ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের বিচার হয়নি ॥ কমিশন গঠন সময়ের দাবি

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ১৭ আগস্ট ২০১৯

বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের বিচার হয়নি ॥ কমিশন গঠন সময়ের দাবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ এ জন্য যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বা হত্যাকারীদের প্রতিরোধ না করে যে পাপ জাতি হিসেবে আমরা করেছিলাম তার বিচার করে আমাদের মুক্তি দিয়েছেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে ২০১৯-এর ১৫ আগস্ট বছর বছর শোক দিবস পালন করেছি, কেবল বিচার দাবি করেছি, ৪৫ বছর পর আজ বলতে পারছি ইনডেমনিটি দিয়েও খুনীদের রক্ষা করা যায়নি। খুনীদের রক্ষা করা যায় না। তারপরও কথা থেকে যায়। বঙ্গবন্ধু ও তার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, বিচারে আসামীদের ফাঁসি হয়েছে, কিন্তু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যা কোন নিছক হত্যাকান্ড ছিল না। হাজার বছরের ক্ষণজন্মা ‘বাঙালী জাতির পিতাকে’ হত্যা করা হয়েছে, বাংলাদেশের হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে। তাই ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটন জরুরী। আজ দাবি উঠেছে, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশন করে ষড়যন্ত্রের চেলাদের মুখোশ উন্মোচনের সময় এখন- Never say never. কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো? কেন বাংলার হৃদস্পন্দন স্তব্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র হলো? মুশতাকের সঙ্গে সিভিল অঙ্গনের কারা জড়িত ছিল? জিয়ার সঙ্গে মিলিটারির আর কারা জড়িত ছিল? এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে সরলীকরণ করা যাবে, ষড়যন্ত্রের গভীরে প্রবেশ না করলে ঘটনার পিঠের ঘটনা উঠে আসবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্মের ইতিহাসবিদরা তথ্যানুসন্ধান করবেন, গবেষকরা বিশ্লেষণ করবেন, শত সহস্র প্রবন্ধ রচনা করবেন। কিন্তু গবেষণা শেষ হবে না এ জন্য যে- বঙ্গবন্ধু হত্যা, বঙ্গমাতা হত্যা, শিশু রাসেলসহ পুত্র ও পুত্রবধূদের হত্যা, এসব হত্যাকান্ড কোন মামুলি হত্যার ঘটনা ছিল না। এর পেছনে রয়েছে ৩০ লাখ শহীদ ও ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মবলিদানে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে মূলধারার বিপরীতে নিয়ে যাওয়া। সরাসরি পাকিস্তান না বানানো গেলেও স্বাধীন বাংলার অন্তরাত্মাকে পাকি ধারায় ফেরত নেয়া। যে কারণে হত্যাকারীরা এতটাই নির্দয়-নিষ্ঠুর ছিল যে, শিশু শেখ রাসেল এবং সুকান্ত সেরনিয়াবাতকেও জীবিত ছেড়ে যায়নি। তারা জানত জীবিত ছেড়ে গেলে বঙ্গবন্ধুর রক্ত তর্জনি তুলে বলবে সাতকোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না। বঙ্গবন্ধু আপনি তো বাংলাদেশের হৃদয়। বঙ্গবন্ধু আপনিই তো বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কি লিখব? একটি ছবি কাগজের ওপর ভেসে ওঠে বারেবারে, বিশাল মাপের পুরুষ রক্তাক্ত শরীরটি পড়ে আছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে অনাদরে অবহেলায়, একজনও প্রহরী নেই একজনও ব্যক্তিগত গানম্যান নেই কেউ নেই ॥ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের শেষ প্রহর রাতের নগর কোতোয়াল বাঁশি বাজাতে বাজাতে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে ‘বস্তিবাসী হুঁশিয়ার হ্যায়’ বলতে বলতে চলা গিয়া মসজিদের মুয়াজ্জিন ছুটছেন আজান দিতে পাশ দিয়ে হাজার বছরের ইতিহাসের স্রষ্টা বাড়িটির ভেতরের আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছল না অটোমেটিক রাইফেলের গর্জন শব্দে হারিয়ে গিয়েছিল শুনেছি ॥ কেবল কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখলেন বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে তার প্রিয়তমা সহধর্মিণী আমাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ শিশু শেখ রাসেলের তিন মুক্তিযোদ্ধা পুত্রের দুই পুত্রবধূ ও ভাইয়ের রক্তের স্রোতধারা ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গড়াতে গড়াতে সূর্য ওঠার আগেই বাংলার নদ-নদী জল ফসলের মাঠ রাঙিয়ে দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু আপনার সন্তানরা তখনো অঘোর ঘুমে নিমগ্ন ॥ আমরা কেউ ঘর থেকে বের হইনি ॥ বঙ্গবন্ধু আপনার নামে আমাদের নাম, আপনার পরিচয়ে আমাদের পরিচিতি। তাই তো আপনার ছ’ফুট লম্বা শরীরে পায়জামা-পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট, কাঁধের দু’পাশ দিয়ে ঝোলানো সরু কালো পাড়ের বনেদি সাদা চাদরে জড়ানো ছবিটি দেখিয়ে ইচ্ছে করে চিৎকার করে উচ্চারণ করি- দাঁড়াও পথিকবর জন্ম যদি তব বঙ্গে তিষ্ট ক্ষণকাল এই তো আমার বাংলাদেশ এই আমার বাংলাদেশের হৃদয় ॥ পথিক যদি কখনো বাংলাদেশে আসো একবার যেয়ো ৩২ নম্বরের বাড়িতে শুনবে স্লোগান ভেসে আসছে জয় বাংলা বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর শুনবে সেই বজ্রকণ্ঠবাণী আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না দেখবে সিঁড়িতে পড়ে আছে রক্তমাখা বিশাল পুরুষ দুনিয়া কাঁপানো সেই তর্জনি উঁচিয়ে ॥ তারপর শায়িত পিতা টুঙ্গিপাড়ার শেখ বাড়ির আঙ্গিনায় ॥ পথিক সেখানেও যেও হাত তুলে আল্লাহর দরবারে একবার বলো যে মহানায়ক বাঙালির মুক্তিকামী মানবতার কষ্টগুলো হৃদয়ে ধারণ করে আছেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলা’মিন তার কবরকে রিয়াজুল জান্নাহ্্ বানিয়ে দিন ॥ তিনি তো কোনোদিন কিছু চাননি প্রধানমন্ত্রিত্বও না এটুকু তো আমরা চাইতেই পারি আমিন আমিন ॥ এখন সামনে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী- ১৭ মার্চ ১৯২০ থেকে ১৭ মার্চ ২০২১। এবং তারপরই ২৬ মার্চ ২০২১ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী। কৃতজ্ঞ জাতি তাই এই দুটি ঘটনাকে সমর্যাদায় উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ১০১ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সকল শ্রেণী পেশার জনগণের প্রতিনিধি সমন্বয়ে এই কমিটি ছাড়াও ইমেরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে একটি বাস্তবায়ন কমিটিও করা হয়েছে। দুই কমিটিরই সদস্যসচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কবি কামাল চৌধুরী। এরই মধ্যে বছরব্যাপী প্রাথমিক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। দুই দিবসের ওপর জাতীয় সংসদে দুটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হবে। প্রস্তুতি চলছে। আজ আমরা যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছি সে জায়গায়ও আসতে পারতাম না যদি সে রাতে (১৫ আগস্ট ’৭৫) বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে না থাকতেন। তারা দেশের বাইরে ছিলেন বলেই বেঁচে গিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত অণুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া তখন জার্মানিতে গবেষণাকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। দুই বোন ১৫ আগস্টের কয়েকদিন আগে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবন। নিদারুণ কষ্টে কাটাতে হয়েছে তাদের। তারপর দেশে ফিরে শেখ হাসিনা দলের ও জাতির দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। সন্তানদের দায়িত্ব শেখ রেহানাকে দিয়ে নিজে জাতির দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। সেদিন তারা দুই বোন জার্মানিতে না গেলে আজকের বাংলাদেশ আমরা পেতাম না। যেমন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে বাংলাদেশ বহু আগেই আজকের অবস্থান ছাড়িয়ে যেত। এতদিনে আমরা আজকের মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ নয়, আরও এগিয়ে উন্নত বাংলাদেশের মহাসড়কে হাঁটতাম। সামনে থাকতেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পেছনে শেখ হাসিনা এবং তারপর আমরা। এই অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্যই ১৫ আগস্টের নৃশংসতা ঘটানো হয়েছিল। যে পরিবারটি আমাকে টেরিটরি দিয়েছে, পতাকা দিয়েছে, সঙ্গীত দিয়েছে সর্বোপরি আমাকে আমার আত্মপরিচয়ের সন্ধান দিয়েছে, পাসপোর্ট দিয়েছে, কেন সেই পরিবারের প্রতিটি মানুষকে হত্যা করা হলো? কেন হত্যা করা হলো জাতির পিতাকে? কেন হত্যা করা হলো তার ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনের প্রিয়তমা সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে? কেন হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুর তিন পুত্র ও দুই পুত্রবধূকে? কেনইবা হত্যা করা হলো ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলকে? রাসেলতো বলেছিল সে চলে যাবে এ বাড়ি থেকে, তবু কেন তাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো? এই কেন’র উত্তর খুঁঁজতেই উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করা জরুরী। এটা ঠিক খুনীদের বিচার হয়েছে। অর্থাৎ যে মিলিটারিরা সরাসরি গুলি চালিয়েছিল তাদের বিচার হয়েছে। বিচারে অনেকের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। কয়েকজনের ফাঁসির দন্ড কার্যকরও হয়েছে। বাকিরা বিদেশে আত্মগোপনে আছে। তাদেরও ফিরিয়ে আনার এবং দন্ড কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। হত্যাকান্ডের পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ কেন উন্মোচন করা জরুরী তার ২/১টি উদাহরণ তুলে ধরছি- আমেরিকার সরকার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশ্যে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার গণহত্যার সহযোগী ছিল। অস্ত্র-অর্থ সরবরাহ করেছে। তবে আমেরিকার জনগণ গণহত্যার বিরুদ্ধে ছিল এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজও করেছে। আন্তর্জাতিক জনমত সৃষ্টিতে কাজ করছে। বব ডিলানের মতো নোবেল লরেটরা কনসার্ট করেছেন বাংলাদেশের পক্ষে। আমেরিকার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জার, বিশ্বব্যাপী যার পরিচয় শয়তানের চেলা বলে, মুক্তিযুদ্ধে হেরে গিয়ে সে বলেছিল, ‘The emergence of Bangladesh is my personal defeat. GB personal defeat’ কথাটি কেন? তারা তো পাকিস্তানের অংশও না, পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের শালা-সম্বন্ধির সম্পর্কও ছিল না। তবু কেন? এর উত্তর বিশ্বব্যাপী মোড়ালিপনা এবং লুণ্ঠন, অস্ত্র বিক্রি করে মাল কামানো। দ্বিতীয়ত মিলিটারি জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্টের পূর্বে খুনী মিলিটারি ফারুক-রশীদরা যখন ক্যান্টনমেন্টে জিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাদের চক্রান্তের কথা জানিয়ে তার সহযোগিতা চেয়েছিল তখন জিয়া বলেন, ‘I am a senior army officer, I cant invalve in it directly. If you are serious go ahead.’ এই ‘go ahead’ শব্দদ্বয় সবকিছু বলে দেয়। এ কথা গত ৪ দশকে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এমনকি খুনীরা বিদেশে টিভি ইন্টারভিউ দিয়ে প্রকাশ করেছে। কমিশন গঠন করে এর গভীরে যাওয়া সম্ভব হলে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের মাটিতে বসে ষড়যন্ত্রের নাটের গুরু খন্দকার মুশতাক ও তার দুই চেলা মাহবুব আলম চাষী এবং তাহের ঠাকুরের সঙ্গে জিয়ার কি সম্পর্ক ছিল, কি কি তারা করেছে কমিশনের তদন্তে তাও বেরিয়ে আসবে। তৃতীয়ত খুনী ফারুক-রশিদরা যখন ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিল তখন জিয়াপত্নী খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন, তাদের কাছে ছিলেন কি-না, আলোচনায় শরিক হয়েছিলেন কি-না কমিশন হলে এসব কিছু সামনে চলে আসবে। ইতিহাসের ঘটনাবলী কখনও হারায় না, কখনও কখনও ঘুমিয়ে থাকে বা কোমায় থাকে। আবার কোরামিন দিলেই জেগে ওঠে। তাছাড়া খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের মাঝে বারবার বলার পরও কেন ভারতে না গিয়ে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে গিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের ৯ মাস ক্যান্টনমেন্টেই কাটিয়েছিলেন? কেনই বা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ভুয়া জন্মদিন বানিয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে কেক কেটে উল্লাস করে চলেছেন? স্কুলের খাতায়, বিয়ের কাবিনে তার জন্মদিন কখনও ৫ আগস্ট কখনও ১৯ আগস্ট; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ১৫ আগস্ট ছিল না। মূলত ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন বানিয়ে কেক কাটা তার Sadistic Pleasure বা বিকৃত উল্লাস বলে আমরা সাধারণ চোখে দেখি। এর পেছনে কি আছে আমরা জানি না। কমিশন করলে হয়তো এসব প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যেতে পারে। তারপরও যেটুকু বিচার হয়েছে তাও কৃতজ্ঞ বাঙালী শেখ হাসিনাকে চোখের জলে বরণ করেছিলেন এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাঁর হাতে দিয়েছিলেন বলেই। