জিএম মোস্তফা ॥ এবারের আসরের আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড। শুরুর আগে টুর্নামেন্ট জয়ের ফেবারিটও ছিল স্টোকস-মরগানরা। শুধু তাই নয়, এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়েরও স্বপ্ন দেখছিল ইংলিশ সমর্থকরা। কিন্তু শুক্রবার শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর যেন বদলে দিচ্ছে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের সেইসব সমীকরণ!
কেননা টুর্নামেন্টের প্রথম ছয় ম্যাচের মধ্যেই যে দুটিতে হেরে যায় ইয়ন মরগানের দল। তাও আবার এবারের আসরের দুই ‘নড়বড়ে’ দল পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্গার কাছে। দ্বাদশ বিশ্বকাপে উপমহাদেশের দল পাকিস্তানের কাছে টুর্নামেন্টের প্রথম হারের পর শুক্রবার দুর্বল দল শ্রীলঙ্কার কাছেও হারতে হলো তাদের। এদিন ২০ রানে লঙ্কানদের কাছে হেরে যায় মরগান-বাটলাররা। লঙ্কানদের ছুড়ে দেয়া ২৩৩ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে পারেনি ইংল্যান্ড। মালিঙ্গা-প্রদীদের নিয়ন্ত্রিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে মাত্র ২১২ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ঘরের মাঠে এমন পরাজয়ে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ইয়ন মরগান তাই চরম হতাশ।
এ প্রসঙ্গে ম্যাচের পর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইয়ন মরগান বলেন, ‘পার্টনারশিপ গড়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু তাদের বিপক্ষে আমরা বড় পার্টনারশিপ গড়তে পারিনি। আবার ব্যক্তিগতভাবেও কেউ খুব ভাল করতে পারিনি। দুইজন ব্যক্তিগত ভাল ইনিংস খেলেছে। তবে ম্যাচ জয়ের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। ম্যাচে কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সেটা মোকাবেলা করতে পারিনি আমরা বরং তাদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছি। আসলে আমরা আজকের ম্যাচ জয়ের যোগ্য ছিলাম না।’
ঘরের মাঠে এবার ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের পারফর্মেন্স শুরু থেকেই ছিল বেশ প্রশংসনীয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩৮৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে তারা। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৩৯৭ রানের রেকর্ডটাও তাদের দখলে। অথচ লঙ্কানদের বিপক্ষে ২৩৩ রান তাড়া করে জিততে ব্যর্থ হয়েছে ইংল্যান্ড। এমন ব্যর্থতার কারণে টুর্নামেন্টে এখন নতুন করে হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে। এই হারের পর মরগান তো সতীর্থদের বলেই দিয়েছেন, ‘রান চেজ করার মূল সূত্রে ফিরে যাও।’
টুর্নামেন্টে দলের দ্বিতীয় পরাজয়ে সেমিফাইনালের পথ কিছুটা জটিল হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। কেননা তাদের সামনের ম্যাচগুলোতে যে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং নিউজিল্যান্ড। যে কারণে সামনের তিনটি ম্যাচেই ইংল্যান্ডকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। পরবর্তী ম্যাচেই ইংলিশদের প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এরপর টুর্নামেন্টের দুই অপরাজিত দল ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। এই তিন ম্যাচের আগে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে অতীত ইতিহাসও। কেননা ১৯৯২ সালের পর এদের কোন দলকেই যে বিশ্বকাপে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। তারপরও দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতায় বিশ্বাস আছে মরগানের। লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগামী ম্যাচের কথা উল্লেখ করে ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, ‘পরাজয়ের পর আমরা শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসি। আমাদের আক্রমণাত্মক, স্মার্ট এবং ইতিবাচক ক্রিকেট খেলতে হবে। আশা করছি মঙ্গলবারের ম্যাচে এমনটাই ঘটবে।’
হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে ওপেনার জেসন রয় ছাড়া এটা ছিল ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ম্যাচ। তার পরিবর্তে নামা জেমস ভিন্স আফগাস্তিানের বিপক্ষে ২৬ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছেন ১৪ রান। তবে ইনজুরির কারণে তার পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটবে সেটা মানতে রাজি নন মরগান। আফগাস্তিানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা ১৪৮ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বলেন, ‘এমনটা হয়েছে আমি আদৌ তা মনে করি না। আপনি আমাদের ম্যাচগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন অবশ্যই সে আমাদের দলে থাকতো এবং টপঅর্ডারে সে খুবই শক্তিশালী ব্যাটসম্যান। তবে এ কারণেই আমরা আজ ম্যাচ হেরেছি কিংবা এ সপ্তাহে আমরা ধুকতে পারি তেমনটা নয়।’ গত বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। এরপর থেকেই ৫০ ওভারের ক্রিকেটে পরাক্রমশালী দল হয়ে উঠেছে ইংল্যান্ড। বর্তমানে আছে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। যেমন করে এই চার বছরে এগিয়েছে আবারো সে জায়গায় ফিরে যেতে দলের সকল খেলোয়াড়দের প্রতি এমন আহ্বানই জানিয়েছেন মরগান। তিনি বলেন, ‘বার্তাটা খুব সহজ, আমরা যেভাবে খেলি তার সঙ্গে আমাদের মূল সূত্র ফিরিয়ে আনা দরকার। এমনটা না পারার কোন কারণ নেই। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি এবং এ বিশ্বকাপে সব ম্যাচ জিততে পারব না। যে প্রক্রিয়ায় আমরা বিশ্বের একটা শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছি আমাদের সেই ধারায় ফিরে যেতে হবে।’