সাইবার জগতে নিরাপদ থাকতে...

নানাভাবেই এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে ইন্টারনেট। যার ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে প্রায় সময়ই আমাদের যুক্ত থাকতে হয় ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে। আর সেখানেই এখন সংরক্ষণ করে রাখতে হয় প্রচুর প্রয়োজনীয় তথ্য। এমনকি নিজের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্যকেও ক্লাউডে সংরক্ষণের মাধ্যমে চিরস্থায়ী করে রাখার সঙ্গে এখন অনেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং অফিশিয়াল নানা কাজেও ইন্টারনেটের ব্যবহার কম নয়। আবার নিজের ব্যাংকিং হিসাব বা অনলাইনে কেনাকাটাও এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। অনলাইনে নিরাপদ থাকার কয়েকটি কৌশল তুলে ধরা হলো। পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহারে সতর্কতা স্বাভাবিকভাবেই পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক তুলনামূলকভাবে খানিকটা কম নিরাপদ। ফলে পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য যতটা কম শেয়ার করা যায়, ততই ভাল। বিনামূল্যের এসব পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক অনেক সময়ই হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এসব নেটওয়ার্ক থেকে তথ্য হাতিয়ে নেয়াও তাদের জন্য একটু সহজ। তাই পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া পাবলিক বা শেয়ারড কম্পিউটার ব্যবহারের সময়ও যতটা সম্ভব সতর্ক থাকতে হবে। দ্বি-স্তরের নিরাপত্তা গ্রহণ করা বেশিরভাগ অনলাইন এ্যাকাউন্টের জন্যই সাধারণত দ্বি-স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে। তবে বিষয়টি একটু বেশি সময় নেয় বলে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে এটি গ্রহণ করেন না। বিশেষ করে মোবাইল থেকে কোন অনলাইন এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে চাইলে তার জন্য অবশ্যই এই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আর আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে কোন এ্যাকাউন্ট সংশ্লিষ্ট থাকলে সেক্ষেত্রে কোনভাবেই এই ধাপটি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। পাসওয়ার্ড শেয়ার না করা অনলাইন যে কোন এ্যাকাউন্টের জন্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর পাসওয়ার্ড। কোন এ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হারানো মানে হচ্ছে ওই এ্যাকাউন্টের উপর আপনার আর কোন অধিকার থাকবে না। তাই পাসওয়ার্ডকে সবসময় অন্যদের কাছ থেকে আড়ালে রাখতে হবে। আবার পাসওয়ার্ড মনে রাখার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই পাসওয়ার্ড লিখে রাখেন কোন স্থানে। এমনটি হলে এমন এক জায়গাতে পাসওয়ার্ড লিখে রাখবেন, যাতে অন্য কারও নজরে না পড়ে। ফিশিং এবং স্প্যামিংয়ে সতর্কতা কোন এ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিতে হ্যাকারদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো ফিশিং এবং স্প্যামিং। অনেক সময়ই অনলাইনে এমন কোন অফার পাবেন, যেটি আপনার সামনে নানা ধরনের লাভ ছড়িয়ে রাখবে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের অফার পাওয়া যায় না। তাই এ রকম কোন অফার সামনে এলে সেটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আসছে কি না, তা খেয়াল রাখুন। ইমেইল এ্যাকাউন্টেও প্রচুর আকর্ষণীয় অফারের ইমেইল আসে। এগুলো থেকেও সতর্ক থাকুন। অনেক সময় এ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে এমন তথ্য নিয়েও ইমেইল বা নোটিফিকেশন হাজির হয়। এসব ক্ষেত্রে ভাল করে খেয়াল রাখুন কোন ইমেইল বা সূত্র থেকে এটি হাজির হয়েছে। হ্যাকিংয়ের খবর দেখে আগেই আতঙ্কিত হয়ে এসব লিংকে ক্লিক করবেন না। তাতে হিতে-বিপরীত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। যে সূত্র থেকে ইমেইল বা লিংক হাজির হয়েছে সেটি এই লিংক পাঠানোর যথাযথ সূত্র কি না, সেটি যাচাই করে নিন। অনেক সময় বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য সূত্র হিসেবে সঠিক কর্তৃপক্ষের খুব