ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ কোটি মানুষের সকল ডেটা ‘ফেসএ্যাপ’-এর নখদর্পণে!

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ৩ আগস্ট ২০১৯

  ১৫ কোটি মানুষের সকল ডেটা ‘ফেসএ্যাপ’-এর নখদর্পণে!

অতনু রায় : বর্তমানে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে অবস্থান করছে ফেসএ্যাপ। ২০১৭ সালে উন্মুক্ত হওয়া এ্যাডভান্স ইন্টিলিজেন্ট প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই ‘ফেসএ্যাপ’ শুরু থেকেই বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি সেলিব্রেটিরা এই এ্যাপ ব্যবহার করা শুরু করায় জনপ্রিয়তা আবার বেড়েছে। আর তাই এখন গুগল প্লে স্টোরে ফটো এডিটিং এ্যাপ-এর সেকশনে প্রথম স্থানে রয়েছে এই এ্যাপ। কিন্তু আপনি জানেন কি এই এ্যাপের শর্তাবলীকে সম্মতি দেয়ার মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাচ্ছে এ্যাপ প্রস্তুতকারীদের হাতে? ঠিক আপনারই মতো বৃদ্ধ বয়সে নিজেকে কেমন দেখাবে, তা জানার আগ্রহে কোন কিছু না ভেবেই ‘ফেসএ্যাপ’ ব্যবহার করেছেন এবং করছেন কোটি কোটি ব্যবহারকারী। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই এ্যাপ গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা হরণ করছে। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ১০ কোটিরও বেশি মানুষ গুগল প্লে স্টোর থেকে ফেসএ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। এছাড়া ১২১ দেশজুড়ে এ্যাপল এ্যাপ স্টোরেও শীর্ষস্থানে আছে এ এ্যাপটি। সব মিলিয়ে ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যবহার করছেন বা করেছেন এই এ্যাপটি। মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যদের ইতোমধ্যে এ্যাপসটি আনইন্সটল করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে দলের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। তাদের মতে, রাশিয়ার পিটার্সবার্গে অবস্থিত ওয়্যারলেস ল্যাব নির্মিত এ্যাপটি তথ্য পাচার করছে। কারণ, ইন্সটলের শর্তানুযায়ী এ্যাপটি ব্যবহারকারীর ডিভাইস থেকে আইপি এ্যাড্রেস, ব্রাউজারের কুকিস, লগ ফাইল, অবস্থানসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। পাশাপাশি এ্যাপটি ইন্সটলের সময় আজীবনের জন্য গ্রাহকের ছবির পূর্ণ মালিকানা চলে যায় এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের হাতে। এদের রয়েছে রয়্যালটি ফ্রি লাইসেন্স, যার দ্বারা তারা চাইলে যা খুশি করতে পারেন ইউজারদের ছবি নিয়ে। এজন্য গ্রাহক পরবর্তী সময়ে কোন ধরনের দাবি জানাতে পারবেন না। ফেসএ্যাপের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, এটি গ্রাহকের ডিভাইসের পুরো গ্যালারিতে এ্যাক্সেসের অনুমতি চায়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব ছবি নিজস্ব সার্ভারে সংরক্ষণ করে রাখছে ওয়্যারলেস ল্যাব। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্যপ্রবাহের এই যুগে টাকা-পয়সা কিংবা অলঙ্কারের চেয়েও দামী হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত তথ্য। কারও সম্পর্কে ছোটখাটো বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তার গতিবিধি, মন-মানসিকতা, অতীত-বর্তমান সবই সহজে জেনে ফেলা সম্ভব। তাছাড়া বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এসব তথ্য অনেক মূল্যবান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ‘পার্সোনালাইজড’ বিজ্ঞাপন তৈরি করে, যা দিয়ে ওই ব্যক্তিকে সহজেই প্রভাবিত করা যায়। এ বিষয়ে গুগলের প্রাক্তন মার্কেটিং ম্যানেজার এরিয়েল হোস্টাট বলেন, এই ধরনের এ্যাপ নিয়ে তিনি বার বার ব্যবহারকারীদের সচেতন করেছেন। এই তথ্য কোনভাবে হ্যাকারদের হাতে গেলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। ব্যক্তিগত তথ্য থেকে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট, সবকিছুই এ্যাকসেস করা যাবে এভাবে। আর এসব তথ্যের অপব্যবহারে নিরাপত্তা ঝুঁঁকির সঙ্গে হারাতে পারেন আপনার প্রিয় ফেসবুক এ্যাকাউন্টটিও!
×