ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রজের সঙ্গে একদিন

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১০ মে ২০১৯

অগ্রজের সঙ্গে একদিন

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের ধারাবাহিক আড্ডার আয়োজন ‘অগ্রজের সঙ্গে একদিন’কে বলা যায় জীবন বিনিময়ের গল্প। এ বিনিময় সমসাময়িক অনুজ, নবীনের সঙ্গে প্রবীণের জীবন, কর্ম, অভিজ্ঞতা, ভাবনার বিনিময়। সাংবাদিকতার জগতে দিকপাল এক প্রবীণ যে আড্ডায় নিজেকে মেলে ধরেন, যোগ হয় জীবনে জীবন। এই ধারাবাহিক আয়োজনের তৃতীয় পর্বে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান। দীর্ঘ ছয় দশকের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তার সাংবাদিকতার জীবন সঙ্গে আছে সরকারের উচ্চপদে কাজ করার বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা। তিনি অনেক দেখেছেন। তবে তাঁর দেখা বোধকরি ব্যতিক্রম। এ জন্য বলছিÑ একটা পশ্চিমা প্রবাদ আছে, ‘তাকায় সবাই কিন্তু, সবাই দেখে না।’ অর্থাৎ ঘটনার তাৎপর্য আঁচ করতে পারেন না। তিনি শুধু দেখেন না, ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে জাত সাংবাদিকের মতো প্রকৃত চিত্রটি বিশ্লেষণ করতে পারেন। যাকে তিনি বলেছেন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা যা বদলে দিতে পারে সাংবাদিকতার ধারা। এখানেই তিনি অসাধারণ, অনন্য। আরেকটু এগিয়ে বলা যায় যা দেখেন, পড়েন তা স্মৃতিতে ধরে রাখার বিরল ক্ষমতার অধিকারী তিনি। একজন কর্ষিত মানুষ, ‘অগ্রজের সঙ্গে একদিন’ আড্ডা আয়োজনে তোয়াব খান যেমন তাঁর জীবনের কথা বলেছেন পাশাপাশি আলোচনা ও প্রশ্ন পর্বে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁর সমসাময়িক অনুজ ও নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা যাদের অনেকেই তাঁর হাতে তৈরি। আলোচনায় তারা তা স্বীকার করেছেন মুক্তকণ্ঠে। তিনি শুধু সাংবাদিক নন, সাংবাদিক তৈরির কারিগর। আর এভাবেই প্রচারের আলো এড়িয়ে চলা মানুষটি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন উত্তরসূরিদের মাঝে। এখানেই শেষ নয় ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনকে ধারণ করে পথ চলছেন। বোঝা যায় যখন তিনি বলেন, মিডিয়াতে ইন্টারমিডিয়েট টেকনোলজি বলে কোন জিনিস নেই। লেটেস্ট টেকনোলজি সব মিডিয়াকেই গ্রহণ করতে হয়, অন্যথায় আপনি পিছিয়ে পড়বেন। তবে টেকনোলজির প্রভাবে সংবাদপত্রের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে তা তিনি ভবিষ্যত চিন্তা বলে ছেড়ে দিলেও এ নিয়ে তার ভাবনাটা জানার আগ্রহ পাঠকের থেকেই গেল। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা প্রসঙ্গে তোয়াব খানের বক্তব্য স্পষ্ট উঠে এসেছে এই গ্রন্থেÑ আপনি যদি অন্যায়কে চিহ্নিত না করেন তাহলে ন্যায়কে আপনি বুঝতে পারবেন না এবং আপনাকে বলতে হলে পুরোটাই অর্থাৎ সম্পূর্ণ সত্য বলতে হবে।’ আরেকটি বিষয়, যা দেখব তাই লিখব, যা দেখিনি তা লিখব না। আর সাংবাদিকতায় একজন নতুনের প্রবেশের ক্ষেত্রে, রসিকতাচ্ছলে ধড়ের ওপর দুটো মাথা নেই বলে যে পরামর্শ দিয়েছেন তা বিবেচনায় নিলে আখেরে সাংবাদিকতাই উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস। পত্রিকার সম্পাদক ও সংবাদ কর্মীদের স্বার্থে ইউনিয়নের ভূমিকা কী হতে পারে তা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। নিজের সাংবাদিকতার শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে, উঠে এসেছে তাঁর ট্রেড ইউনিয়নের সংস্পর্শে আসার গল্প। তবে সে পথ যে তাঁর জন্য নয়, সেটি বুঝতেও বেশি সময় নেননি। সেটি আমাদের সৌভাগ্য। মুক্তিযুদ্ধের শব্দ সৈনিক তোয়াব খানের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না পাওয়াতে আলোচকদের যে ক্ষোভ ছিল তার একুশে পদক প্রাপ্তিতে নিশ্চিতভাবেই তা প্রমাণিত হয়েছে। তোয়াব খানের বিশাল কর্মময় জীবনের অনেক কিছুই এ গ্রন্থে উঠে এসেছে সঙ্গে কিছু অভিযোগ। প্রথম অভিযোগ তাঁর কলমের যে ক্ষমতা সে তুলনায় তিনি খুব কম লিখেছেন। সেটি হয়ত মেনে নেয়া যায় তার তৈরি লেখকদের কথা ভেবে। দ্বিতীয় অভিযোগটি গুরুতর, হাসান হাফিজের ভাষায় তা রীতিমতো ‘ফৌজদারি অপরাধ’ সেটি তার আত্মজীবনী না লেখা প্রসঙ্গে। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন, ‘এখন আমার মনে হয়, আমি যদি আগে থেকে ওখানে থাকতাম (বঙ্গবন্ধুর কাছে), তাহলে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে হয়তো অনেক ঘটনা অন্যভাবে ঘটত।’ আমরা জানি এখন অনেক ঘটনাই তার হৃদয়ে ও মস্তিষ্কের কোষে জমা। দীর্ঘ ছয় দশকের বেশি এক প্রবীণ কলমযোদ্ধার কাছে তা জানার দাবি পাঠক করতেই পারেন। এটি কিন্তু তারও দায়। তার দীর্ঘ জীবন ছোট দুই মলাটে ধরে রাখা অসম্ভব, তবু সে চেষ্টার জন্য বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
×