ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পমেলায় গৃহস্থালি পণ্যের সমাহার

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১ এপ্রিল ২০১৯

 শিল্পমেলায় গৃহস্থালি পণ্যের সমাহার

সৈকত দত্ত ॥ মেলা শব্দটির মাঝে উৎসব মুখর একটা গন্ধ পাওয়া যায়। গন্ধ না পাওয়ার তো কিছু নেই। কারণ মেলা এলে যে ছোট বড় সবাই নানা রঙে-ঢঙে সেজেগুজে একত্রিত হওয়া যায়। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে বছর জুড়ে নানা ধরনের মেলা বসে, তবে রাজধানীতে মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার সংখ্যাটা বেশি। বাণিজ্যমেলা, বইমেলা, এসএমইমেলা, থাইমেলাসহ হরেক রকমের মেলা এই রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এই মহানগরীতে এ বছর প্রথম জাতীয় শিল্পমেলা শুরু হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় ঢাকঢোল পিটিয়ে রবিবার থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাত দিনব্যাপী শিল্পমেলার কার্যক্রম শুরু করেছে। গাড়ি, বাইক, পাটজাত পণ্যে, শাড়ি, থ্রী পিচ, নক্সিকাঁথা, হস্তশিল্পসহ হরেক রকমের পণ্যের পসরা নিয়ে আয়োজিত হচ্ছে জাতীয় শিল্পমেলা। দেশীয় উদ্যোক্তাদের নিজ হাতে তৈরি করা স্বদেশী পণ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। তাদের কারুকার্য দেখে যে কেউ থমকে যেতে পারে। থমকে যাওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। এদেশের হস্তশিল্পের যে কত কদর তা মেলাতে গেলেই বুঝতে পারা যায়। কী নেই মেলাতে! ফার্নিচার থেকে শুরু করে একটি বাসা সাজাতে যেসব পণ্যের দরকার পড়ে তার সবই শিল্পমেলার এক ছাদের নিচে পাওয়া যাচ্ছে। দেশে বাণিজ্যমেলা আয়োজিত হয়, তবে সেটা আন্তর্জাতিক মেলা বলে বিবেচিত। তাই ওই মেলাতে বিদেশী পণ্যের সমারোহ বেশি থাকে। দেশীয় পণ্যের তেমন কদর থাকে না বললেই চলে। এছাড়াও প্রতি বছর এসএমইমেলা আয়োজিত হয়, কিন্তু ওই মেলাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পণ্যে থাকে, বড় কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সে মেলাতে স্থান হয় না। অর্থাৎ শিল্পমেলার মাধ্যমে বড়, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে এই মেলা আয়োজিত হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব প্রতুল কুমার সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রসারের জন্য শিল্পমেলা আয়োজিত হচ্ছে। এই মেলার মাধ্যমে দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং শিল্পমেলার মাধ্যমে উদ্যোক্তার সঙ্গে ক্রেতাদের সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। এই মেলার মাধ্যমে দেশীয় অনেক পণ্য সম্পর্কে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা জানতে পারবে। দেশীয় যে কত রকমের পণ্য হতে পারে তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে চোখ ধাধানো সব দেশী পণ্যে যে কোন ক্রেতার মন জয় করতে পারবে। মেলাতে যেমন ৯০ লাখ টাকার প্রগতি ইন্ডাস্ট্রির দেশী গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি ৭০ টাকার পাটজাত পণ্যেরও দেখা মিলে। এই মেলাতে নিম্ন, উচ্চ এবং ধনী শ্রেণীর পছন্দের জিনিস ক্রয় করতে পারবে। এমন মেলা আয়োজন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে দেশের প্রথম পাট শিল্পের একমাত্র বেসরকারী পাট উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা পাটশালার কৃষি এবং গণমাধ্যমকর্মী চাষী মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, এই মেলার মাধ্যমে পাট হতে কত ধরনের পণ্যে তৈরি হতে পারে তা আমরা সবাইকে জানাতে পারব। পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই মেলার মাধ্যমে ব্যবহারের হার আরও বিক্রি পাবে। মূলত প্রচারের জন্য মেলাতে অংশগ্রহণ করেছি। বিক্রির চেয়েও পাট পণ্যের প্রচার করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। পাটশালার কথার প্রমাণও মিলে যায়। পাটের তৈরি হরেক রকমের পণ্যে যে কেউ হতবাক হয়ে যেতে পারে। পাটের ব্লেজার যে কত সুন্দর হতে পারে তা বলে