ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুনাজ আহমেদ নূর

ভবনের অগ্নিনিরাপত্তায় প্রস্তাবনা

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১১ মে ২০১৯

 ভবনের অগ্নিনিরাপত্তায় প্রস্তাবনা

সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বেশ কয়েকটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই অগ্নিকান্ডে বড় ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি ঘটেছে প্রাণহানি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও বড় বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। গত ১৫ এপ্রিল প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রালেও ঘটেছে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। আগুনে পুড়ে ৮৫০ বছর বয়সী ভবনটির ছাদ ও প্রধান চূড়া ভেঙ্গে গেছে। শুধু প্যারিসের নটরডেম ক্যাথেড্রাল নয় আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও প্রতি ঘণ্টায় ২৪টি স্ট্রাকচারে আগুনের সূত্রপাত হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর শুধু যুক্তরাজ্যে আগুনে মারা যায় প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার) লোক। আহত হয় ১৮০০০ (আঠার হাজার) ১০০ জন ফায়ার ফাইটার মারা যায় এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নষ্ট হয়। আগুন হচ্ছে একটা টেক্ট্রাহের্ডন- হিট অক্সিজেন, ফুয়েল এবং এই তিনটির মধ্যে চেইন রিয়েকশনের ফলে আগুন জ্বলে। তবে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৬ পার্সেন্টের নিচে গেলে আগুন আর জ্বলে না। প্রকৃতির একটি অংশই হচ্ছে এই আগুন। আমাদের আশপাশে সব জায়গায় আগুন বিদ্যমান। সুতরাং যে কোন সময় যে কোন স্থানে হিট, ফুয়েল, অক্সিজেন এবং এদের মধ্যে চেইন রিয়েকশন হলে আগুন লাগতে পারে। অগ্নি দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে ভবন নির্মাণে আমরা ইঞ্জিনিয়াররা কোডের ব্যবহার করে থাকি। এই কোড হচ্ছে একটা সর্বনিম্ন রিকয়ারমেন্ট যে ভবন নির্মাণে এই কোডে উল্লেখ করা রিকোয়ারমেন্টের নিচে নামা যাবে না এবং এই কোডগুলোকে আমরা বলি প্রেসক্রিপশন বেজড কোড। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ৯৩ ভাগের মতো ভবন নির্মাণে প্রেসক্রিপশন বেজড কোডের সর্বনিম্ন রিকোয়ারমেন্ট মানা হয়নি। সম্প্র্রতি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা এবং বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকা-ের পর নড়েচড়ে বসেছে আমাদের প্রশাসন। যে সকল ভবন নির্মাণের সময় প্রেসক্রিপশন বেজড কোডে উল্লিখিত রিকয়ারমেন্ট মানা হয়নি তাদের বিরুদ্ধে রাজউকের অভিযান শুরু হয়েছে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, রাজউক আওতাধীন এলাকায় ২৫ লাখ ভবন রয়েছে। তার মধ্যে ছয়তলা পর্যন্ত ভবন আছে ২১ লাখ ৫০ হাজার। সাততলা থেকে ২৪-২৫ তলা পর্যন্ত ভবন আছে ৮৮ হাজার। রাজউকের বক্তব্য হচ্ছে এখন আর পিছু হটার কোন সুযোগ নেই। রাজউকের ২৪টা দল প্রতিদিন মাঠপর্যায়ে গিয়ে ভবনের সব ধরনের অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করছে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনিয়ম করে কোন ভবন কেউ টিকিয়ে রাখতে পারবে না। এখন কথা হচ্ছে, দেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ ভবন নির্মাণে যেখানে প্রেসক্রিপশন বেজড কোডের সর্বনিম্ন রিকোয়ারমেন্ট মানা হয়নি। সে সকল ভবন কি ভেঙ্গে ফেলা হবে? প্রায় ৯৩ শতাংশ ভবন ভেঙ্গে ফেলা হলে এতগুলো সম্পদের কি হবে? আবার প্রেসক্রিপশন বেজড কোড মেনে ভবন নির্মাণ করলেই যে ভবনের শতভাগ অগ্নিনিরাপত্তা থাকবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এখানে