ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দরিদ্র মানুষের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরী

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১ এপ্রিল ২০১৯

 দরিদ্র মানুষের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দরিদ্র মানুষের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরী বলে মন্তব্য করেছেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান। জনসেবা এবং সমাজসেবায় অবদানের জন্য ড. কাজী খলীকুজ্জমান স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রবিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) এটি অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ধনীরা নিজের ভাগেরটা তো ভোগ করেই এবং অন্যেরটাও কেড়ে নেয়। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ ছিল বৈষম্য দূর করা এবং মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার কথা। বৈষম্য দূর করতে টেকসই উন্নয়ন দরকার। মানুষকে কেন্দ্র করেই সবকিছুর সৃষ্টি, তাই যেখানে উৎপাদনশীলতা রয়েছে সেদিকে নজর দিতে হবে। পিকেএসএফের পুনর্ভাসনের মাধ্যমে অনেক ভিক্ষুক এখন সমাজে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করছে। দারিদ্র্য নিরসনে সবার প্রয়োজনীয়তা সমান নয়। দেশে ১৬টি দরিদ্র গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের সবার সমস্যা এক নয়। পিকেএসএফের অর্থ সহায়তা দেয়া হয় তাদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে। ফলে সেখানে সাপ্তাহিক কোন কিস্তির জামেলা নেই। যার কারণে অনেকেই ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রিন নিচ্ছে এবং তা ফেরত দিচ্ছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষিত মানুষও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না, আবার অশিক্ষিত মানুষও দেশের জন্য অনেক অবদান রাখছে। পড়াশুনা করেও অনেকে মানুষকে অত্যাচার করছে। তাই দরকার মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা। আমার কোন বাড়ি নেই, জমিও নেই। যা ছিল ১৯৯৫ সালে স্কুল কলেজের জন্য দান করে দিয়েছি। আমি সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করব। স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে আরও অনুপ্রেরণা জোগাবে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ আছেন যাদের মানুষ মন থেকে শ্রদ্ধা করে। তাদের মধ্যে কাজী খলীকুজ্জমান একজন। এমন মানুষ আমাদের দেশে অনেক দরকার। তিনি মানুষের উন্নয়নে কাজ করছেন। স্বাধীনতা পদকের ফলে ড. খলীকুজ্জমান বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও অবদান রাখবেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. নিলুফার বানুর পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত, কৃষিব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ ইউসুফ, ড. মোঃ আবুল কাশেম, ড. ফেরদৌসী রহমান। প্রসঙ্গত, ১৯৪৩ সালে সিলেটে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের জন্ম। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ করেছেন। আর একই বিষয়ে পিএইচ-ডি করেছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে। এছাড়া লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানেও পিএইচ-ডি করেছেন তিনি। দীর্ঘ চার দশক ধরে উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও উন্নয়ন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে তিনি ইস্কাটনে অবস্থিত ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং অনারারি রেক্টর। একই সঙ্গে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি। একসময় বিআইডিএসের রিসার্চ ডিরেক্টরও ছিলেন তিনি। ৩৪টি বই লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন। সবই উন্নয়ন ও অর্থনীতি বিষয়ক। এছাড়া দেশে বিদেশে তার দুশো আর্টিকেল ও রিসার্চ পেপার রয়েছে। তিনি ২০০৯ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে একুশে পদক পেয়েছেন। সর্বশেষ চলতি বছর রাষ্ট্রীয় পদক স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।
×