ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঘোষণা ছাড়া নর্দার্ন জুটের পরিচালকের শেয়ার বিক্রি

প্রকাশিত: ০৯:৩৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঘোষণা ছাড়া নর্দার্ন জুটের পরিচালকের শেয়ার বিক্রি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেশি দামে গোপনে মোটা অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নর্দার্ন জুটের উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা। এমন অনিয়ম করলেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। তবে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করা প্রধান অর্থকর্মকর্তা (সিএফও) আবদুল মতিন পাটোয়ারী বলেছেন, যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক তাদের শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ করতে হয়। তবে গত প্রায় দুই বছরের মধ্যে নর্দার্ন জুটের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি-সংক্রান্ত কোন তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। সর্বশেষ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর। ওইদিন ডিএসইর মাধ্যমে নর্দার্ন জুটের উদ্যোক্তা এ আহমেদ ইউসুফ ছয় হাজার ৩৮৭টি শেয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিক্রি করার ঘোষণা দেন। এরপর কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছ থেকে শেয়ার বিক্রির আর কোন ঘোষণা না এলেও গত পাঁচ মাসে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কমে গেছে। অর্থাৎ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, দুই কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন জুটের শেয়ার সংখ্যা ২১ লাখ ৪২ হাজার। চলতি বছরের ৩১ জুলাই শেষে এই শেয়ারের মধ্যে ১৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। তবে চলতি বছরের মার্চের তথ্যের ভিত্তিতে ডিএসই জানিয়েছিল, মার্চ শেষে নর্দার্ন জুটের মোট শেয়ারের ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে আছে। ২০১৮ সালের ৩০ জুন শেষেও কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ একই ছিল। এ হিসাবে চলতি বছরের এপ্রিল-জুলাই এই চার মাসে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ দশমিক ১৮ শতাংশ কমে গেছে। তবে এ সময়ের মধ্যে শেয়ার বিক্রির কোন ঘোষণা দেননি কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মতিন পাটোয়ারী বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করতে হলে অবশ্যই স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ঘোষণা দিতে হবে। আর ঘোষণা দিলে তা অবশ্যই ডিএসইর নিউজ আর্কাইভে থাকবে। তিনি বলেন, কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের ঘোষণা না দিয়ে শেয়ার বিক্রির তথ্য আমরা পেয়েছি। তবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না কোন কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ঘোষণা না দিয়েই শেয়ার বিক্রি করেছেন। তবে এটুকু বলতে পারি- যারা ঘোষণা না দিয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, লোকসানের কবলে পড়ে সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ দিতে না পারলেও ২০১৮-২০১৯ হিসাব বছরের ব্যবসায় নর্দার্ন জুট চমক দেখিয়েছে। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা দেখায় ১৮ টাকা ১২ পয়সা। অথচ আগের বছরের একই সময়ে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ১০ টাকা ৩৮ পয়সা। মুনাফায় এমন চমক দেখানোয় হু হু করে বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার দাম। গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৩২৫ টাকা। যা টানা বেড়ে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ১৪৬০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ১৩১১ টাকা। এরপর শেয়ারের দাম কিছুটা কমতে থাকে। এক পর্যায়ে ২৩ জুলাই শেয়ার দাম কমে ৯১৭ টাকায় চলে আসে। তবে সম্প্রতি কোম্পানিটির শেয়ার দাম আবার বেড়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম ১২৬৮ টাকায় ওঠে। তবে এরপর দাম কিছুটা কমে মঙ্গলবার দাঁড়িয়েছে ১১২৯ টাকায়। এদিকে শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম হলেও গত ছয় মাসে কোম্পানিটির বিষয়ে সতর্কতামূলক কোন তথ্য প্রকাশ করেনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে চলতি বছরের ২৪ মার্চ কোম্পানিটির বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে ডিএসই। ওইসময় কোম্পানির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিএসই জানায়, নর্দার্ন জুটের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ছে। এর জন্য কোম্পানিটির অপ্রকাশিত কোন মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
×