ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অতিক্রম করবে লক্ষ্যমাত্রা

এবারও দেশে লবণের ঘাটতি হবে না

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ৬ এপ্রিল ২০১৯

এবারও দেশে  লবণের ঘাটতি  হবে না

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ লবণ উৎপাদনে ধুম চলছে। দেশে এবারও লবণের কোন ঘাটতি হবে না বলে আশা করা হচ্ছে। উৎপাদন মৌসুমের সময় রয়েছে আরও দু’মাস। ইতোমধ্যে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। এবার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও ১৮ লাখ টন। আর চলতি বছর লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে প্রায় পৌনে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প) কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ লবণ চাষী সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে লবণ উৎপাদনের মূল এলাকা পুরো কক্সবাজার জেলা। এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালীতেও লবণ মাঠ রয়েছে। কক্সবাজারের সাত উপজেলা কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেষখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উৎপাদন মৌসুমে লবণ উৎপাদিত হয়ে থাকে। গত কয়েক মৌসুম ধরে দেশের চাহিদা মিটিয়ে লবণ উদ্ধৃত্ত হয়ে আসছে। এরপরও বিদেশ থেকে লবণ আমদানির কারণে চাষীরা ন্যায্যমূল্য পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এবারের মৌসুম শেষ হওয়ার আগে যে পরিমাণ লবণ ইতোমধ্যে উৎপাদিত হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে ব্যাপক আশার সঞ্চার ঘটেছে। বিসিক কক্সবাজার অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি বছর দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয়েছে পৌনে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৬০ হাজার একর জমিতে ১২ লাখ ৫ হাজার ২শ’ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন মৌসুম শুরুতে বৃষ্টির কারণে কিছুদিন লবণ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এরপর অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় শুরু হয়ে যায় উৎপাদন এবং তা ভালভাবে এগিয়ে চলেছে, এক কথায় ধুম পড়েছে। মাঠের চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। তীব্র রোদের পাশাপাশি আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় লবণ উৎপাদন এবারও বিসিকের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ লবণ চাষী সমিতির সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে বিসিক নির্ধারিত সিংহভাগ লবণ উৎপাদিত হয়েছে। তাই ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই। অবশিষ্ট যে দু’মাস সময় হাতে রয়েছে এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। এবার প্রতি কানিতে ৮০ থেকে এক শ’ মণ লবণ উৎপাদিত হচ্ছে, যা বিগত সময়ের তুলনায় অনেকাংশে বেশি। তিনি জানান, দেশে ভোক্তা ও শিল্প পর্যায়ে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এতে মাঠ পর্যায়ে চাষীরা এবার ভাল দামও পাচ্ছেন। কিন্তু এরপরও বিগত সময়ের মতো আবার লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত হলে প্রান্তিক চাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অতীতে ঘাটতি দেখিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ঘটনা ঘটেছে। মিল মালিকদের পারমিট দিয়ে সরকার লবণ আমদানির প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। এতে পারমিট পাওয়ার প্রক্রিয়ায় অনৈতিক লেনদেন ও তেলেশমাতির নানা ঘটনা ঘটে। এরপরও বিদেশ থেকে লবণ আমদানি হয়ে আসে এবং দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের লবণ চাষীরা ক্ষতির শিকার হয়। এছাড়া খাবারের লবণের নামে দেশে সোডিয়াম সালফেটও আমদানি হয়ে আসে। এ সোডিয়াম সালফেট শুল্কমুক্ত। এটি সাধারণত পেপার মিল, টেক্সটাইল মিল, ডিটারজেন্ট, ডায়িং এজেন্ট ও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ কেমিক্যাল জাতীয় শিল্পে ব্যবহার হয়ে থাকে। অথচ, একটি দুষ্টচক্র এ সোডিয়াম সালফেটকে মনুষ্য খাবার লবণ হিসেবে বাজারজাত করে থাকে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বিসিক ও লবণ চাষী সমিতি সূত্রে এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
×