ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক লোহাগড় মঠ

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ২৮ জুন ২০১৯

ঐতিহাসিক লোহাগড় মঠ

চারদিকে পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত চারপাশ, মঠের ফাঁকগুলো দিয়ে তাদের উঁকি মারার দৃশ্য মনোরঞ্জন দেয় দর্শনার্থীদের। বিকেলে দেখা মেলে ‘টিয়া পাখির’। রয়েছে শালিক, কবুতরসহ বেশ ক’রকমের পাখি। মঠের পাশেই রয়েছে সবুজ ধানের ক্ষেত আর ডাকাতিয়া নদী। প্রচ- তাপপ্রবাহে যারা ভাবছেন একটু প্রশান্তির ছোঁয়া মনে লাগাবেন তাদের কাছে জায়গাটি হতে পারে বেশ দৃষ্টিনন্দনীয়। এক সময় জমিদারদের বেশ প্রভাবছিল বাংলার মাটিতে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করেই তারা চালিয়ে গিয়েছিল তাদের রাজত্ব। নিরীহ প্রজাদের শাসন আর শোষণের মাধ্যেমে চালাত তাদের রাজতন্ত্র। প্রতাপশালী এসব জমিদারের বিলাসিতার অভাব ছিল না। তেমনই এক বিলাসবহুল জমিদার ছিলেন দু’ভাই লোহাগড়ের জমিদার ‘লৌহ’ এবং ‘গহড়’। লোকমুখে শোনা যায়, লোহা এবং গহড়ের নামানুসারে এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে লোহাগড়। ধারণা করা হয় লোহাগড়ে যেসব মঠ রয়েছে তা কয়েক শতাব্দী পূর্বের। বিশেষ করে পাঁচটি মঠ এক সময় থাকলেও এখন সেখানে মাত্র তিনটি মঠ টিকে আছে। সুউচ্চ এসব মঠ এক সময় জমিদারদের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এ ছাড়া ধারণা করা হয়, মঠগুলোতে মণি, মুক্তা, স্বর্ণালঙ্কার ছিল ভূরি ভূরি। মঠের উপরিপ্রান্তে রয়েছে মিনার আকৃতির গম্বুজ। তবে মঠটির ভেতরে অনেকবারই চোররা ঢুকতে চেষ্টা করেছিল। যার প্রমাণ মঠটির অনেক অংশেই লক্ষ্য করা যায় ধ্বংসলীলা। চমকপ্রদ এ মঠটি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপ্রিয়াসী মানুষ। লোকমুখে শোনা যায়, এক সময় লোহাগড়ের জমিদারদের শান বাঁধানো ঘাট, কারুকার্যময় কেল্লা ছিল। যার অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। কল্পকাহিনীর গল্পও রয়েছে জমিদার লৌহ এবং গহড়কে ঘিরে। স্থানীয়রা বলেন, আমরা শুনেছি জমিদাররা তেমন একটা ভাল মানুষ ছিল না। কথিত আছে, একবার নাকি ব্রিটিশ এক জনৈক ব্যক্তি ঘোড়া নিয়ে প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘কেমন জমিদার এরা বাপু! রাস্তাগুলো এত খারাপ। ঠিক সে সময় নাকি জমিদারদের গোলামরা এ কথা শুনে জমিদার লৌহ এবং গহড়কে অবহিত করে। তৎক্ষণাৎ লৌহ এবং গহড় সে রাস্তাটি সিকি ও আধুলি মুদ্রা দিয়ে ভরিয়ে দেয় এবং ওই লোকটি ফেরার পথে এ অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেলেন। পরে জমিদারদের গোলামরা তার ওপর অত্যাচার করেছিল বলে শোনা যায়। তবে সে রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরও শোনা যায়, একবার নাকি তাদের মা আম, দুধ খেতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে তারা মাকে আম, দুধ খাওয়ানোর জন্য একদিন সকালে বাজারের সমস্ত দুধ ও আম এনে পুকুরে চুবিয়ে মাকে চুবিয়ে, চুবিয়ে খেতে দেয়া হয়। ধারণা করা হয় সেখানেই মায়ের মৃত্যু হয়। এভাবেই এক সময় পতন ঘটে রাজপরিবারের। জমিদারদের রেখে যাওয়া এ স্থাপত্যশৈলী এখন দেশের পর্যটন ক্ষেত্রের একটা সম্ভাবনাময় খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা প্রশাসন অচিরেই স্থানটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। কীভাবে যাবেন : চাঁদপুর জেলার, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১নং পশ্চিম বালিথুবা ইউপির চান্দ্রা বাজার হতে ১.৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে ডাকাতিয়া নদীর তীরে ‘লোহাগড় মঠ’ অবস্থিত। ঢাকা থেকে লঞ্চে কিংবা গাড়িতে করে চাঁদপুর এসে সেখান থেকে সিএনজিযোগে লোহাগড় মঠে পৌঁছানো সম্ভব। ভাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে ডেক ভাড়া ১০০ কেবিন ৪০০ (সিঙ্গেল), ৮০০ (ডবল) টাকা এবং চাঁদপুর থেকে সিএনজিযোগে ১০০ টাকার মধ্যে সেখানে যাওয়া যাবে।
×