ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম আবাহনীর ব্যর্থতার নেপথ্যে...

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২ নভেম্বর ২০১৯

 চট্টগ্রাম আবাহনীর  ব্যর্থতার নেপথ্যে...

জাহিদুল আলম জয়, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে ॥ ভাড়াটে সৈনিক দিয়ে আর কত। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবলে চট্টগ্রাম আবাহনী শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়ার পর চারিদিকে ফিসফাস। অনেকেই বলছেন, এই দলটির ফাইনালে ওঠাই তো অনেক বেশি। আয়োজকদের খেলা খুব একটা মন ভরাতে পারেনি দর্শকদের। যে কারণে ফাইনালের পরিণতি বুঝতে পেরে এমএ আজিজের গ্যালারি আচমকাই গর্জে উঠেছিল সাকিব সাকিব স্লোগানে। ঠিক কি কারণে গ্যালারিতে সাকিবকে নিয়ে গর্জন ম্যাচ চলাকালীন বোঝা যায়নি। তবে খেলা শেষে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাহনীর যখন হার নিশ্চিত হয়ে যায় তখন অনেকেই ক্ষুব্ধ সাকিব সাকিব বলে স্লোগান দেন। হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর গ্যালারির পশ্চিম অংশে আচমকাই স্লোগান ওঠে সাকিব সাকিব বলে। মূলত কয়েকদিন আগে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি মানতে পারেননি বন্দরনগরীর সাকিবভক্তরা। সাকিব চ্যাম্পিয়ন, সাকিব নিরপরাধ, সাকিব সেরা এমন স্লোগানে মুখরিত হতে থাকে চারপাশ। সাকিবের নিষেধাজ্ঞা যেমন মানতে পারছেন না ভক্তরা, তেমনি চট্টগ্রাম আবাহনীর শিরোপা জিততে না পারাতেও হতাশ তারা। খেলা শেষে একজন বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হোক। কিন্তু টেরেঙ্গানু আসলে ভাল খেলে জিতেছে’। একজন আবাহনীর মন্টেনিগ্রোর ফরোয়ার্ড লুক রটকোভিচকে তুলোধুনা করে বলেন, ‘লুকা তো কিছুই পারে না। ও বল নিয়ে শুধু ছোটাছুটি করে। নিম্নমানের বিদেশী খেলালে দলের এমন অবস্থায় হওয়ার কথা’। আসলে বাস্তবতা হচ্ছে, নিজের ঢাল তলোয়ার ঠিক ছিল না চট্টগ্রাম আবাহনীর। গত মৌসুমের দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কেই তারা এই আসরে খেলায়নি। অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড় তারা ধার করে এনেছে অন্য দল খেকে। স্বয়ং অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া ও কোচ মারুফুল হককে অন্য দল থেকে এনে দায়িত্ব দেয়া হয়। আচমকা এমন ভাড়াটে খেলোয়াড় দিয়ে সাফল্য পাওয়া কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার ওপর ফাইনালে জামাল ভুঁইয়া ছিলেন না পুরোপুরি ফিট। চোটের কারণে উঠে যেতে হয় ডিফেন্ডার রহমত মিয়া ও আইভরিকোস্টের চার্লস দিয়িয়েরকে। এ কারণেই চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ মারুফুল হক প্রতিপক্ষকে সাধুবাদ দিতে ভুল করেননি। তিনি বলেন, ‘যোগ্য দল হিসেবেই টেরেঙ্গানু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওদের অভিনন্দন’। আবাহনীর হারের অন্যতম কারণ দলের দুই কার্যকর পারফর্মারের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া। বিরতির আগে লেফটব্যাক রহমত মিয়া চোট পেয়ে উঠে যায়। বিরতির পরপরই একই কারণে হারাতে হয় মিডফিল্ডার দিদিয়েরকে। এ বিষয়ে আবাহনী কোচ বলেন, ‘সব ফুটবলারের বিকল্প আসলে হয় না। তাই আমরা এ দু’জনের অভাবটা পূরণ করতে পারিনি। তবে টেরেঙ্গানু যে ফুটবল খলেছে তাতে রহমত, দিদিয়েররা থাকলেও ফল ব্যতিক্রম কিছু হতো বলে মনে হয় না।’ মারুফুল বলেন, ‘দিদিয়েরের ইনজুরি ভুগিয়েছে। কারণ তাকে ভিত্তি করে আমাদের রক্ষণ ও আক্রমণভাগের সংযোগটা করা হয়। সে না থাকাতে পরিকল্পনা উল্টা-পাল্টা হয়ে যায়। রহমতের চোটে আমাদের বদলি অপশন কমে গিয়েছিল। ওটা না হলে আমি পরে আরও দু’জনকে আক্রমণভাগে নামাতে পারতাম। লুকার আরেকটু সেক্রিফাইস করা উচিত ছিল।’ পুরো আসরে এই লুকাই আবাহনীকে ভুগিয়েছে। মন্টেনিগ্রোর ফরোয়ার্ড ডি বক্সে শট নিতে এতটাই দেরি করেন যে, প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা তাকে সহজেই ঘিরে ধরেন। কিন্তু বিকল্প না থাকার কারণে তাকেই খেলাতে বাধ্য হয়েছেন মারুফুল। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মারুফুল বলেন, ‘লুকার বদলে কাকে খেলাব? ওর বিকল্প তো থাকতে হবে। আমার কাছে যা আছে তা নিয়েই খেলতে হবে।’ ফরোয়ার্ড লাইনে ঘাটতি মেটাতে চট্টলা আবাহনী দলে ভিড়িয়েছিল ২০১০ সালে ঘানার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা ফরোয়ার্ড প্রিন্স টাগোকে। কিন্তু দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকায় এই আফ্রিকানের ভুড়িটা এতটাই বেড়েছে যে, তাকে মাঠে নামানোর দুঃসাহস দেখাননি কোচ। প্রিন্সের শারীরিক গড়ন, চলাফেরা দেখে বরং মুচকি হেসেছেন সবাই। মূলত সব পজিশনে পর্যাপ্ত ভালমানের ফুটবলার না থাকা, সঠিক কম্বিনেশন না থাকা, অন্য ক্লাব থেকে এনে মাঠে নামিয়ে দেয়া এসব কারণেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
×