ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফি-সাকিবদের কোচ তাহলে ডোমিঙ্গো?

প্রকাশিত: ১২:৫১, ৮ আগস্ট ২০১৯

মাশরাফি-সাকিবদের কোচ তাহলে ডোমিঙ্গো?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপের পরই প্রধান কোচ স্টিভ রোডসকে সমঝোতার মাধ্যমে বিদায় করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এখন খোঁজা হচ্ছে নতুন প্রধান কোচ। সেই কোচ কী তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো? প্রশ্ন উঠে গেছে। তিনি যে বুধবার ঢাকায় এসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে কোচ হওয়ার জন্য সাক্ষাতকার দিয়ে গেছেন। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজের আগেই প্রধান কোচ নিয়োগ দিতে চায় বিসিবি। বুধবার সকালে ডোমিঙ্গো ঢাকায় আসেন। এরপর বিকেলে বিসিবি সভাপতির কাছে সাক্ষাতকার দেন তিনি। সাক্ষাতকার পর্বে বিসিবি সভাপতিসহ বিসিবির কয়েকজন পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের কোচ ছিলেন ডোমিঙ্গো। স্পেশালিস্ট টি২০ কোচ হিসেবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রোটিয়াদের টি২০ দলের দায়িত্ব পালন করেন ডোমিঙ্গো। সেই সময় দলও অনেক সাফল্য কুড়ায়। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি২০ সিরিজ খেলেই ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১৯ বছর পর কোন সিরিজ জিততে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন অসাধারণ সাফল্যের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও টি২০ সিরিজ জিতে প্রোটিয়ারা। গ্যারি কার্স্টেনের সহকারী ছিলেন ডোমিঙ্গো। কার্স্টেন যখন দায়িত্বের ভার কমাতে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের কোচিং থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান তখনই ডোমিঙ্গো সেই দলের দায়িত্ব পান। সেই দায়িত্ব পেয়ে সাফল্যও দেখান। আবার যখন ২০১৩ সালের জুলাইয়ের পর কার্স্টেন পুরোপুরি কোচিং ছেড়ে দেন তখন ডোমিঙ্গো টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ সব ফরমেটের দায়িত্ব পেয়ে যান। কখনই দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে না খেলা এ কোচ এখানেও সাফল্য দেখান। তার তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতেও ভালই সাফল্য মিলে। যদিও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ওয়ানডে সিরিজে হারে প্রোটিয়ারা। তবে সার্বিকভাবে ভাল সাফল্য কুড়ান। ২০১৭ সালের আগস্টে জাতীয় দল থেকে ডোমিঙ্গোকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কোচ নিয়োগ দেয়া হয়। ডোমিঙ্গোকে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘এ’ দলের দায়িত্বে রাখা হয়। সামনেই টি২০ বিশ্বকাপ আছে। সেটি ২০২০ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে। তবে এর আগে অনেক টি২০ ম্যাচ খেলতে হবে বাংলাদেশকে। টেস্টও খেলতে হবে। তবে নেই খুব বেশি ওয়ানডে ম্যাচ। যেহেতু আইসিসি টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নেয়া হয় প্রতিটি দেশে। বিসিবিও স্বাভাবিকভাবে টি২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলতে চায়। সেই এগিয়ে চলায় ডোমিঙ্গো যেহেতু আটমাস দক্ষিণ আফ্রিকায় শুধু টি২০ দলেরই কোচ ছিলেন, সাফল্যও কুড়িয়েছেন; তাই টি২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই কোচই শেষ পর্যন্ত সেরা অপশন হয়ে ধরা দিতে পারে। এখন শুধু দরকার আলোচনার মাধ্যমে দুইপক্ষের সমঝোতায় আসা। ডোমিঙ্গো যদি আবার তারকা কোচদের মতো বিশ্বের টি২০ লীগগুলোতে কোচিং করানোর শর্ত জুড়ে দেন তাহলেই সব ভেস্তে যেতে পারে। নাহলে ডোমিঙ্গোকেই কোচ করা হতে পারে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। এই সিরিজে ভারপ্রাপ্ত কোচ ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। স্থায়ী কোন কোচকে পায়নি বাংলাদেশ। অবশ্য এত দ্রুত পাওয়ারও কথা নয়। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়েছে ৫ জুলাই। ৭ জুলাই দেশে ফিরেন ক্রিকেটাররা। দেশে ফিরেই আবার ১২ দিন পর ২০ জুলাই শ্রীলঙ্কায় উড়াল দেন ক্রিকেটাররা। সেখানে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হয় ২৬ জুলাই। শেষ হয় ৩১ জুলাই। শ্রীলঙ্কা সফরের আগেই রোডসকে বিদায় করা হয়। ১২ জুলাই বাংলাদেশ ছেড়ে নিজ দেশ ইংল্যান্ডেও চলে যান রোডস। এই অল্প সময়ে নতুন কোচ নিয়োগ দেয়া কঠিনই ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মিশন শেষ হওয়ার পর একমাস হয়ে গেছে। এখনও কোচ নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। সামনেই বাংলাদেশের এক টেস্ট ও টি২০ সিরিজ রয়েছে। