ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও সেমির স্বপ্ন দেখছেন মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ২২ জুন ২০১৯

এখনও সেমির স্বপ্ন দেখছেন মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ পথ অনেক কঠিন। সেমিফাইনালে যেতে হলে সামনের তিন প্রতিপক্ষকেই হারাতে হবে বাংলাদেশকে। এরপরও বাকিদের রেজাল্টের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে সবকিছুর উর্ধে ভাগ্য যদি সহায় হয় তাহলে হলেও হতে পারে। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলে ফেলতে পারে। আর তাই মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবালরা সেমিফাইনালের স্বপ্ন এখনও দেখছেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি যেমন বলেছেন, ‘এখন প্রতি ম্যাচই জিতবে হবে, এরপরও অন্য ম্যাচের ফলের জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে। অন্যদের সুবাদে কিছু সমীকরণ তৈরি হতে পারে। তবে আমাদের নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে হবে। এখনও বলা যায় না। আপনি কখনই জানেন না কি হবে। আমরা যেটা করতে পারি শেষ তিনটি ম্যাচে ভাল ক্রিকেট খেলতে পারি। অবশ্যই কঠিন। কিন্তু যদি ম্যাচ তিনটিতে জিততে পারি এবং দেখতে হবে অন্যরা কি করে। আমাদের জন্য আপাতত গুরুত্বপূর্ণ হলো বাকি তিনটি ম্যাচ একটি একটি করে এগোনো এবং জেতা।’ ওপেনার তামিম ইকবাল জানান, ‘এখনও সুযোগ আছে। দলের সবাই একটি কথাই ভাবছে যে তিন ম্যাচ জিতলে একটি সুযোগ আসতে পারে। এখনও এই অবস্থাতেই আছি আমরা। কখনও যদি এ রকম অবস্থা আসে যে কোন সুযোগ আর নেই, তখন পঞ্চম স্থানের কথা ভাবব।’ বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকায় এখনও পঞ্চম স্থানেই আছে। ৬ ম্যাচের মধ্যে দুই ম্যাচ জিতেছে। তিন ম্যাচে হেরেছে। এক ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ১ পয়েন্ট পেয়েছে। মোট ৫ পয়েন্ট পেয়েছে। এখন বাংলাদেশের সামনে আছে তিন প্রতিপক্ষ। আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। যদি তিনটি ম্যাচেই জিতে তাহলে ১১ পয়েন্ট হবে। তখন পয়েন্ট তালিকায় ওপরে থাকা ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। যে কোন একটি দল বাংলাদেশের চেয়ে কম পয়েন্টে থাকলেই সেমিফাইনালে খেলবে টাইগাররা। অথবা সমান পয়েন্ট হলেও তখন রানরেটের হিসেব হবে। পয়েন্ট তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে থাকা দলগুলোর মধ্যে কোন দল যদি হারতে থাকে তাহলে রানরেট কমবে। বাংলাদেশ যদি জিততে থাকে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই রানরেট বাড়বে। তখন সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ ধরাও দিতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অসাধারণভাবে জেতায় সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভালভাবেই জেগে ওঠে বাংলাদেশের। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারাতে সেই স্বপ্ন একটু হলেও বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশকে সেমিফাইনাল খেলতে হলে এখন যে করেই হোক টানা তিনটি ম্যাচেই জিততে হবে। সঙ্গে বাংলাদেশের ওপরে থাকা ইংল্যান্ড (৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট), অস্ট্রেলিয়া (৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট), নিউজিল্যান্ড (৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট) ও ভারতের (৪ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট) মধ্যকার যে কোন একটি বা দুটি দল যদি হারতে থাকে। অথবা নিউজিল্যান্ড একটি, ভারত দুটি ম্যাচের বেশি না জিতে তাহলেই বাংলাদেশের সেরা চারে স্থান হতে পারে। বাংলাদেশের নিচে থাকা শ্রীলঙ্কা (৬ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৫ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট), দক্ষিণ আফ্রিকা (৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট), পাকিস্তান (৫ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট), আফগানিস্তানকে (৫ ম্যাচে ০ পয়েন্ট) নিয়ে অবশ্য বিশেষ চিন্তা নেই। বাংলাদেশ এখন সোমবার সাউদাম্পটনের দ্য রোজ বোলে আফগানিস্তান, ২ জুলাই বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ভারত