ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বত্য জেলায় তিন স্থলবন্দর নির্মাণ জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৪ মে ২০১৯

 পার্বত্য জেলায় তিন স্থলবন্দর নির্মাণ জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এ তিন পার্বত্য জেলায় ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকার গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন থমকে আছে। একটিতে কাজ শুরু হলেও তা চলছে একেবারে ধীর গতিতে। পার্বত্য এ তিন জেলায় স্থলবন্দর নির্মাণে বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে ১১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তিন স্থলবন্দর নির্মিত হলে পাহাড়ের অর্থনীতি বদলে যাবে। পাশাপাশি হবে কর্মসংস্থান। অথচ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটিতে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হলেও অন্য দুটিতে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে আদৌ সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার তেগামুখ ও ভারতের মিজোরামের দেমাগ্রি এলাকার মধ্যে একটি, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও মিয়ানমারের তুমব্রুর মধ্যে একটি এবং খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুমের মধ্যে একটিসহ মোট তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় দীর্ঘ ছয় বছর আগে। তিনটির মধ্যে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয় ২০১০ সালের ৭ নবেম্বর। এ স্থলবন্দর নির্মাণ সংক্রান্তে গৃহীত প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনও পেয়েছে। রামগড় থেকে সাবরুমের মধ্যবর্তী স্থানের সীমানা লাইনে রয়েছে খরস্রোতা ফেনী নদী। এ নদীর ওপর ব্রিজ বা এপ্রোচ সড়ক নেই। বিকল্প কোন যোগাযোগও নেই। ২০১৬ সালে স্থলবন্দরটি চালুর কথা থাকলেও তা সময়ের পরিক্রমায় নিয়মানুযায়ী এগোচ্ছে না। সরকারী সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার তিন স্থলবন্দর পরিপূর্ণভাবে চালু হলে উভয় দেশের কিছু পণ্য আমদানি-রফতানির আওতায় আসবে। যার মধ্যে রয়েছে প্রসাধন সামগ্রী, মেলামাইন পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, সিরামিক, প্লাস্টিক পানির ট্যাঙ্ক, এ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, টিউবওয়েল, প্লাস্টিক সামগ্রী, ওষুধ, কাঠ, চুনাপাথর, বাঁশ, মাছ ইত্যাদি। সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটির বরকলের তেগামুখ ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের স্থলবন্দর নির্মাণে এখনও জমি অধিগ্রহণ করাও সম্ভব হয়নি আইনগত জটিলতার কারণে। রাঙ্গামাটির বরকল থেকে তেগামুখের দূরত্ব সর্বোচ্চ দেড় শ’ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙ্গামাটি সদর হয়ে বরকলের তেগামুখ পর্যন্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অপরদিকে, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম থেকে মিয়ানমারের তুমব্রুর দূরত্ব সাড়ে ৩ কিলোমিটার। পক্ষান্তরে ঘুমধুম থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। মাঝখানে রয়েছে নাফ নদীর একটি শাখা, যেটি একটি খাল। খালটির ওপর ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। এশিয়ান হাইওয়ের আওতায় এ সড়কটি নির্মিত। সেনা তত্ত্বাবধানে এ সড়কের নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। যা সরকার বরাদ্দ দিয়েছে। জটিলতার কারণে বহু আগেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জানানো হয়েছিল, জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কিছু জটিলতা রয়েছে, যা শীঘ্রই কেটে যাবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জটিলতা কাটছে না। রামগড় স্থলবন্দর একনেক অনুমোদন দিলেও বাকি দুটির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন অনুমোদন মেলেনি। যে কারণে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণে সরকারের ভাল একটি উদ্যোগ স্থবির হয়ে আছে। এ বিষয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মূলত জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণেই এ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থমকে আছে।
×