বিল্ডিংএ যারা বসবাস করে তাদের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অগ্নিনিরাপত্তার জন্য যে সব সরঞ্জামের কথা প্রেসক্রিপশন বেজড কোডে বলা আছে সেগুলো তারা কিভাবে ব্যবহার করছে সেটাও খুব গুরুতপূর্ণ বিষয়। তাই বিশ্ব এখন প্রেসক্রিপশন বেজড কোড থেকে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসতে চাইছে। তারা বলছে প্রেসক্রিপশন বেজড ডিজাইন থেকে যদি আমরা পারফরমেন্স বেজড ডিজাইনে চলে আসি তাহলে কেমন হবে। পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইনটা কি? পারফরমেন্স বেজড ডিজাইন হচ্ছে কিছু গোল নির্ধারণ করে সেগুলোকে প্রেরণ করা। যেটা কোন প্রেসক্রিপশনের ওপর ভিত্তি করে নয়। এটি নতুন বিল্ডিং এবং কোড নন কম্পলায়েন্ট পুরনো বিল্ডিংয়ের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। এই দুই প্রকারের বিল্ডিংয়ে যারা বসবাস করছে তাদের আগুন থেকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কিছু গোল সেট করাকেই বলা হচ্ছে পারফরমেন্স বেজড ডিজাইন। প্রেসক্রিপশন বেজড কোডের সঙ্গে পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইনের পার্থক্যটা আসলে কি? প্রেসক্রিপশন বেজড কোডের সঙ্গে পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইনের এক নম্বর পার্থক্য হচ্ছে প্রেসক্রিপশন বেজড কোড শুধু একটি পদ্ধতির কথা বলে দেয় কোন রিস্ক পর্যালোচনা করে না যে ভবনটি কতটুকু অগ্নি-ঝুঁকিতে আছে। ভবন কি হাই রিস্কে আছে নাকি লো রিস্কে আছে তার পর্যালোচনা করে না। কিন্তু পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইনে রিস্ক পর্যালোচনা করে সেই অনুযায়ী পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইন করে। দ্বিতীয় পার্থক্য হচ্ছে প্রেসক্রিপশন বেজড কোড শুধু সাধারণ ভবনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। আর পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইনে জেনরিক এবং নন জেনরিক বিল্ডিং উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়। পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইনের গোল কি কি? পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইন করতে হলে কিছু গোল মাথায় রাখতে হবে যেমন, লাইফ সেইফটি, এনভায়রনমেন্ট, বিল্ডিং অপারেশন, সিকিউরিটি, রিস্ক এসেসমেন্ট, রিস্ক এনালাইসিস, ওযার্কপ্রেস সেইফটি, কনটেন্ট, স্মোক কনট্রোল, কোন কোন ফ্লোরে আগুন লাগার ঝুঁকি আছে তা চিহ্নিত করা, মিশন প্রটেকশন দেয়া। পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইন কিভাবে সেট করব? যখন আগুন লাগে সেই আগুন তিনটি স্টেজে থাকে তার একটাকে আমরা বলি প্রি ফ্লাশ ওভার, আরেকটি হচ্ছে ফ্লাশ ওভার এবং অপরটি হচ্ছে পোস্ট ফ্লাশ ওভার। আগুন যখন পি ফ্লাশ ওভারে থাকে তখন মানুষ এবং সম্পদ বাঁচানো খুবই সহজ। যখনি আগুন ফ্লাশ ওভার এবং পোস্ট ফ্লাশ ওভারে চলে যায় তখন ভবনের ভিতরের মানুষদের বাঁচানো খুব কঠিন হয়ে যায়। সুতরাং যা করার প্রি ফ্লাশ ওভারেই করতে হবে। পৃথিবীব্যাপী যত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে তাতে দেখা গেছে পি ফ্লাশ ওভারে যখনই ফায়ার স্টিংগুইশ করা যায়নি তাতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর পি ফ্লাশ ওভারে যখনই এটাকে বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হয়েছে তখন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আগুন পি ফ্লাশ ওভারে থাকে খুবই অল্প সময় তিন থেকে ০৫ মিনিট। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পি ফ্লাশ ওভারে এত অল্প সময়ে কখনোই ফায়ার ব্রিগেড আসতে পারে না। তারা আসতে আসতে আগুন ফ্লাশ ওভার এবং পোস্ট ফ্লাশ ওভারে চলে যায়। তখন তাদের পক্ষে তখন মানুষ এবং সম্পদ রক্ষা কঠিন হয়ে যায়। আগুন ফ্লাশ ওভার এবং পোস্ট ফ্লাশ ওভারে চলে গেলে তখন ফায়ার ব্রিগেড এসে আগুনের গতি কমায়, আগুন যেন অন্যত্র না ছড়ায়, ধোঁয়াটা কিভাবে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেয়া যায় এগুলো তারা করার চেষ্টা করে এবং ঐ সময়ে ওটাই তাদের কাজ। ঐ সময়ে তাদের পক্ষে মানুষ বাঁচানো আর সম্পদ রক্ষা কোনটাই সম্ভব হয় না। পারফরমেন্স বেজড ফায়ার ডিজাইনে প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে যে আগুনের ইন্টিমেট কন্টাক্টে যারা থাকে তাদের বাঁচানো খুবই কঠিন। তার বাইরে সব মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। তারপর সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে যে বিল্ডিংটা ভেঙ্গে পড়বে কি-না এবং বিল্ডিংয়ের ভিতরে যে কনটেন্টগুলো আছে সেগুলো কতটা মূল্যবান? যদি বিল্ডিংটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হয়ে থাকে তাহলে সেখানে লাইফ সেফটির থেকে অনেক সময় ভেতরের সম্পদ রক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ বিল্ডিংটি যদি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হয়ে থাকে তাহলে সেখানে অনেক মূল্যবান শিল্প থাকতে পারে যা হারিয়ে গেলে এরা ইতিহাস হারিয়ে যাবে। তারপর দেখতে হবে বিল্ডিংয়ের মিশন প্রটেকশন যেমন বর্তমানে গুগল, ইয়াহু, ফেসবুকের মতো অনেক কোম্পানি আছে যারা তাদের সার্ভিস এক মিনিটের জন্যও বন্ধ রাখতে চায় না সে জন্য তাদের তৎপরতাও থাকে অনেক বেশি। তাই এটাও হতে পারে একটি গোল। তারপর পরিবেশে কতটুকু গোল নিবে? ধোঁয়াকে কতটুকু ছড়াতে দেব বা ধোঁয়া কতটুকু জায়গা দূষিত করতে পারে সেটাও একটা গোল। কারণ, ৭০ ভাগের মতো মানুষ মারা যায় ধোঁয়ায়। এই ধোঁয়া থেকে বাঁচতে ভবনে আগুন লাগার পর সবসময় চেষ্টা করতে হবে আগুন প্রি ফ্লাশ ওভারে থাকা অবস্থায় ০৩ থেকে ০৫ মিনিটের মধ্যে ভবনের নিচের দিকে নেমে আসার। কারণ, ধোঁয়া সবসময় উপরের দিকে উঠে। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার নেভাডা সিটির এমজিএম গ্যান্ড লার্জ বেগার নামের একটি হোটেলে ১৯৮০ সালে আগুনের সূত্রপাত হয়। এই আগুনে ৮৫ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ৬৫০ জন মানুষ আহত হয়। যখন আগুন লাগে তখন হোটেলে প্রায় ৫০০০ মানুষ অবস্থান করছিল। হোটেলটি ছিল ২৬ তলা। আগুনের সূত্রপাত হয় হোটেলের নিচ তলায়। যারা ইন্টিমেট কন্টাক্টে ছিল প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন তাদের সবাই মারা গেছে। নিচ তলায় আগুন লাগার কারণে তারা কেউ বের হতে পারছিল না তাদের বলা হয়েছে নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করতে। যারা নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করেছে তাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু হোটেলের ১৪ থেকে ২৪ তলার মধ্যে যারা উপরে ওঠার চেষ্টা করেছে তাদের সবাই মারা গেছে শুধু ধোঁয়ায়। তবে ছাদে গিয়ে পৌঁছাতে পারলে হয়ত বাঁচার সম্ভাবনা ছিল। আমাদের এখানে এফ আর টাওয়ারেও একি ঘটনা ঘটেছে। পত্রিকায় দেখলাম একজন মহিলা চেষ্টা করছে ১৪ তলা থেকে উপরের দিকে যাওয়ার। তাকে উপরের দিকে অর্থাৎ ছাদে যেতে বলা হয়েছিল। জানি না ১৪ তলায় থাকলে ঐ মহিলা বেঁচে থাকতে পারতেন কি না? কিন্তু তিনি ২১ তলা পর্যন্ত গিয়ে আর বাঁচতে পারেনি। কারণ, তিনি ছাদে পৌঁছাতে পারেনি। ২১ তলায় ওঠার পর ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তাই এই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। তারপর রিস্ক এনালাইসিস করতে হবে যে বিল্ডিংটা কতটা ঝুঁকিতে