ও ৫ জুলাই লন্ডনের লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে। এই ম্যাচগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার আশা আছে। ভারতকেই শুধু হারানো কঠিন। সেই কঠিন কাজটিও সহজে করে ফেলা গেলেই হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১ রানে জিতে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করে বাংলাদেশ। এরপর নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু আগে ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ডে (২৪৪ রান) কম রান যোগ করায় শেষ পর্যন্ত আর জেতা যায়নি। তবে লড়াই করে হারে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ইংলিশরা যখন ৩৮৬ রান করে ফেলে, সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ২৮০ রান করতেই অলআউট হয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি যেভাবে হারে বাংলাদেশ তাতে দলকে নিয়ে ভাবনা তৈরি হয়। সেমিফাইনালে খেলার আশা কী তাহলে শেষ? এমন প্রশ্নও ওঠে। এরপর যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিতে বৃষ্টি হয় এবং তাতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয় তখন হতাশাই যুক্ত হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতার আশা ছিল। জেতার সম্ভাবনাময় ম্যাচও ছিল। কিন্তু বৃষ্টি ম্যাচই হতে দিল না। তাতে ২ পয়েন্ট পাওয়ার আশায় হতাশা যুক্ত হয়। বাংলাদেশ যে প্রতি তিন ম্যাচ করে পরিকল্পনা সাজিয়েছিল তাতেও আফসোস যুক্ত হয়। প্রথম তিন ম্যাচের একটি (দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড), পরের তিন ম্যাচে দুটি (শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া), শেষের তিন ম্যাচের দুটি (আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান) জেতার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রথম তিন ম্যাচে প্রোটিয়াদের হারানো গেছে। দ্বিতীয় তিন ম্যাচের দুটি যে জেতার আশা ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। খেলারই সুযোগ মিলেনি। সেখানেই আসলে বাংলাদেশের সেমির স্বপ্নে আঘাত এসেছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর আশা ঠিকই পূরণ হয়েছে। ৫১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ধাপের তিন ম্যাচের তিনটি শেষ হয়েছে। এখন শেষের তিন ম্যাচের দুটিতে জেতার যে আশা ছিল সেটি তিন জয়ে পরিণত করতে হবে। এখন যে তিন ম্যাচ (আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান) আছে, এর মধ্যে তিন জয় পাওয়া কঠিন! তবে অসম্ভব নয়। বাংলাদেশ সেই সম্ভব কাজটি করে ফেললেই সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ মিলতে পারে। ইংল্যান্ডের সামনে কঠিন প্রতিপক্ষ (অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড) আছে। অস্ট্রেলিয়ার সামনে সহজ-কঠিন প্রতিপক্ষ (ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা) মিলিয়ে আছে। নিউজিল্যান্ডের সামনে আছে কঠিন প্রতিপক্ষ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড)। ভারতের সামনে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ (আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা) আছে। যে দলগুলো এখন বাংলাদেশের ওপরে আছে, নিউজিল্যান্ডের বেশি হারের সম্ভাবনা থাকছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে পেছনে ফেলা কঠিন। নিউজিল্যান্ডই তাই টার্গেট থাকছে। বাংলাদেশের ওপরে থাকা দলগুলোর নিজেদের মধ্যে খেলাও আছে। আর এখানেই বাংলাদেশের ভাল সুযোগ থাকছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধে ফুরফুরে মেজাজে থাকা টাইগাররা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৮২ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ১০২ রানে যে লড়াই করেছে, নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোর (৩৩৩) করেছে, তাতে সামনে যে দলগুলো আছে তাদের হারাতেও পারে বাংলাদেশ। টানা তিন ম্যাচেই জেতা গেলে পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে বাংলাদেশকে দেখাও যেতে পারে। কঠিন হলেও সেই চার নম্বরে থাকার, সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন মাশরাফিরাও দেখছেন।
×