কাছাকাছি কোন ঠিকানা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মোবাইলেও এ্যান্টিভাইরাস ও এ্যান্টিম্যালওয়্যার ডেস্কটপ পিসিতে অনেকেই এ্যান্টিভাইরাস এবং এ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকলেও মোবাইলে তা করেন না। এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। কারণে আপনার মোবাইলের মাধ্যমেও ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রমণ করতে পারে। আর তা থেকেও সমান ক্ষতি হওয়া সম্ভব। তাই ভাল কোন এ্যান্টিভাইরাসের পিসি সংস্করণের পাশাপাশি মোবাইল সংস্করণও ব্যবহার করতে শুরু করুন। এতে করে আপনার মোবাইল ডিভাইসও সুরক্ষিত থাকবে। ফলে যে কোন ডিভাইসেই আপনি থাকবেন যথাসম্ভব নিরাপদ। আলাদা পাসওয়ার্ড এবং নিয়মিত পাসওয়ার্ড বদল অনলাইনে একেকটি এ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ একই পাসওয়ার্ড অনেকগুলো এ্যাকাউন্টে ব্যবহার করলে তাতে করে একটি পাসওয়ার্ডই সবগুলো এ্যাকাউন্টের কর্তৃত্ব নিয়ে নিতে যথেষ্ট। তাই প্রতিটি এ্যাকাউন্টের জন্যই আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। তাছাড়া নিয়মিত প্রতিটি এ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলে দিন। এতে করে এ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। আর পাসওয়ার্ড তৈরিতে প্রচলিত নমুনাগুলো এড়িয়ে নিজের মতো করে অনন্য পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। ছোট ও বড় হাতের অক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যা এবং এ্যাকাউন্ট সমর্থন করলে বিশেষ বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করুন। তাতে পাসওয়ার্ড শক্তিশালী হবে এবং একে ভাঙা কঠিন হবে। কম তথ্য উন্মুক্ত রাখা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য কম পরিমাণে উš§ুক্ত রাখাই বাঞ্ছনীয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রাইভেসি সেটিংকেও যতটা সম্ভব শক্তিশালী ও গোপনীয় রাখা নিরাপত্তার জন্য ভাল হবে। কেননা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো থেকে উন্মুক্ত তথ্য নিয়ে কিন্তু হ্যাকাররা নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ককে সুরক্ষিত রাখুন আপনি হয়ত আপনার নিজের ঘরেই ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে থাকেন যার মাধ্যমে আপনার মোবাইল ডিভাইসগুলোও পরিচালনা করেন। কিন্তু এই নেটওয়ার্ককেও সুরক্ষিত রাখাটা জরুরী। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের এনক্রিপশনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই। বিশ্বস্ত সূত্র থেকে ডাউনলোড অনলাইনে সফটওয়্যারের বিপুল ভান্ডার থেকে অনেক সময়ই বিনামূল্যের সফটওয়্যার ডাউনলোডের সুযোগ পাওয়া যায়। এই সুযোগ ব্যবহার করেই অনেকে সফটওয়্যারের সঙ্গে ম্যালওয়্যার পাচার করে থাকে পিসিতে। তাই বিশ্বস্ত সূত্র ছাড়া সফটওয়্যার ডাউনলোড করা ঠিক নয়, তা যত ভাল সফটওয়্যারই হোক না কেন। সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা যে কোন ধরনের সফটওয়্যারকে সর্বদা আপডেট বা হালনাগাদ রাখার কোন বিকল্প নেই। কারণ সব সফটওয়্যারের সর্বশেষ সংস্করণগুলোই সাধারণত সব ধরনের ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে সক্ষম। তাই অপারেটিং সিস্টেম থেকে সব ব্যবহৃত সফটওয়্যারই হালনাগাদ রাখুন। বেশি ভাল ভাল নয় অনলাইনে অনেক সময় এমন সব আকর্ষণীয় অফার হাজির হয় যেগুলো অবিশ্বাস্য রকমের ভাল। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বেশি ভাল ভাল নয়। তাই এ ধরনের অফার পেলে তার সূত্র যাচাই করে নেয়াটা প্রথম কর্তব্য। এসব অফারের আড়ালেই মূলত লুকিয়ে থাকে নানা ধরনের অনলাইন গুপ্তচর। লিংক থেকে সাবধান সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের অনলাইন প্রতিযোগিতা এবং এ ধরনের প্রচুর লিংক হাজির হয়। এসব লিংকের আড়ালেও লুকিয়ে থাকতে পারে ফিশিং বা স্প্যামিং উপকরণ। তাই এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভাল। সবচেয়ে ভাল হয় আপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন যে কোন ধরনের লিংকে ক্লিক না করাই ভাল। আইটি ডেস্ক