ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইনানীতে সমুদ্রের জোয়ারে লাখো চিংড়ির পোনা

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৮ মার্চ ২০১৯

ইনানীতে সমুদ্রের জোয়ারে লাখো চিংড়ির পোনা

সুতোর মতো চিংড়ি পোনা। কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক শ্রেণীর জেলেরা। সূর্যের প্রখরতা বাড়ার আগেই মশারির জালে ধরতে হয় এসব বাগদা চিংড়ির পোনা। তাই সূর্যোদয়ের আগেই ভোর সকালে চিংড়ি পোনা আহরণে নামে এসব জেলে। অভিনব কৌশলে এসব পোনা আহরণ করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার স্থানীয় হ্যাচারিতে বিক্রি করা হয়। পোনানির্ভর হ্যাচারিগুলোতে একশ’ পোনা ক্রয় করে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে কক্সবাজারের কলাতলী কিংবা লাবণী পয়েন্টে এ ধরনের সুযোগ নেই। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, ঠিকমতো সূর্যোদয় হয়নি। তখন থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয় ইনানী সমুদ্র সৈকতে। বিশেষ করে যারা নিজেদের গাড়িতে সৈকতের রানী কক্সবাজারে বেড়াতে যান তারাই খুব ভোরে পৌঁছাতে পারেন ইনানীতে। সৈকতে যখন জোয়ার চলে ঠিক তখনই চিংড়ি পোনা ধরতে জেলেরা মেতে উঠে। জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা চিংড়ির পোনা ধরতে জেলেরা ব্যবহার করছে মশারির কাপড়ের তৈরি এক ধরনের জাল। অনেকটা বস্তার ন্যায় তৈরি করা এসব জালের একপাশে মুখ বেঁধে দেয়া হয়। তারপর বাঁশে আটকানো জারে ঢেউয়ের পানি কয়েক দফায় প্রবেশ করিয়ে চিংড়ি পোনা আটকানো হয়। এরপর একটি পাতিলে ঢেউয়ের সঙ্গে থাকা ময়লা আবর্জনাসহ জালটির মুখ খুলে দেয়া হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই পোনা আহরণের দৃশ্য। কারণ পাতিলের পানিতে জোয়ারে ভেসে আসা পোনাগুলোকে আবার খুঁজে নিতে হয়। সাদা একটি প্লাস্টিকের বাটিতে পাতিলের ময়লা মিশ্রিত পানিগুলো একটু একটু করে তোলা হয়। সাদা বাটিতে তোলা পানিতে অন্য ময়লা আবর্জনার সঙ্গে কয়েকটি চিকন সুতোর মতো টুকরাও দেখা যায়। সেগুলোই হচ্ছে বাগদা চিংড়ির পোনা। যারা কখনও এই দৃশ্য দেখেনি তারা কিছুতেই বুঝতে পারবেন না সাগর পাড়ে এসব মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কি করছেন। পরে আসলে তারা সুতোর মতো পোনাগুলোকে একটি পাতিলে আলাদা করেন। এসব জেলেরা জানিয়েছেন, যুগের পর যুগ তারা এভাবে সকাল ভোরে জোয়ারের সময় চিংড়ির পোনা ধরেন। ইনানী সমুদ্র্র উপকূলের আশপাশ এলাকার মানুষ এসব পোনা ধরার ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। ইনানীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেলেরা তাদের ছেলেপুলে নিয়ে জোয়ারে পানিতে চিংড়ি পোনা আহরণে নামে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ৫শ’ থেকে হাজার টাকা আয় করতে পারে জেলে পরিবারগুলো। তবে এই সুযোগ প্রতিদিন আসে না। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন এসব পোনা জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে। এদিকে কক্সবাজারের কৃষিজীবী পরিবারের শতকরা ২০ ভাগই ট্রলার বা নৌকায় মাছ শিকার করে জীবনযাপন করেন। জীবিকার তাগিদে সাগরের পাড়ে চিংড়ি পোনা ধরে তারা। আর এতে কোন ধরনের বাধাও নেই। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে সামুদ্রিক মাছের লালন, প্রজনন ও বিচরণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। সাগর ও নদীর মোহানায় এমনকি উপকূলীয় অঞ্চলের নদী, খাল, বিল ও খাঁড়ি থেকে ধান চাষের সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও বৃষ্টির সময় বিভিন্ন জাতের প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের জমিতেও জমিতে ব্যাপক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষ করা হয়। Ñমাকসুদ আহমদ, কক্সবাজার থেকে ফিরে।
×