ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গুদামে জমাট বাঁধা সার কিনছেন না কৃষক

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

গুদামে জমাট বাঁধা সার কিনছেন না কৃষক

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ সান্তাহার বিসিআইসির বাফার গুদামে অব্যবস্থাপনা, মজুদ ও বিতরণে অনিয়মের ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে প্রায় ২০ হাজার টন ইউরিয়া সার জমাট বেঁধেছে। এই সার কিনছে না কৃষক। তাই ডিলাররাও গ্রহণ করছে না এই জমাট বাঁধা সার। জানা গেছে, একসময় সান্তাহার বিসিআইসি বাফার গুদামটি দেশের উত্তরাঞ্চলে সার সরবরাহের ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় সার মজুদের নতুন-নতুন গুদাম গড়ে উঠেছে তাই এটি আর ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করার দরকার হয় না। তবে আপদকালীন মজুদ রাখা হয় এই গুদামে। নওগাঁর জেলার ৮টি উপজেলায় নিবন্ধিত ৯৩ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয় সান্তাহার বাফার গুদাম থেকে। তবে চলতি মাস থেকে নওগাঁর ১১টি উপজেলায় এই সার সরবরাহের কথা রয়েছে। সার ডিলাররা অভিযোগ করে বলেন, সান্তাহার গুদামটিতে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনায় ইউরিয়া মজুদ রাখায় শিলাখ-ে পরিণত হয়েছে অধিকাংশ সার। গুদামের বাইরে বিপুল পরিমাণ সার খামাল দিয়ে রাখায় সারগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। সেই সারগুলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে ডিলারদের কাছে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। নওগাঁ জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম জানান, পুরনো জমাট বাঁধা ইউরিয়া বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ডিলাররা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার নওগাঁ জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তারা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গুদামের মজুদ পরিস্থিতি জানতে তদন্তে নামে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেয়া হয়। তদন্ত টিম গুদাম পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত টিমের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সান্তাহার বাফার গুদামে কাফকো থেকে ৭২৪.৬১, শাহজালাল থেকে ৭৪৮.১৬ ও আমদানিকৃত ৩০ হাজার ২২০.৬৪ টন সার মজুদ আছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৯৪৫.০৫ টন সার ১৮ খামালে গুদামের বাইরে খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছে। যার পুরোটাই জমাট বেঁধে শীলাখ-ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া একই অবস্থা গুদামের ভেতরে রাখা প্রায় ৮ হাজার টন ইউরিয়া সারের। তদন্ত টিমের প্রধান ও নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, গুদামে পরিদর্শনে গেলে সারের খামালগুলো সাজানো গোছানো পাওয়া যায়নি। গুদামের বাইরের খামালে রাখা সার রোদ বৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক। এছাড়া দীর্ঘদিন গুদামজাত থাকায় ইউরিয়াগুলো ক্রমেই গুণাগুণ হারাচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, সান্তাহার গুদামে ৯ হাজার ৯০০ টন পুরনো সার মজুদ আছে। সেগুলোর একটি সুরাহা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরসমূহে জানানো হয়েছে। শীঘ্রই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সান্তাহার বাফার গুদাম ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, জমাট বাঁধলেও পুরনো সারগুলো নষ্ট হয়নি। গুণাগুণ ঠিক আছে। তাই সারগুলো রিপ্যাকিং করা হয়েছে। নিয়মানুসারে সারগুলো ডিলারদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে।
×