন বড় ইনিংস আর বড় জুটি গড়লেই তো হয়ে যায়। ৩৪৩ রানে এগিয়ে থেকে ইনিংস ঘোষণা করা ভারত দলের ক্রিকেটাররাও কী অস্বস্তিতে ছিলেন না? ইনিংস ব্যবধানে হারানোর যে পরিকল্পনা ছিল তা মুশফিক ও লিটন মিলে ব্যাঘাত ঘটাতে থাকেন। দলের রানও ১৩৫-এ চলে যায়। ভারতের করা রান থেকে ২০৮ রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। মুশফিক ও লিটনের কাছ থেকে বড় দুটি ইনিংস মিললেই তো হয়ে যায়। কিন্তু লিটন কি করলেন, অশ্বিনের বলে এগিয়ে মারতে গিয়ে কট এ্যান্ড বোল্ড হয়ে গেলেন। নিজেই যেন আউট হওয়ার তাড়ায় ছিলেন। ৩৫ রানের বেশি তাই করতে পারেননি। মুশফিকের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৩ রানের বেশিও করা যায়নি। লিটন আউটের পর দল আরও বিপদে পড়ে। তাহলে কী শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসের মতো রানও করা যাবে না? এমনটাই বলাবলি শুরু হয়ে যায়। কারণ ব্যাটসম্যান হিসেবে যে মুশফিকের পরে থাকেন মিরাজ, তাইজুল, রাহী ও এবাদত। মুশফিককে নিয়ে ভরসা করা যায়। কিন্তু বাকিরা কী আর বড় কিছু করে দেখাতে পারবেন? মুশফিকের সঙ্গে এবার মিরাজ ব্যাট হাতে নেমে ভালই সঙ্গ দেন। সেই সঙ্গে ২০০ রানের কাছাকাছি চলে যায় বাংলাদেশ। দলের রান যখন ১৯৪-এ যায়, মুশফিক-মিরাজ সপ্তম উইকেটে ৫৯ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন, তখন মিরাজকে বোল্ড করে দেন যাদব। ৩৮ রান করে আউট হন মিরাজ। যেখানে ব্যাটসম্যানরা কিছুই করতে পারেননি। মোহাম্মদ মিঠুনকে সুযোগ করে দিয়েও (১৩ ও ১৮) কাজ হয়নি। সেখানে মিরাজ খানিক হাল ধরেন। শেষ পর্যন্ত বেশিদূর যাওয়া যায়নি। প্রথম সেশনে যে হাল হয়েছিল, দ্বিতীয় সেশনে তা থেকে মুক্তি মিলে। প্রথম সেশনে ৪ উইকেট হারিয়ে ৬০ রান করে বাংলাদেশ। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে দুটি জুটিতে ১৯১ রান হয়। ২টি উইকেটও হারায়। মিরাজ আউটের পর দ্বিতীয় সেশন শেষ হয়। তৃতীয় সেশনে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়। তাইজুল ৪৩ বল খেলে ৬ রান করেন। মুশফিককে দুর্দান্ত সমর্থন দেন। কিন্তু মুশফিক খুব বেশি রান এই সময়ে করতে পারেননি। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার সময় ৫৩ রান করেন মুশফিক। তৃতীয় সেশনের শুরুতে আর ১১ রান করে আউট হয়ে যান। দলের ২০৮ রানে তাইজুল আউটের পর একই রানে মুশফিককে আউট করে দেন অশ্বিন। ২১৩ রানে গিয়ে এবাদতকেও সাজঘরে পাঠান অশ্বিন। বাংলাদেশের ইনিংসেরও শেষ হয়। কোন রকমে ২০০ করার পর ২১৩ রানও করে বাংলাদেশ। তবে বড় হারই হয়। ইনিংস ও ১৩০ রানে হার। ভারতের বিরুদ্ধে এর আগে হায়দরাবাদে একটি টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই টেস্টে ২০৮ রানে হেরেছিল। এবার ভারতের মাটিতে সবচেয়ে বড় হারটি হয়।
×