আছে যেমন প্রেসক্রিপশন বেজড কোডে বলা আছে আপনার সিঁড়ির প্রশস্ততা ৫ ফিট। কিন্তু ৫ ফিট সিঁড়ি করা সম্ভব হয়নি সিঁড়ি করা হয়েছে তিন ফিট। এখন এই তিন ফিটের জন্য কি আমার বিল্ডিং ভেঙ্গে ফেলে দেবে? এই তিন ফিট দিয়ে হয়ত ইভাকুয়েশন রেট স্লো হবে কিন্তু সেখানে যদি স্টেয়ারওয়েল পেশারাইজেন দেয়া হয় তাহলে মানুষ বের হয়ে আসতে পারবে। যে বিল্ডিংগুলো কোড নন-কম্পলায়েন্ট আছে সেগুলোকে পারফরমেন্স গোলে একটা স্টেজে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অকপ্রেন্সি এবং কনটেন্ট রিমুভ করে দিতে হবে। যেমন যদি কোন বিল্ডিংয়ে ১০০০ মানুষ থাকে পারফরমেন্স এনালাইসিস করে যদি দেখা যায় যে এখানে ৭০০ মানুষ থাকতে প্রারবে লাইফ সেইফটি বিবেচনায় তাহলে তাকে সেটা করে দেয়া যেতে প্রারে। তারপর কোন কোন ফ্লোরে আগুন লাগার সম্ভাবনা আছে রিস্ক এনালাইসিস করে ফায়ার স্মোক যেন ঐ ফ্লোরের এদিক ঐদিক না যেতে প্রারে। সেটাকে আমরা বলি জোনাল স্মোক কনট্রোল। আগুন ঐ ফ্লোরের মধ্যেই থাকবে অন্য কোথাও যাবে না। এটাও হতে পারে একটি পারফরমেন্স গোল। তবে এ-সব কিছুর পরও প্রতিটি বিল্ডিংয়ে একটা ডেজিগনেটেড ফায়ার মার্শাল রাখতে হবে এবং প্রত্যেকটা ব্যবসায়িক ভবনে যারা ব্যবসায়ী আছেন তাদের একটা করে সাব ফায়ার মার্শাল থাকবে। ঐ ফায়ার মার্শালের সব নলেজ থাকবে পি ফ্লাশ ওভারে কখন আগুন বন্ধ করতে হবে। তার সব জানা থাকবে ভবনের কোথায় কি আছে। কারণ, আগুন লাগার প্রর যথার্থ জ্ঞান না থাকলে অযথা দৌড়াদৌড়ি করে লাভ নেই। আগুন ফ্লাশ ওভারে যেতে ৩ থেকে ৫ মিনিট লাগে না যদি ফুয়েল থাকে। ফুয়েল না থাকলে তো এমনিতেই আগুন নিভে যাবে। ফুয়েল থাকলে সে ৫ মিনিটের মধ্যে ফ্ল্যাশ ওভারে চলে যাবে। সুতরাং এই ৫ মিনিটে সবকিছু জানা না থাকলে আপনার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে না আপনি কি করবেন। তাই এই ফায়ার মার্শালের প্রথম কাজ হবে কাজ হবে ভবনে যারা অবস্থান করছে তাদের জানানো আগুন লাগলে তাদের কি কি করতে হবে। ফায়ার মার্শালকে নিয়মিত ফায়ার ড্রিল করতে হবে যাতে ভবনের ভিতরে যারা অবস্থান করছেন তারা নিয়মিত অগ্নি-নিরাপত্তার বিষয়টি জানতে পারে এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়। আরেকটি যা করতে হবে তা হচ্ছে ফায়ার ডিজাইন বা ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এখন শুধু আর্কিটেক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, কিংবা ইলেক্টিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কাজ না এগুলো থেকে বিশ্ব এখন বের হয়ে এসেছে। ফায়ার প্রোটেকশন ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাচেলর অব সাইন্স ইন ফায়ার প্রোটেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এই বিষয়গুলো বিশ্বে এখন চালু হয়ে গেছে। আমাদের এখানে যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা আছে তারা এই বিষয় চালু করতে পারে। আজ থেকে চার বছর পরে হলেও-তো এরা বের হবে। বা দুই বছর পরেও ট্রেনিং দিয়ে কিছু বের করে দেয়া যেতে পারে। তাদের কাজ হবে সাইন্স এ্যান্ড টেকনোলজি ব্যবহার করে আগুন থেকে কিভাবে জনগণ, সম্পদ, পরিবেশ এবং অর্থনীতিকে রক্ষা করা যায়। তা না হলে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি খুব অল্প সময়ে আমরা মধ্যম আয় এবং সেখান থেকে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছে যাব। এখন অনেক হেজার্ড যেগুলো উন্নত বিশ্বের আছে আমাদেরও তা পোহাতে হবে। কিন্তু আমরা যদি এখন থেকে প্রস্তুতি নেই এবং এগুলো সবগুলো প্রয়োগ করি তাহলে আমরা একটি নিরাপ্রদ বাংলাদেশ পেয়ে যাব। লেখক : উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি
×