ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বড় কর্তার দুর্ব্যবহারে কাজের ক্ষতি!

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ২৩ আগস্ট ২০১৯

বড় কর্তার দুর্ব্যবহারে কাজের ক্ষতি!

আমাদের দেশসহ সব অফিসেই একটি পরিচিত সমস্যা হচ্ছে অফিস রাজনীতি। সুপারভাইজারদের মধ্যে যারা তাদের অধস্তন কর্মচারীদের প্রতি দুর্ব্যবহার বা গালিগালাজ করে তাদের এমন আচরণের কারণে প্রকৃতপক্ষে গোটা কর্মী দল সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এতে উৎপাদনের ক্ষতি হয়। নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টান ফারহ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে এক সমীক্ষা চালান। তাতে দেখা যায় যে একজন সুপারভাইজারকে দুর্ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব যা ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক ব্যাপক। অধস্তন কর্মচারীদের সুপারভাইজারের তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান বা ব্যঙ্গবিদ্রƒপ করার ফলে এসব কর্মচারীর মনোভাব ও আচরণের ওপর শুধু যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাই নয়, উপরন্ত ওই সব কর্মচারী একে অপরের প্রতি একই ধরনের বৈরী আচরণেও লিপ্ত হয়। গবেষণার ফলাফলের ওপর লেখা একটি নিবন্ধ জার্নাল অব এ্যাপ্লাইড সাইকোলজির অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। কর্মচারীদের প্রতি ওপর ওয়ালার দুর্ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে পরিচালিত সমীক্ষা এই প্রথম। ক্রিস্টাল ফারহ বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ এটা শুধু নির্দিষ্ট কোন কর্মচারীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপার নয়। এতে এমন এক পটভূমি বা পরিবেশ তৈরি হয় যেখানে প্রত্যেকেই হয় ক্ষতিগ্রস্ত এক্ষেত্রে কর্মচারীরা ব্যক্তিগতভাবে দুর্ব্যবহার বা গালিগালাজের শিকার হোক আর নাই হোক। ফারহ বলেন, গবেষণার এই ফলাফলকে সামাজিক শিক্ষা তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সেই তত্ত্ব বলে যে লোকে প্রথমে শিখে, তারপর অন্যদের আচরণ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নিজের আচরণ নির্ধারণ করে। এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সে তাঁর উপরওয়ালার আচরণ দেখে। তিনি বলেন, আগের গবেষণায় দেখা গেছে যে কর্মচারীরা তাদের উপরওয়ালার ভাল বা ইতিবাচক আচরণ অনুকরণ করে। তাই যদি হয় তাহলে তারা তার মন্দ বা নেতিবাচক আচরণগুলোও অনুকরণ করবেÑ এমনটাই স্বাভাবিক। গবেষণার জন্য ফারহ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিজুন চেন চীনের ১০টি প্রতিষ্ঠানের ৫১টি কর্মচারী দলের ওপর সমীক্ষা চালান। দলগুলোর গড় কর্মচারী সংখ্যা ছিল ৬ এবং তারা কাস্টমার সার্ভিস, টেকনিকাল সাপোর্ট, গবেষণা ও উন্নয়নসহ নানা ধরনের কাজে যুক্ত ছিল। গবেষণায় উপরওয়ালার অদৈহিক দুর্ব্যবহার যেমন গালিগালাজ, কটুকথা বা মন্তব্য এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান করে ই-মেইল দেয়া ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা হয়। কর্মচারীদের মধ্যে যারা সরাসরি এ ধরনের দুর্ব্যবহারের শিকার যাদের মধ্যে হীনম্মন্যভাব সৃষ্টি হয় এবং তারা তখন তাদের টিমে কম কাজে লাগে। একই সঙ্গে গোটা টিম সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এতে কর্মচারীদের অবদানও কমে যায়। ফারহ বলেন, যেসব টিম সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে তাদের সদস্য কর্মচারীরা একে অপরের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন হয়, পরস্পরের সঙ্গে তারা দুর্ব্যবহার করে, রূঢ়ভাবে কথা বলে এবং একে অন্যের প্রতি নেতিবাচক ভাব প্রদর্শন করে। গবেষণার ফলাফল সে সব কোম্পানির জন্য তাৎপর্যবহন করে সেগুলো উপরওয়ালার দুর্ব্যবহারের শিকার কর্মচারী দলের পুনর্বাসন সমস্যার সম্মুখীন। অতীতে কোম্পানিগুলো হয়ত দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া কর্মচারীদেরই শুধু বেছে নিয়ে তাদের আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। ফারহ বলেন, এই বিষয়টির গুরুত্ব এখনও আছে। তবে আস্থা ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে এনে দলের কর্মচারীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিকঠাক করে তুলতে হবে। সূত্র : সায়েন্স ডেইলি
×