ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিরাট-আমিরের অন্য এক লড়াই

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৬ জুন ২০১৯

 বিরাট-আমিরের অন্য এক লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার বিশ্বকাপ খেলাটা অনিশ্চিত ছিল তার। কারণ, দীর্ঘদিনের ফর্মহীনতা। তবে সুযোগ পেয়ে জ্বলে উঠেছেন। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নবজন্ম লাভ করেছেন বাঁহাতি পেসার মোহাম্মদ আমির। গতির লড়াইয়ে অন্য সব পেসারের চেয়ে এগিয়ে এই মুহূর্তে তিনি। ৩ ম্যাচ খেলেই ১০ উইকেট শিকার করে এই মুহূর্তে চলমান বিশ্বকাপে সবার সেরা অবস্থানে আমির। আজ তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। কারণ তার দল পাকিস্তানের চরম শত্রু ভারতের সঙ্গে লড়াই আজ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। যার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪ ওয়ানডেতে বোলিং করার সুযোগ পেয়েছেন আমির এবং মাত্র একবার কোহলির উইকেট নিতে পেরেছেন। অর্থাৎ আমিরের বিপক্ষে রেকর্ডটা বেশ ভাল কোহলির। তবে আমির যে ম্যাচগুলো খেলেছেন সেই ম্যাচগুলোয় ব্যাট হাতে একেবারেই ভাল করতে পারেননি কোহলি। আর সর্বশেষবার যে মোকাবেলা দু’জনের হয়েছে তা ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের মাঠ দ্য ওভালে। সেখানেই কোহলিকে প্রথম বধ করেছিলেন আমির। ৫ রানে কোহলি আউট হন এবং শিরোপা জেতে পাকরা। সেই জ্বালাটা ভুলে আজ আমিরের বিপক্ষে দারুণ কিছুই করতে চাইবেন কোহলি। দুই বছর পর সেই ইংল্যান্ডেই ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চ বিশ্বকাপে এবার ম্যানচেস্টারে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন দুই তারকা। এই মুহূর্তে পাকিস্তান দলের যদি বিশ্বকাপের সেরা এবং সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার মতো ক্রিকেটার থেকে থাকেন, তিনি অবশ্যই আমির। ব্যাটিং-বোলিংয়ে দলের অন্যদের তেমন ধারাবাহিকতা না থাকলেও আমির দুরন্ত গতিতেই ছুটে চলেছেন। শনিবার বিশ্বকাপের দুই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত যে ৩ ম্যাচ বোলিং করেছেন তাতেই সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন ১০ উইকেট নিয়ে। সেরা ৫ উইকেটশিকারীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনি¤œ ওভার (২৬ ওভার) বোলিং করে সর্বাধিক উইকেট আমিরের। আর এ সময় পর্যন্ত সেরা বোলিং ফিগারও তার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম ম্যাচটি ব্যাটিং দুর্গতির পরও আমিরের বোলিং ছিল সবচেয়ে আলোচিত। ৬ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন আগুন ঝরানো বোলিংয়ে। তখন সবাই একটি কথাই মনে করেছেন, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, বাট ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট!’ এমনটা আমিরের বোলিং দেখে চিন্তা করাটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ, উইন্ডিজের বিপক্ষে নটিংহ্যামের ম্যাচটিতে আমির নামার আগে টানা ১৪ ওয়ানডে খেলে মাত্র ৫ উইকেট দখলে নিতে পেরেছিলেন। কোন ম্যাচেই একাধিক উইকেট পাননি। আর সেজন্যই তাকে বিশ্বকাপের ‘আপাতত’ ঘোষিত দল থেকে বাদ রাখা হয়েছিল। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে খেলার জন্য এ পেসারকে স্কোয়াডে রাখে পাক নির্বাচকরা। সেখানেও আমির খেলতে না পারায় তার বিশ্বকাপ স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে বসেছিল। কিন্তু অনেক সাবেক ক্রিকেটারদের চাপে এবং ওই ওয়ানডে সিরিজে অন্য পেসারদের বেহাল অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত আমিরকে নেয়া হয়। আর সেই আমির দেখিয়েছেন বড় মঞ্চের তারকা তিনি। ক্যারিবীয় ও অসিদের বিপক্ষে আমির যে আগুনের মতো গোলা ছুড়েছেন, তাতে অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন পাকদের জন্য। এবার ভারতের বিরুদ্ধেও তেমনটাই আশা করবে তারা। অবশ্য এখন পর্যন্ত মাত্র ৬ ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন আমির ভারতের বিরুদ্ধে। নিতে পেরেছেন মাত্র ৫ উইকেট। ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে নেমেই চমকে দিয়েছিলেন তার পেসে। নিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকর ও ইউসুফ পাঠানের উইকেট। সে ম্যাচটি জিতেছিল পাকরা। এরপর ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন- কোহলি, রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের উইকেট শুরুতেই তুলে নিয়ে মেরুদ- ভেঙ্গে দিয়েছিলেন ভারতের এবং শিরোপা জয় করে পাকরা। অবশ্য একই আসরের প্রাথমিক রাউন্ডে বার্মিংহ্যামে হওয়া দু’দলের লড়াইয়ে আমির ৮.১ ওভার বোলিং করে মাত্র ৩২ রান দিলেও ছিলেন উইকেটশূন্য। অর্থাৎ বড় মঞ্চে আমির অন্য যেকোন দলের মতোই ভারতের বিপক্ষে দুর্বার। কারণ, বাকি ৪ ম্যাচেই তিনি ভারতের বিপক্ষে উইকেট নিতে পারেননি। আর কোহলির বিরুদ্ধে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৪ ম্যাচে। একবারই মাত্র ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরাতে পেরেছেন। চলতি আসরে দুরন্ত আমির যে বিধ্বংসী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন, তাতে আজ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে পাকদের অন্যতম ভরসা আমিরই। কোহলির ওয়ানডে রেকর্ড অনেক আগে থেকেই বলছে তিনি ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বকালের সেরা হয়ে উঠবেন। শচীন, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো তারকাদের বিদায়ের পর ভারতীয় ব্যাটিংয়ে সেটার কোন ছাপই পড়তে দেননি কোহলি। এই মুহূর্তে তিনিই বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান তা নিশ্চিতভাবেই স্বীকার্য বিষয়। ওয়ানডেতে ৫৯.৪৭ গড়ে রাত তুলেছেন তিনি। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে তেমন ধারাবাহিকভাবে জ্বলে ওঠেনি কোহলির ব্যাট। ১২ ওয়ানডেতে পাকদের বিপক্ষে ব্যাট করে ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফসেঞ্চুরিসহ তিনি ৪৫.৯০ গড়ে করেছেন ৪৫৯ রান। এর মধ্যে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে ব্যাটিং করেছিলেন ২০১২ সালের এশিয়া কাপে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেদিন তিনি খেলেছিলেন ১৪৮ বলে ২২ চার, ১ ছক্কায় ১৮৩ রানের ইনিংস। এখন পর্যন্ত এটিই ওয়ানডেতে কোহলির ব্যক্তিগত সেরা। অর্থাৎ পাকদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে যেদিন জ্বলে ওঠেন সেদিন স্মরণীয় কিছুই করে বসেন। অবশ্য, সেই ম্যাচে ছিলেন না আমির। আমির খেলেছেন এমন ম্যাচে কোহলির ৪ ম্যাচে রান- ১৬, ১৮, ৮১* ও ৫! ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বের ম্যাচে কোহলি পাকদের বিপক্ষে মাত্র ৬৮ বলে অপরাজিত ৮১ রানের ইনিংস খেলে দলকে সহজ জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। সে ম্যাচে আমিরকে যথেষ্ট সমীহ করেই খেলেছেন কোহলি। কিন্তু বাকিদের ব্যর্থতাই ম্লান করে দিয়েছিল আমিরকেও। আর ফাইনালে সেটার শোধ তুলেছিলেন আমির কোহলিকে মাত্র ৫ রানে আউট করে। সাজঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে শিরোপা হারানোর সেই জ্বালাটা ভোলেননি হয়তো কোহলি। তাই আজ দুরন্ত আমিরের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে উন্মুখ থাকবেন কোহলি। ভারতের অধিনায়কই তো তাদের ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা। আর পাকদের বিপক্ষে ক্যারিয়ার রেকর্ডের চেয়ে ব্যাটিং রেকর্ডটা বাজে থাকার বৃত্তটাও কাটিয়ে উঠবেন কোহলি এটা ভারতীয়দের অন্যতম প্রত্যাশা।
×