ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ড কেন হট ফেবারিট!

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ২২ মে ২০১৯

ইংল্যান্ড কেন হট ফেবারিট!

২০১৫ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর থেকেই ওয়ানডেতে অন্য এক দলে পরিণত হয়েছে ইয়ন মরগান বাহিনী। ব্যর্থতাকে পেছনে ফেলে বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিয়ের এক নম্বরে তারা। ৩০ মে ঘরের মাটিতে সেরা হিসেবে ১২তম বিশ্বকাপে মাঠে নামবে ইংলিশরা। বিশ্লেষক থেকে সমর্থক, সাবেক থেকে বর্তমান- সবার মুখে ইংল্যান্ড। কারণটা অনুমেয়। গত বিশ্বকাপে সেই ভরাডুবির পর খোলনলচে বদলে আগ্রাসী ক্রিকেটের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন ইয়ন মরগান, জো রট, বেন স্টোকসরা। এবার ঘরের মাটিতে তারা খেলতে নামছে ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল হিসেবে। অধরা শিরোপার স্বপ্নে বিভোর গোটা ব্রিটেনবাসী। আর কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর প্রত্যাশার চাপ সামলে ইতিহাসের সেরা সাফল্য তুলে নিতে আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক মরগান। সেরা সাফল্য মানে কিন্তু শিরোপাই! কারণ এর আগে তিন-তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও সেরার মুকুট পরা হয়নি ইংলিশদের। ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইংল্যান্ডে। স্বাগতিক হয়ে ফেবারিটের তকমা গায়ে ছিল ইংলিশদের। কিন্তু কার্ডিফের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় মরগানের দল। এবারও ফেবারিটের তকমা ইংল্যান্ডের কপালে। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২Ñ তিন বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জয় করা হয়নি ইংল্যান্ডের। তিন ফাইনালে হার যথাক্রমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের কাছে। এবার সেই বন্ধ্যত্ব ঘোচাতে চায় ইংলিশরা। দেশের মাটিতে খেলার সুবিধা নিয়ে ১২তম আসরে এসে এবার প্রথমবারের মতো শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে মরিয়া তারা। আর গেল তিন বছর ধরে ওয়ানডেতে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স তাদের সেই স্বপ্নটাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। এখন চাপ সামলে নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলেই হয়। আয়োজক হওয়ায় ইংল্যান্ডের জন্য বিশ্বকাপটা বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সেনাপতি মরগান। ৩০ মে উদ্বোধনী দিনেই শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মিশন শুরু করবে ইংলিশরা। গত বিশ্বকাপের পর থেকে যে অবিশ্বাস্য প্রভাব তারা দেখিয়েছে, তাতে তাদেরকে ফেবারিট মনে না করাই হবে মস্ত বড় বোকামি। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড ওয়ানডে খেলেছে ৯১টি। এর মধ্যে তারা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ৫৯টি ম্যাচে! বাকি ম্যাচগুলোর মধ্যে একটি টাই হয়েছে এবং ছয়টিতে কোন ফল আসেনি। গত বিশ্বকাপের পর থেকে আর কোন দলের সাফল্যের হার এত চমকপ্রদ নয়। ইংল্যান্ডকে এমন সাফল্যের পেছনে তাতিয়ে দিয়েছে সম্ভবত গত বিশ্বকাপের ব্যর্থতা। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ থেকে তারা ছিটকে পড়ে বাংলাদেশের কাছে হেরে। রুবেল হোসেনের অসাধারণ বোলিংয়ে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা ২৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি; গুটিয়ে গিয়েছিল ২৬০ রানে। ওই হারের ধ্বংসস্তূপ থেকেই যেন ফিনিক্স পাখির প্রাণ নিয়ে ইংলিশদের ওয়ানডে ক্রিকেটের পুনর্জন্ম ঘটেছে। না, কথাটা একদমই বাড়াবাড়ি কিছু নয়। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩৯ বার ৩০০ বা এর চেয়ে বেশি রান করে ইংল্যান্ড তা প্রমাণ করেছে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ৩০০ বা এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডও ইংলিশদেরই। রেকর্ডবুক বলছে, গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট সাতবার ৩০০ বা এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জিতেছে ইংল্যান্ড। অন্য কোন দলের তিনবারের বেশি এই কীর্তি নেই। এই সময়ের মধ্যে দুইবার চারশর বেশি রান করার কীর্তিও আছে তাদের। বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ আসরের প্রতিটিতেই সেমিফাইনাল খেলেছে ইংলিশরা। এর মধ্যে তিনবার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াই- ফাইনালেও পড়েছে তাদের পদচিহ্ন। কিন্তু দুর্ভাগা ইংলিশরা একবারও ছুঁয়ে দেখতে পারেনি বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের শিরোপা। সেই দুঃসহ অতীত ভুলে, ইতিহাসের অচলায়তন ভেঙে এবার বেরিয়ে আসতে চান মরগ্যান ও তার সতীর্থরা। তাদের এই চাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে বড় শক্তি নিঃসন্দেহে তাদের ব্যাটসম্যানরা। পরিসংখ্যান বলছে, গত বিশ্বকাপের পর থেকে যে ১০ ব্যাটসম্যান ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন, তাদের মধ্যে তিনজনই ইংলিশ। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান জো রুটের। গত বিশ্বকাপের পর খেলা ৭৬ ম্যাচে ৩৩৩৫ রান করেছেন তিনি। সঙ্গে ছিল ১০টি সেঞ্চুরি এবং ২১টি হাফ সেঞ্চুরি। এই সময়ে তার চেয়ে বেশি রান এসেছে কেবল ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে। এ ছাড়া মরগান ও জেসন রয়ও আছেন এই তালিকায়। তাদের সংগ্রহ যথাক্রমে ২৯৪৬ ও ২৮৮৪ রান। এই তিনজনই মূলত ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনের শিরদাঁড়া। তাদের ব্যাটে যত বেশি রানের দেখা পাবে ইংলিশরা, ম্যাচ শেষের হাসি ততোই প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে তাদের ঠোঁটে। একই সময়ে বল হাতে যারা বিশ্ব শাসন করেছেন, তাদের মধ্যে এক নম্বরে আদিল রশিদ। ইংলিশ এই স্পিনার গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮১ ম্যাচ খেলে ১২৭টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। সেরা দশে থাকা লিয়াম প্লাঙ্কেটও ছিলেন অসাধারণ। ৫৩ ম্যাচ তার শিকার মোট ৮৫টি উইকেট। এই পাঁচজন যদি ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়ের প্রধান ভরসা হন, তবে পার্শ্ব চরিত্রে আছেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডাররা। ধারণা করা হয়, অলরাউন্ডারদের কাঁধে ভর করেই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অচেনা স্বাদ পেতে পারে ইংল্যান্ড। সেই অলরাউন্ডারদের তালিকায় আছেন বেন স্টোকস, মঈন আলি ও ক্রিস ওকসের মতো পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ তারকারা। এদের বাইরে জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, জো ডেনলি বা মার্ক উডরাও নিজেদের দিনে প্রতিপক্ষের জন্য মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হতে পারেন। সব মিলিয়ে বিশ্ব জয়ের সমস্ত রসদই আছে স্বাগতিকদের ভা ারে। এখন তাদের প্রার্থনা কেবল ২২ গজে নিজেদের উজাড় করে দেয়া। ইংলিশরা যদি সেই কাজটা ঠিকঠাক করতে পারে, তাহলে তাদের ঘরের মাঠে অন্য ক্রিকেট পরাশক্তিদের খুব বেশি বড় স্বপ্ন না দেখাই ভাল। ইংল্যান্ডের শক্তির ভা ার আরও ভরপুর হয়ে উঠতে পারত এ্যালেক্স থাকলে। কিন্তু বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপের ঠিক আগে দুই দুইবার ডোপ টেস্টে পজেটিভ প্রমাণিত হয়েছেন। ফলে এক রকম বাধ্য হয়েই তাকে বাইরে রেখে মাঠে নামতে হবে ইংলিশদের। এ্যালেক্স হেলসের অভাব অবশ্য অপূরণীয় থাকার আশঙ্কা খুবই কম! একটা তথ্য দিয়ে রাখা ভাল, শেষ দুই বিশ্বকাপ জিতেছে স্বাগতিক দল। ২০১১ সালে ভারত, ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া। এবার কি তাহলে সিংহের ঘরেই যাবে বিশ্বকাপের মুকুট! অধিনায়ক মরগান যা বলছেন এক কথায় তার সারমর্ম, ‘নিজ দেশে ফেভারিটের ট্যাগ, এখন চাপমুক্ত থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার বিশ্বাস এবার আমরা সেরা সাফল্য পাব। বিশ্বকাপ নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত।’ স্বপ্নে বিভোর মরগানের কাছে চাপজয় করে সামর্থ্যরে সেরাটা দেয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, ‘দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলার চাপ অবশ্যই থাকবে। তবে আমরা সেই চাপ নিতে প্রস্তুত। গত তিন বছরে আমরা অনেক পরিপক্ব হয়েছি। তাই চাপমুক্ত হয়ে দল ভাল খেলতে পারবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে প্রায় সব সিরিজেই আমাদের গায়ে ফেবারিটের তকমা ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আমরা সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলাম। এরপর প্রত্যক সিরিজে ফেবারিট তকমা নিয়ে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এখন ছেলেরা ফেবারিট বা আমরাই সেরা এসব নিয়ে ভাবে না। প্রতিটি ম্যাচেই জিততে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে।’ মরগান বলেন, ‘ফেবারিট তকমার সঙ্গে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্বকাপের জন্য ভালভাবে নিজেদের প্রস্তুত করা এবং ভাল পারফরর্মেন্স করা।’ কয়েক বছরে নিজেদের খেলার কৌশল পাল্টে সাফল্য পাওয়ায় খুশি মরগান, ‘গত কয়েক বছরে আমাদের খেলার কৌশল বিকশিত হয়েছে। আমার অনেক পরিবর্তন করেছি। খুব আগ্রাসী খেলতাম আমরা। সেখান থেকে কিছুটা সরে এসেছি। এখন ইতিবাচক, পরিকল্পনামাফিক ও প্রাণবন্ত ক্রিকেট খেলি আমরা।’
×