ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ মাহে রমাদানুল মুবারক ও সিয়াম

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ১০ মে ২০১৯

 প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ মাহে রমাদানুল মুবারক ও সিয়াম

মাহে রমাদানুল মুবারক ও সিয়ামের গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য অপরিসীম। মাহে রমাদানুল মুবারকের মাসব্যাপী সিয়াম পালন করাকে আল্লাহু জাল্লা শানুহু ফরয করে দিয়েছেন। কুরআন মজীদের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে কারীমা থেকে ১৮৭ নম্বর আয়াতে কারীমায় সিয়াম ফরয করে দেয়ার কারণে, রমাদান মাসকে কেন সিয়াম পালনের জন্য নির্ধারিত করা হলো তার কারণ, সিয়ামের উপকারিতা, যারা সফরজনিত কারণে, বার্ধক্যজনিত কারণে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে কিংবা কষ্টজনিত অন্য কোন কারণে রমাদানে সিয়াম পালন করতে না পারে তাদের তার পরিবর্তে কি করতে হবে সে সব বিধি ব্যবস্থা সেহরির সময়, ইফতারের সময়সহ অন্যান্য বিধি ব্যবস্থা ও নির্দেশনা ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে বিধৃত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য সিয়াম বিধান দেয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। এ সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। এটা যাদের জন্য অতি কষ্টদায়ক হয় তাদের জন্য এর পরিবর্তে ফিদ্্য়া হচ্ছে একজন অভাবগ্রস্তকে (মিসকিন) অন্নদান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্ত উত্তম কাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাটাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর যদি তা জানতে। রমাদান মাস, এতে নাযিল হয়েছে মানুষের দিশারী, হিদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য ও অসত্যের মধ্যে পার্থক্যকারী আল কুরআন। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস প্রত্যক্ষ করবে তারা যেন এতে সিয়াম পালন করে এবং কেউ পীড়িত থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ্্ তোমাদের জন্য যেটা সহজ সেটাই চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টের হয় তা চান না এজন্য যে, তোমরা তা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করেছেন সেজন্য তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং তোমরা যাতে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করতে পার (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৩-১৮৫)। ১৮৭ নম্বর আয়াতে কারিমায় ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালো রেখা ঊষার সাদা রেখারূপে তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে না ওঠে। অতঃপর নিশাগম (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আরব দেশে পূর্বকালেই আশুরার সিয়াম পালনরীতি চালু ছিল। মদিনা মনওয়ারায় হিজরত করে এসে প্রিয়নবী সাল্লালাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম জানতে পারলেন যে, সেখানকার ইহুদীরা আশুরার সিয়াম পালন করে আর তারা এটা এজন্য পালন করে যে, তাদের নবী মূসা আলায়হিস সালাম তাঁর কওম বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের বন্দীশালা থেকে উদ্ধার করে দরিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন, যে কারণে মুক্তির কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মূসা আলায়হিস সালাম আশুরাতে সিয়াম পালন করতেন। একথা জেনে প্রিয়নবী সাল্লালাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, মূসার ওপর তোমাদের চেয়ে আমার অধিকার বেশি। তারপর আশুরা এলে তিনি সিয়াম রাখলেন। সাহাবায়ে কেরামও সিয়াম পালন করলেন। এর সাত মাস পর দ্বিতীয় হিজরী মুতাবিক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্য শাবানে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু সিয়াম বিধান নাযিল করেন এবং রমাদান মাসকে সিয়াম পালনের মাস হিসেবে নির্ধারণ করে দেন। রমাদানের সিয়াম বিধান নাযিল হওয়ার কারণে আশুরার সিয়াম ঐচ্ছিক হয়ে যায়। হযরত আয়িশা সিদ্দিকা রাদি আল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত একখানি হাদিসে আছে যে, যখন রমাদানের সিয়াম ফরয করা হলো তখন আশুরার সিয়াম ছেড়ে দেয়া হলো। তখন থেকে তা হয়ে গেল যার ইচ্ছে হয় সে রাখতে পারে আর যার ইচ্ছে হয় ছেড়ে দিতে পারে (বুখারী শরীফ)। রমাদান মাসে কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে এ মাসটা সিয়ামের মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে তা উন্জিলা ফিহিল কুরআন এই কালাম দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, কুরআন মজীদ আল্লাহর কালাম। গোটা কুরআন মজীদকে আল্লাহ জাল্লা শানুহু লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত রাখেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে- বস্তুত এ সম্মানিত কুরআন লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত (সুরা বুরুজ আয়াত ২১-২২)। জানা যায়, হিজরতের বারো বছর পূর্বে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে অধিকাংশের মতে ২৭ রমাদান রাতে আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআন মজীদ নাযিল করেন। হযরত জিবরাঈল আলায়হিস সালাম তা বহন করে মক্কার হেরা গুহায় প্রিয়নবী সাল্লালাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট নিয়ে এসে বলেন, আপনি পড়ুন। তিনি বলেন : আমি পড়তে জানি না। এভাবে তিন তিনবার বাক্য বিনিময়ের পরে হযরত জিবরাঈল আলায়হিস সালাম প্রিয়নবী সাল্লালাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বুকে বুক রেখে চাপ দেন। তখন তাঁর সম্মুখে জ্ঞানরাজ্যের সকল দিগন্ত উন্মোচিত হয়ে যায়। তিনি কুরআন মজীদের পাঁচখানি আয়াতে কারীমা পাঠ করেন। সেই পাঁচখানি আয়াতে কারীমার বাংলা তরজমা এরূপ : পাঠ কর, তোমার রব্্-এর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তবিন্দু (আলাক) থেকে। পাঠ কর, আর তোমার রব্্ মহিমান্বিত, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না (সূরা আলাক : আয়াত ১-৫)। আরও জানা যায়, ঐ রাতেই কুরআন মজীদ প্রথম আসমানে সংরক্ষিত করা হয় এবং সেখান থেকে ২৩ বছর ধরে একে একে একটু একটু করে কুরআনের বিভিন্ন অংশ প্রিয়নবী সাল্লালাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট নাযিল করার মধ্য দিয়ে গোটা কুরআন মজীদ নাযিল হয়। চলবে...
×