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার শুরুর আগে দেশ থেকে মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ তাড়িয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টিতে যা যা করা দরকার অত্যন্ত দৃঢ় চিত্তে সাহস ও দূরদর্শিতার সঙ্গে তা করেছেন। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে। মানুষ অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থান পাচ্ছে। আজ খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি টন, মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাঁইত্রিশ বিলিয়ন ডলার, জিডিপি টানা ৭ মাইনাস-প্লাস পেরিয়ে এবার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। সে তুলনায় মূল্যস্ফীতি টানা ৫ শতাংশের নিচে, গড় আয়ু ৭৩ বছর, শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ, সর্বোপরি গত ১০ বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের হার ৪১ থেকে নেমে ২১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। টার্গেট হচ্ছে আগামী সাড়ে ৪ বছরে এ হার ১০ শতাংশে নেমে আসবে। বাংলাদেশ নিম্ন আয় থেকে নিম্ন-মধ্যম এবং নিম্ন-মধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশ তথা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সবার আগে আগে হাঁটছে। এ অঞ্চলের ৪৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সৎ এবং সফল রাষ্ট্রনেতা হিসেবে যথাক্রমে বিশ্বে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়। এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তিনি যেমন দেশকে দ্রুত গতিতে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। জাতীয় ৪ নেতার হত্যার বিচার করে জাতিকে পাপমুক্ত করেছেন। একই সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ৩০ লাখ শহীদ ও ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মার শান্তি নিশ্চিত করেছেন। আজ এ মুহূর্তে বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদার সাহসী পদক্ষেপ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। পাশাপাশি ঢাকায় মেট্রোরেল, চট্টগ্রামের কর্ণফুলি টানেল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, বিদ্যুত উৎপাদন বর্তমান ২১ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা, রেল সার্ভিসের পুনর্জীবন, এমনি ‘মেগা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এ পথে তার জীবন কসুুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯ বার তাকে হত্যার লক্ষ্যে গুলি-বোমা-গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে। চট্টগ্রাম, নাটোর, বঙ্গবন্ধু ভবন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, রাসেল স্কোয়ার, জামালপুর প্রতিটি স্থানে হামলার টার্গেট ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার টার্গেট ছিলেন তিনি ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় তিনি বেঁচে আছেন, জাতির সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। গুলি-বোমা-গ্রেনেড যাই আসছে তিনি ভ্রুক্ষেপ না করে বুকে আল্লাহ-রাসুলের (স) নাম ধারণ করে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে চলেছেন। এই মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে জাতির নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। জয়তু, শেখ হাসিনা the mother of humanity and the star of the east. ঢাকা-১৪ আগস্ট ২০১৯ লেখক : সংসদ সদস্য, সিনিয়র সাংবাদিক এবং সাবেক সভাপতি ও সাঃ সম্পাদক জাতীয় প্রেসক্লাব, সিনেট সদস্য-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপদেষ্টা-সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম [email protected]
×