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৫ সেপ্টেম্বর একমাত্র টেস্টটি ও এরপর আফগানিস্তান ও জিম্বাবুইয়েকে নিয়ে একটি ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে একটি দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ অথবা আফগানিস্তান ও জিম্বাবুইয়েকে নিয়ে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ হতে পারে। সেপ্টেম্বরের আগে হাতে আছে ২৪দিন। আর আফগানদের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টটি শুরু হওয়ার আগে ২৮দিন হাতে থাকছে। এই সময়ের মধ্যে কী কোন প্রধান কোচ নিয়োগ দেয়া সম্ভব? এমন প্রশ্ন উঠেছিল। ডোমিঙ্গো সাক্ষাতকার দেয়ায় যেন দ্রুত কোচ নিয়োগের পথেই হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে বিসিবি। বিসিবি স্থায়ী কোচ খুঁজছে। যিনি শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। অন্য কোন খেলা নিয়ে ভাববেন না। বিশ্বে সবচেয়ে আকর্ষণীয়, অর্থের দিক দিয়ে লোভনীয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল), বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ছাড়াও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ লীগ হচ্ছে। যেখানে এক মৌসুম কাজ করলেই অনেক অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে। তাই বড় মাপের, সাবেক তারকা ক্রিকেটার কিংবা কোচরা একটি দলের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হতে চান না। তারা লীগগুলোতে কোচিংও করাতে চান। কিন্তু বিসিবি চায় শুধু বাংলাদেশ দলের জন্যই স্থায়ী কোচ। শুধু স্থায়ী কোচ হলেই তো হয় না, তাহলে কী আর রোডসকে বিদায় করে দিত বিসিবি? বিসিবি চায় দলের প্রতি দায়িত্বশীল থাকতে হবে। যে পরিকল্পনা করবেন তা খুব শক্তিশালী হবে। দেশের ক্রিকেটারদের খুব ভালভাবে শেখাবেন। পারফর্মেন্স আদায় করে নেয়ার ক্ষমতাও থাকবে। কঠোরও হতে হবে। রোডস যেমন নরম স্বভাবের মানুষ ছিলেন, তেমনটি হলে চলবে না। এমন কোচ পাওয়া কঠিনই। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, বড় কোচরা আবেদন করেন না। তারা এজেন্ট দিয়ে মূলত যোগাযোগ করেন। যাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে তারাও শর্ত দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। কেউ কেউ বিভিন্ন দেশের টি২০ লীগে কোচিং করান। তারা ওই লীগের সময় ছুটি নেয়ার শর্ত দিচ্ছেন। বিসিবির পরিচালক জালাল ইউনুস জানিয়েছিলেন, পুরো সময়ের জন্য প্রধান কোচ পাওয়া যাচ্ছে না। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেছিলেন, ভারতের কোচ হওয়ার দৌড়ে আছেন অনেকে। ভারত কোচ নিয়োগ দেয়ার পর জোরেশোরে নামবে বিসিবি। অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা হয়ে আছে। পূর্ণ সময়ের জন্য কোচ চায় বিসিবি। যার আবার আন্তর্জাতিক পরিচিতিও রয়েছে। কিন্তু বিসিবি সভাপতি পাপন সম্প্রতি যেভাবে বলেছেন, তাতে তো দ্রুতই কোচ নিয়োগের সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে। বিশ্বকাপের পর পেস বোলিং কোচ দক্ষিণ আফ্রিকান চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টকে, স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে নিয়োগ দেয়া গেছে। কিন্তু প্রধান কোচ দ্রুতই নিয়োগ দেয়ার কী হবে? আগস্টেই কোচ নিয়োগ হয়ে যাবে, এমন ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন পাপন। তিনি সরাসরিই বলেছিলেন, ‘দ্রুত কোচ নিয়োগ হয়ে যাবে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে।’ বিসিবি সভাপতি দ্রুতই কোচ নিয়োগের কথা বললেও তা অচিরেই সম্ভব কিনা তা নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। এখন ডোমিঙ্গো সাক্ষাতকার দেয়ায় একটি কথাই উঠছে, বুঝেই তাহলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কোচ নিয়োগের কথা বলেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তাহলে কী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ ডোমিঙ্গোই হবেন?
×