ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেশি পেসার খেলাতে চান ল্যাঙ্গাভেল্ট, তবে...

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বেশি পেসার খেলাতে চান ল্যাঙ্গাভেল্ট, তবে...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আর মাত্র চারদিন পরেই সাদা পোশাকে রঙ্গিন বলের ক্রিকেট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে একমাত্র টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। ৬ মাস পর আবার টেস্ট মেজাজে ফিরছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে দেশের মাটিতে এটি হবে দীর্ঘ ৯ মাস পর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত বছরের শেষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ দলে উপেক্ষিতই ছিলেন পেসাররা। প্রথম টেস্টে একজন পেসার খেলালেও দ্বিতীয় টেস্টে কোন পেসারই ছিলেন না একাদশে। তবে দুই টেস্টেই জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কন্ডিশন স্পিন সহায়ক হওয়ার কারণেই স্পিননির্ভর একাদশ গড়া হয়। এবারও বাংলাদেশের লক্ষ্য আফগানদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ একজন পেসার খেলানো। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান পেস বোলিং কোচের চাওয়াটা অধিক পেসার খেলানো। কারণ যে কয়েকদিন কাজ করেছেন তাতে বাংলাদেশী পেসারদের ওপর আস্থা বেড়েছে তার। কিন্তু একই সঙ্গে কন্ডিশন অনুসারে অধিনায়কের চাওয়াটাকেই মেনে নিতে চান ল্যাঙ্গাভেল্ট। আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে বাংলাদেশ দলে কয়জন পেসার খেলবেন? এই প্রশ্নটা বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে কোন পেসারকেই খেলায়নি বাংলাদেশ দল। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলেও চার স্পিনার নিয়ে গড়া একাদশ দারুণ এক জয় এনে দিয়েছিল মাত্র তিনদিনেই। যদিও প্রথম টেস্টে সেই সিরিজে চট্টগ্রামে মুস্তাফিজুর রহমান একমাত্র পেসার হিসেবে খেলেছিলেন। কিন্তু তিনি তেমন কোন কাজেই আসেননি। যা কাজ তা স্পিনাররাই করেছেন। এ জন্য এবার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টিম মিটিংয়ে কোচদের জানিয়েছেন, তিনি সর্বোচ্চ একজন পেসারকেই খেলাতে চান আফগানদের বিপক্ষে। এ বিষয়ে পেস বোলিং কোচ ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘আপনি জানেন আমি একজন ফাস্ট বোলার এবং আমি দলে সবসময়ই বেশি পেসার চাই। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কন্ডিশন বুঝতে হবে এবং কন্ডিশন অনুসারেই আপনাকে খেলতে হবে।’ আর সেক্ষেত্রে তিনি অধিনায়ক সাকিবের ইচ্ছার ওপরেই ছেড়ে দিচ্ছেন সিদ্ধান্তের ভার। ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি এ কন্ডিশনে সিমারদের বোলিং করা কঠিন জেনেও খেলাতে। আমাদের পেসাররা এখানে বোলিং করতে গিয়ে সংগ্রাম করে। সর্বশেষবার যখন এখানে আমরা এসেছিলাম তখনই সেটাই দেখেছি। এটা পুরোপুরি অধিনায়কের ওপর নির্ভর করবে। যদি অধিনায়ক মনে করে একজন পেসার খেলাতে চায় তাহলে আমার কাজ তাকে প্রস্তুত করা। যদি সেটা ঘটেই তবে নিশ্চিত করতে হবে তারা খেলতে প্রস্তুত আছে।’ দায়িত্ব নেয়ার পর বেশ কয়েকদিন টানা পেসারদের নিয়ে কাজ করেছেন ল্যাঙ্গাভেল্ট। আর এ কয়েকদিনে নিজে যেটা চেয়েছেন সেভাবে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট ছিলেন পেসারদের। এ বিষয়ে ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তো প্রস্তুতি ভালই। গত কয়েকদিন ছিল সন্তোষজনক। বিশেষ করে দুইদিনের এই ম্যাচে যা দেখেছি এমনটাই অনুভূতি আমার। প্রথমদিন আমি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম, কারণ আমার মনে হয় ছেলেরা আমি যেভাবে কাজ করতে চাই সেটা ধরতে পারেনি। কিন্তু এখন তারা সেটা বুঝতে পেরেছে।’ সেই কাজের ধরনটা কি ছিল ল্যাঙ্গাভেল্টের? তিনি বাংলাদেশে আসার পরই জানিয়েছিলেন পেসারদের লাইন-লেন্থ নিয়ে মূলত মনোযোগী থাকবেন তিনি। ৭ দিনের মতো এই পেসারদের নিয়ে কাজ করার পর ল্যাঙ্গাভেল্ট বললেন, ‘আমি ধারাবাহিকতার ওপর বেশি মনোযোগী। কিছু ছেলে বল হাতে অনেক বেশি ধারাবাহিকতা রাখতে সচেষ্ট। তারা সেই দক্ষতা অর্জন করেছে, কিন্তু তারা সবাই উইকেট নিতে চায়। এটা টেস্ট ক্রিকেট নয়। টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই ধারাবাহিক হতে হবে। আর এটা স্পিনার এবং পেসার সবার জন্যই কার্যকর। ভাল লেন্থে ধারাবাহিকভাবে বোলিং করাটাই টেস্ট ক্রিকেট। ফিল্যান্ডারের মতো ভাল বোলার খুব দ্রুতগতির নয়, কিন্তু সে তার লেন্থে খুবই ধারাবাহিক। বিশ্বের যে কোন বোলারের চেয়ে তার বল বেশি খেলতে হয় ব্যাটসম্যানদের। আমার কাছে এটা খুবই আনন্দের যে তারা খুব দ্রুত শিখছে। প্রথমদিন আমি দেখলাম তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে উইকেট নেয়ার মতো বল করতে, প্রতিবল থেকেই উইকেট নেয়ার চেষ্টা দেখেছি। কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে একই ধারায় টানা ১২ বল করতে পারা। তাহলেই আমরা চাপ প্রয়োগ করতে পারব, ১২টি ডট বল স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উইকেট এনে দেবে। কিন্তু এই কন্ডিশনে কাজটি পেসারদের জন্য খুবই কঠিন। আমি খুবই আনন্দিত যে তারা সত্যিই খুব ভাল বোলিং করেছে। তারা এক ওভারে খুবই কম অফস্টাম্পের বাইরে বল করেছে, সেটাই আমার চাওয়া। যত বেশি খেলা হবে, ততই ভাল হয়ে উঠবে সবকিছু। আমি এটাই বলেছি তাদের। ভুল থেকে তাদের শিক্ষা নিতে হবে। আমার কাছে এটাই চাবিকাঠি মনে হয়।’ টেস্ট দলে আছেন তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন চৌধুরী ও আবু জায়েদ রাহী। এ তিনজনের বিষয়ে ল্যাঙ্গাভেল্ট বলেন, ‘তারা তিনজনের সবাই আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাদের দক্ষতা ও ধারাবাহিকতা খুবই ভাল ছিল। লেন্থের জন্য তাদের আরও সময় ব্যয় করতে হবে যেন তারা একদিনে তিন স্পেলে লম্বা সময় বোলিং করে যেতে পারে। যদি অধিনায়ক অনুভব করেন যে কয়েকজন সিমার খেলাবেন সেটা পুরোপুরি সাকিবের ব্যাপার। কোন বোলারই অস্বস্তিবোধ করছে না, তারা চমৎকার। তারা যদি জিজ্ঞাসা না করে শিখতে পারবে না। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে বেশ ভাল। আমি আসলে এই ম্যাচের (দু’দিনের অনুশীলন ম্যাচ) আগেই তাকে (তাসকিন) নিয়ে বেশ উদ্বুদ্ধ ছিলাম। লম্বা ইনজুরি সমস্যা থেকে সে ফিরেছে। প্রথমদিকে ভাল বোলিং করেছে, কিন্তু দ্বিতীয় নতুন বলে তাকে কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়েছে। এটা হয়তো বেশি ক্রিকেট খেলতে না পারার কারণে।’ আর মুস্তাফিজকে টেস্ট দলে না নেয়ার বিষয়টি নিয়েও ল্যাঙ্গাভেল্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের প্রচুর সাদা বলের ক্রিকেট আছে তাই পূর্ব সতর্কতা হিসেবে তাকে বাদ রাখা হয়েছে। টি২০ বিশ্বকাপ এগিয়ে আসছে। তারদিকে আমাদের অবশ্যই যতœবান হতে হবে, কারণ সে টি২০ ও ৫০ ওভারের ম্যাচে আমাদের সেরা বোলার। কিন্তু আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে আপনার বিকল্প আছে। তার ইনজুরি হলে অবশ্যই বিকল্প একজন প্রয়োজন। এটা টেস্ট খেলা এবং এই সামান্য চোট তাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ আছে, তাই একটি টেস্ট খেলার চেয়ে তাকে আরও বেশি ম্যাচের জন্য পেতে চেয়েছেন তারা (নির্বাচকরা)।’
×