ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারীদের স্বাবলম্বী করছেন ‘কল্পনা’

প্রকাশিত: ১২:৩১, ৩০ আগস্ট ২০১৯

নারীদের স্বাবলম্বী করছেন ‘কল্পনা’

গ্রামীণ কুংস্কার ও প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে নারীদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের এক উদ্যোক্তা নারী সাহারা খাতুন কল্পনা। কঠোর পরিশ্রম ও তীব্র ইচ্ছাশক্তি দ্বারা তিনি ঘোষপালাসহ আশপাশের গ্রামের অনেক নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। এতে প্রশিক্ষিত নারীরা নিজ বাড়িতে সেলাই কাজ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে পরিবারের অর্থের চাহিদা মেটাচ্ছেন। জানা গেছে, সংসার জীবনে কল্পনার স্বামী শফিকুল ইসলামসহ মাহিন, শাহিন ও তাবিদ নামে রয়েছে তিন পুত্র সন্তান। তিনি সেলাই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোট গল্প রচনা করেন। তাঁর লিখা কবিতা ও গল্পের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ পেয়েছে। সাহারা নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাঁর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গ্রামের অনেক হতদরিদ্রদের পরিবারের নারীরা প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই কাজ করে পরিবারে ফিরিয়ে এনেছে সচ্ছলতা। গ্রামের সবাই তাকে নিয়ে এখন গর্ব করেন। তিনি গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারীদের অনুপ্রেরণা। সেলাই প্রশিক্ষণের বিষয়ে সাহারা খাতুন কল্পনা বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে তিনি নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণ নিতে আসা নারীরা তাঁকে ‘কল্পনা আপা’ বলেই জানে। প্রথমে একটি মেশিন ক্রয় করে নিজে এ কাজ শিখেছেন। পরে বাড়ির পাশের দুই নারীকে শিখানোর পর আস্তে আস্তে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে সেলাই প্রশিক্ষণের খবর। এরপর থেকে তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন। কল্পনা জানান, বর্তমানে তাঁর কাছে ৩০ জন নারী সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। এই কাজ জানা থাকলে স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রীরাও সংসারে উপার্জন করতে পারে। যাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সরকারী ব্যাংকগুলো যদি তাদেরকে ঋণ দিত তাহলে আরও বেশি নারী সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করতে পারত। প্রশিক্ষক কল্পনা বলেন, এখান থেকে সেলাই কাজ শিখে অনেকেই সেলাই কাজ করছেন। সেলাই কাজ করে তাঁরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনায় স্থানীয় লোকজন সহযোগিতা করছেন বলেও জানান তিনি। ঘোষপালা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান তানজিলা আক্তার। সে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি পরিবারের অভাব ঘোচাতে সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সপ্তাহে ৫ দিন সে সেলাই কাজ শিখছে। সেলাই কাজ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছে মানসুরা আক্তার। মানসুরা আক্তারের মতো সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন মারুফাও। সে সরকারী শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজে পড়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সেলাইয়ের। মারুফা আক্তার বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল। তাই সেলাই কাজ করা জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। বর্তমান সময়ে পড়ালেখার খরচ বেশি। অভাবের মধ্যে মা-বাবার কাছে টাকা চাইতে খারাপ লাগে। সেলাই কাজ শিখে নিজের পরিধেয় জামা কাপড় সেলাইয়ের পাশাপাশি উপার্জন করে পড়ালেখার খরচ যোগাতে পারব। মানসুরা ও মারুফার মতো পড়ালেখা না করলেও সেলাই কাজ শিখছেন রেহেনা। সে চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ঘোষপালা গ্রামের তোতা মিয়ার কন্যা। পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার পর বাড়িতে অলস সময় কাটে তার। নিজের ও পরিবারের জন্য কোন কিছুর প্রয়োজন হলে তাকিয়ে থাকতে হয় পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যদের দিকে। তাই স্বউদ্যোগী হয়ে কল্পনা আপার কাছে সেলাই কাজ শিখছেন। সংগ্রামী এই নারী প্রসঙ্গে স্থানীয় ইইপি সদস্য বাবুল মিয়া বলেন, আসলে নারীদেরও উদ্যম আছে। সুযোগ আর সহযোগিতা পেলে তারাও কিছু করে দেখাতে পারে কল্পনা আক্তার তাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ প্রসঙ্গে চন্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান এমদাদুল হক ভূইয়া বলেন, আমার এলাকার ওই নারী নিজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে এখন অন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করছে। কল্পনার কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অনেকেই অভাব ঘোচানোর পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করছে।
×