ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘এই বাংলাদেশকে মনে রাখবে ভারত’

প্রকাশিত: ১২:১৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

‘এই বাংলাদেশকে মনে রাখবে ভারত’

ঁজাহিদুল আলম জয় ॥ ব্যর্থতার বেড়াজাল পেরিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে চলেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আগের তথাকথিত তারকারা যা পারেননি; বর্তমানের তরুণ তুর্কীরা তা করে দেখাচ্ছেন। ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’র অধীনে এককথায় অনবদ্য পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে চলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যার সর্বশেষ নমুনা মিলেছে মঙ্গলবার রাতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে স্বাগতিক ভারতকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছেন বেঙ্গল টাইগার্সরা। এশিয়ার অন্যতম সেরা ও বড় সল্টলেক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের তরুণদের কাছে পাত্তাই পাননি ভারতের ‘বুড়ো’ দল। প্রায় সত্তর হাজার দর্শকের সমর্থন পেয়েও অতিথিদের কাবু করতে পারেনি সুনীল ছেত্রীরা। বরং গুরপ্রিত, রাহুল, অনিরুদ্ধদের চোখ আর নাকের জল এক করে দিয়েছেন জামাল, ইব্রাহিম, সাদ, রানা, রহমতরা। পুরো ম্যাচে অন্তত ছয়টি গোলের সুযোগ হাতছাড়া না হলে বড় জয়ই পেতে পারতো বাংলার যুবারা। এরপরও সাদউদ্দিনের গোলে জয়ের পথেই ছিল লাল-সবুজবাহিনী। কিন্তু শেষক্ষণে এসে আদিল আহমেদ খান বাংলাদেশের জয়টা কেড়ে নেন। এরপরও বাংলাদেশ যেভাবে পুরো ম্যাচে সুনীল, আদিল, আশিকদের শাসন করেছে তাতে তারা আজীবন বাংলাদেশকে মনে রাখতে বাধ্য। ভারতীয় কোচ ইগর স্টিমাচ স্বয়ং বলেছেন, ম্যাচটি আমার সারাজীবন মনে থাকবে। একই সুরে কথা বলেছেন ভারতীয় অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীও। তাই তো শেষশেষ মাঠে জয় না আসলেও নৈতিক জয় ঠিকই পেয়েছে লাল-সবুজের দেশ। দুই মিনিটের জন্য জয় হাতছাড়া হলেও বাংলাদেশ দলকে বাহবা দিচ্ছেন শত্রু-মিত্র সবাই। সবচেয়ে বড় অর্জন এখানে, স্বয়ং ভারতীয়রাই বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়ে চলেছেন। তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, বাংলাদেশ ম্যাচটিতে অন্তত চার গোলে জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকতো না। তাদের মতে ভারত ড্র করেছে এটাই অনেক। এতেই খুশি তারা। অথচ ম্যাচের আগে ভারতীয়রা কতভাবেই না বাংলাদেশকে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছে। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সবধরনের চেষ্টাই করেছে। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তো ভারতীয় সাংবাদিকরা বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে’কে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেনÑ ‘এত দেশ থাকতে আপনি কেন বাংলাদেশের কোচ হলেন?’। প্রশ্নটির মধ্যে অবজ্ঞা ছিল এটা স্পষ্ট। নিপাট ভদ্রলোক জেমি বলেছিলেন, ‘এটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমার ইয়াং টিমের ভাল করার ক্ষমতা আছে।’ এই চ্যালেঞ্জে কিন্তু দুর্দান্তভাবে জিতেছেন জেমি। আর জবাবটাও দেয়া হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ কোচই বরং পাত্তা দিচ্ছেন না ভারতীয়দের। তার মতে ম্যাচে ভারত তেমন বলার মতো আক্রমণই শানাতে পারেনি। সল্টলেকের সত্তর হাজার দর্শকের মাঝে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কিছু সমর্থকও ছিল। কিন্তু সাদউদ্দিনের গোলের পর উত্তাল জনসমুদ্র রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন গ্যালারি লাল-সবুজের পতাকাসহ বাংলাদেশ বাংলাদেশ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়। কলকাতার এক সমর্থক তো বলেই দিয়েছেন, ‘আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম বাংলাদেশ জিতে গেছে। ওরা অসাধারণ খেলেছে। আমরা যে শেষ মুহূর্তে গোল করে ড্র করতে পেরেছি এতেই খুশি।’ ভারতের মাঠে এখন পর্যন্ত জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেই আক্ষেপ প্রায় ঘুচেই গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য জেতা ম্যাচ ড্র করতে হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশকে প্রশংসায় না ভাসিয়ে পারেননি ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচ, ‘বাংলাদেশকে অভিনন্দন। তারা দুর্দান্ত পুটবল খেলেছে। খুবই রোমাঞ্চকর ম্যাচ ছিল। এটাই ফুটবলের সৌন্দর্য। আমি অতীতে ম্যাচে মাঠে ছিলাম। এই ম্যাচটা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ ২০১৪ সালে ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ দলের এই কোচও স্বীকার করেছেন, দুর্ভাগ্যের কারণে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে ম্যাচ শেষে বলেন, ‘যদি আপনারা ম্যাচটি দেখে থাকেন, ভারত আমাদের জালে কিন্তু একটা শটও নিতে পারেনি। তারা গোললাইন থেকে একটা সেভও করেছে। আমরা ভাল কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেছিলাম। এই ম্যাচটা দেখিয়েছে আমরা একটা দল হিসেবে কতদূর এসেছি। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার মনটা ভীষণ খারাপ। ভারতের মাটিতে প্রথম জয় পেতে পেতে হয়নি। তাই তো আপসোসের সুরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার মন খারাপ। খুব কষ্ট পেয়েছি। জয়ের এত কাছে গিয়েও ফিরে আসাটা হতাশার। তবে আমরা ভারতকে বুঝিয়ে দিয়েছি আমাদের মান। ঢাকায় ফিরতি লেগে আশা করছি ওদের হারাতে পারব।’
×