শেষ করা যাবে না। চোখ ধাঁধানো সব পাটের ব্লেজারের মূল্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এছাড়াও পাটশালায় অনেক কম দামের পাটের পণ্যের সম্ভার আছে। পাটশালা ছাড়াও অনেক স্টলে পাটের পণ্যের দেখা পাওয়া যায়। একটি পাটের ব্যাগ ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। পাটের বিভিন্ন দ্রব্যে মধ্যে রয়েছে ঝুড়ি, স্যান্ডেল, টিসু বক্স, ছোট ব্যাগ, বড় ব্যাগসহ হরেক রকমের পাটের উপহার সামগ্রী । তবে পাট এবং চামড়ার মাধ্যমেও লেডিস ব্যাগের দেখা মিলে। বাহিরে চামড়া এবং ভেতরে পাট। দামও খুব বেশি না। ২৫০০ টাকার ভেতর লেডিস ব্যাগটি ক্রয় করা যাবে। দেশীও শাড়ি যে বিশ্ব বিখ্যাত তার প্রমাণ মিলে মেলার নানা শাড়ির স্টলে। নানা ধরনের দেশীয় উন্নত মানের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। মেলায় সিদ্দিক সিল্ক হাউসে, সিল্ক শাড়ি ১২০০ থেকে সাড়ে ৪৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও বিয়ের কাতানের দাম সাড়ে ৭ হাজার টাকা। সিদ্দিক সিল্ক হাউসের কর্ণধার শামীম আক্তার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা অনেক কম দামে ক্রেতাদের কাছে শাড়ি বিক্রি করে থাকি। শাড়ির মান অনেক ভাল। আমি নিজে শাড়ি তৈরি করে বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রি করি। আমার দামের চেয়ে দোকান ভেদে একটি শাড়ির মূল্য ৪০ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। তাই মেলার মাধ্যমে স্বল্প দামে ক্রেতারা উন্নত মানের শাড়ি ক্রয় করতে পারে। শিল্প মেলাতে অংশগ্রহণ করার প্রধান উদ্দেশ্য নিজের পণ্যের প্রচার বলে জানিয়েছেন সিদ্দিক। নক্সিকাঁথা ৩ থেকে ৪ হাজার এবং মনিপুরী শাড়ি ১ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। মেলাতে মাটির তৈরি হরেক রকমের পণ্যের দেখা পাওয়া যায়। ৬০ টাকা হতে ৩০০ টাকার মধ্যে মাটির তৈরি হরেক রকমের পণ্যে ক্রয় করা যাবে, তবে মাটির তৈরি ডিনার সেট ক্রয় করতে ৫০০ টাকা খরচ করতে হবে। এছাড়াও হারবাল পণ্যেও ক্রয় যাবে মেলা। ১৫০ টাকা হতে ১০০০ টাকার মধ্যে নানা ধরনের হারবাল পণ্যে পাওয়া যাচ্ছে। মেলাতে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পণ্যে দেখা যায়। গোল্ডেন ব্রয়লার কোম্পানি লিমিটেডের ব্রয়লার মেশিন ক্রয় করা যাবে, দাম ১২ লাখ টাকা। মেলা উপলক্ষে মেশিনের ওপর মূল্যছাড় থাকছে। এছাড়াও ওয়াল্টন বিভিন্ন পণ্যে বিক্রয় ও প্রদর্শন করছে। তবে তাদের মেলাতে অংশগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পণ্যের প্রচার বৃদ্ধি করা। দেশের একাধিক মোটরসাইকেল কোম্পানি মেলাতে অংশগ্রহণ করেছে। বাজাজ, হোন্ডা, টিভিএস, রানারসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের বাইক দেখা যায়। এক ছাদের নিচে এত প্রতিষ্ঠানের বাইক, এটা মোটরসাইকেল প্রেমিদের জন্য এটাও একটা সুখবর। পছন্দ করে যে কেউ মেলা হতে বাইক ক্রয় করতে পারবে। মেলাতে ঘুরতে ঘুরতে অন্য রকম এক স্টলের সন্ধান মিলে। শিল্প মেলাতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মুখ্য কর্মকর্তা সুজন চক্রবর্তী জনকণ্ঠকে বলেন, কৃষি ব্যাংক শিল্প প্রতিষ্ঠান খাতের লোন দিয়ে থাকে। মেলাতে কৃষির ব্যাংকের মাধ্যমে কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তার জানান দিতে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। সুদের হারও অনেক কম ৪ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে। এছাড়াও পাহাড়ী আদিবাসীদের জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদ হারের কৃষি ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করে থাকে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে শিল্পমেলার উদ্বোধনের মাধ্যমে সকল কার্যক্রম শুরু হয়। মেলাতে ৩০০টি স্টল রয়েছে। মেলাতে ৫২ শতাংশ নারীদের অংশগ্রহণ আছে। ৬ মার্চ শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলমান থাকবে। মেলাতে প্রবেশ করতে কোন প্রকার টিকেটের প্রয়োজন নেই। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×