ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা বরদাশ্ত করব না

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৩ এপ্রিল ২০১৯

আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা বরদাশ্ত করব না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু টাকার অভাবে কোন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় না। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয় তার ব্যবস্থাপনার কারণে। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের প্রথম বার্ষিক ব্যবসা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তবে পদ্মা ব্যাংক আরও এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকটির পুরো ব্যবস্থাপনাকে সংস্কার করা হয়েছে। একটি দক্ষ টিম এর দায়িত্ব নিয়েছে। আশা করছি এটি ভাল করবে। পদ্মার ব্যবস্থাপনা ভাল করবে বলে আশা প্রকাশ করেন মুস্তাফা কামাল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। আগামী পাঁচ বছর সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, জীবনে প্রতিটি মানুষ এক বা দুটি সুযোগ পায় তেমনি দেশও সুযোগ পায়, এখন আমাদের সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আর পেছন দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। এ বছর আমাদের রেকর্ড পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। এখন ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্জন হয়েছে। আরও কয়েক মাস বাকি রয়েছে। আশা করছি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। এটি হবে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। আগামীতে আর কেউ অর্থ হারাবে না এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সবাই নিরাপদ থাকবে মন্তব্য করে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, প্লিজ ফর গড সেইক, আই উইল নেভার এ্যালাউ এনি মিস ম্যানেজমেন্ট, ডিসটরশন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই আমাদের প্রতিটি ব্যাংক ভালভাবে চলবে। আমরা চাই না কোন ব্যাংক ফল করুক। তারা নতুন প্রডাক্ট নিয়ে আসবে এবং ফাইন্যান্সিয়াল নিডগুলো মেটাবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসবে বলেও আশা করি। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির বলেন, রিকভারিতে মনোযোগ দিতে হবে, ঋণগুলোর ক্রেডিট কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোন বাহুল্য খরচ বাদ দিতে হবে পদ্মা ব্যাংকের জন্য। ব্যাংকের ইমেজ রক্ষার জন্য কোন চেক ডিসঅনার যেন না হয়, যদি তারল্য যদি মজুদ না থাকে তাহলে অন্য ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ব্যাংকের অর্থ লুটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী ও মানুষ নিজের মনে করে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যায়, এই প্রসেসটা চলতে দেয়া ঠিক হবে না। অত্যন্ত কঠোরভাবে তাদের ধরতে হবে। বেশ কিছু মানি লন্ডারিং মামলা আমাদের কাছে আছে যেগুলোকে আমরা আইনের আওতায় আনব। ব্যাংক ব্যবস্থায় বড় বড় ঋণ গ্রহীতারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শোধ করে না। পরবর্তীতে ইন্টারেস্ট মাফ করার সুযোগ নেয়, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ঋণ ফেরত না দেয়ার নিয়তে যারা টাকা নেন এবং টাকা দিবে না এমন জেনেও যারা ব্যাংক থেকে ঋণ দেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার এখনই সময়। তিনি বলেন, অনেক মানুষ আছে তারা ঋণ নেয় না দেয়ার নিয়ত করে। আর যারা ঋণ দেয় এ কথা জেনে যে এসব ব্যক্তি ঋণশোধ করবে না। তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, আমরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত সব সমস্যা থেকে বের হতে পেরেছি। খেলাপী ঋণ আদায়ের পাশাপাশি আমরা নতুন আমানত সংগ্রহ করেছি। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সততা, দক্ষতা আর নিষ্ঠায় যেন কোন খাদ না থাকে। গত মাসেই পদ্মা ব্যাংক নামে যাত্রা শুরু করা বেসরকারী এই ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে, ফারমার্স ব্যাংক নামে। প্রসঙ্গত, ঋণ কেলেঙ্কারিসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সরকারের হস্তক্ষেপে ডুবতে থাকা এই ব্যাংকটির বেশিরভাগ শেয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও আইসিবি কিনে নয়। পাশাপাশি পুরো ম্যানেজমেন্ট বদলে এখন নতুন নাম ও লোগো নিয়ে চলছে ব্যাংকটি। দেশব্যাপী ৫৭টি শাখা নিয়ে কাজ করছে পদ্মা ব্যাংক। অনুষ্ঠানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ এহসান খসরু বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ব্যাংকের কর্মকা-ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছি। নতুন ও আকর্ষণীয় প্রডাক্ট লঞ্চ করাসহ ব্যাংকের নানা বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা আছে, সেগুলো বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে আইসিবি চেয়ারম্যান মুজিব উদ্দিন আহমেদ, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুর রহমান পটোয়ারী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুস সালাম আজাদ, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান প্রধান, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. মুজিব উদ্দিন আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক।
×