ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দিন বদলের গান গাইছে যারা

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ২৭ আগস্ট ২০১৯

 দিন বদলের গান গাইছে যারা

ওরা কিছু দুঃসাহসী তরুণ, অদম্য প্রাণশক্তি নিয়ে বদলে দিতে চাইছে আমাদের পরিচিত পৃথিবী। সবারই বয়স তিরিশের নিচে, এ বয়সেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্য ছুঁয়ে তারা এখন প্রস্তুত আরও বড় লড়াইয়ের জন্য। তাদের এই লড়াই কতটা বদলে দেবে আমাদের জীবন সে উত্তর থাকুক সময়ের হাতে, আপাতত আমরা জেনে নেই এমন কিছু তরুণের গল্প। ধারাবাহিকের দশম পর্ব, লিখেছেন- পপি দেবী থাপা ডারিয়া রেবেনক সহ-প্রতিষ্ঠাতা গ্রাবার রাশিয়ায় বেড়ে ওঠা ডারিয়া রেবেনক ভ্রমণ করতে ভালবাসেন। আর ভ্রমণ শেষে দেশে ফেরার পথে তাকে প্রায়ই আত্মীয়স্বজনের জন্য উপহারের বিশাল বোঝা বহন করতে হতো। তাদের উপহারের দাবির মধ্যে যেমন থাকত এ্যাপেল গেজেট, ভিক্টরিয়া সিক্রেটস্ ব্রা-এর মতো প্রচলিত পণ্য তেমনি থাকত এমন কিছু অপ্রচলিত পণ্য যা অন-লাইনেও পাওয়া যায় না। এই অভিজ্ঞতা থেকে ডারিয়া এবং তার স্বামী আর্টেম ফেদইয়েভ ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রাবার, যা সমন্বয় করবে গিগ ইকোনমি ও বিশ্ব বাণিজ্যের। বিষয়টি অনেকটা এ রকম, ধরুন এ মুহূর্তে কোন রাশিয়ানের তীব্র আকাক্সক্ষা আমেরিকান বিবিকিউ সসের। মস্কোনিবাসী ওই ব্যক্তি গ্রাবারের মাধ্যমে আমেরিকায় এমন কাউকে খুঁজে নেবেন যিনি রাশিয়ার উদ্দেশে উড়াল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসার পথে তিনি নিয়ে আসবেন এক বোতল বিবিকিউ সস্। এমন প্রতিটি আইটেমের জন্য সেই আমেরিকান পাবেন পণ্যের মূল্যের বাইরে ন্যূনতম দশ ডলার। এতে দুইপক্ষই লাভবান হওয়ায় গ্রাবারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ফাউন্ডেশন ক্যাপিটালের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাবারে বিনিয়োগ করেছে চৌদ্দ মিলিয়ন ডলার। আর ডারিয়ার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন নয় লাখেরও বেশি ভ্রমণকারী ও বিভিন্ন ধরনের পণ্য সরবরাহকারী। রং পেন্সিল থেকে শুরু করে নিক্কন ক্যামেরা এমন দু’শটিরও বেশি আইটেম ডারিয়া ডেলিভারি দিচ্ছেন সারা বিশ্বে। গ্রাবার প্রতিষ্ঠা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা আরও বিস্তৃত করে বলতে গিয়ে ডারিয়া বলেনÑ কেবল স্বজনদের উপহারের দাবি মেটানো বা বড় ল্যাগেজ বওয়ার ঝুঁকি এড়াতে আমার গ্রাবার প্রতিষ্ঠা এমন নয়। আমি এখন পর্যন্ত সত্তরটির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছি। সান ফ্রান্সসিসকো পৌঁছে আমার মনে হয়েছে পেছনে ফেলে আসা স্প্যানিশ খাবারের কথা, যা সেখানে পাওয়া সম্ভব নয়। আমার মাথায় গ্রাবারের আইডিয়া আসার সেটাও একটা কারণ। মূলত ভ্রমণের প্রতি ভালবাসা আর বিভিন্ন দেশে অর্জিত অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। এখানে ভালবাসা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলারও একটি প্রয়াস আছে। অনেক রকম ব্যবহারকারী থাকা সত্ত্বেও ডারিযার পছন্দ সেই সব স্বাপ্নিক মানুষদের যারা অপ্রচলিত পণ্য কিনতে চায়। আবার ভ্রমণকারীরাও কেবল লাভের আশায় পণ্য বয়ে নিয়ে যাবেন এমন নয়, অনেকটা অপরিচিত কারও ইচ্ছা পূরণ ও ভিন দেশে নতুন সম্পর্ক তৈরির সুযোগ হিসেবেও বিষয়টিকেও তারা কাজে লাগাবেন। রাশিয়ার ক্ষেত্রে আর একটি বিষয় ডারিয়া মাথায় রেখেছেন যে, সেখানে একজন ক্রেতা অর্থ থাকলেই তাদের চাহিদামাফিক পণ্য কিনতে পারেন না। আমাজন বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারির সময়ও খরচ অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে গ্রাবারের মাধ্যমে ক্রেতা যেমন অল্প সময়ে, কম খরচে কাক্সিক্ষত পণ্য হাতে পচ্ছেন তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন সম্পর্ক। এটাই গ্রাবারের সাফল্যের মূল কারণ।
×