ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি চর্চার নতুন দিগন্ত হাতিরঝিল এ্যাম্ফিথিয়েটার

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৫ মার্চ ২০১৯

সংস্কৃতি চর্চার নতুন দিগন্ত হাতিরঝিল এ্যাম্ফিথিয়েটার

মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর বহুল চর্চিত ‘সংস্কৃতির কথা’-শীর্ষক রচনায় বলেছেন, ‘কালচার মানে উন্নতর জীবন সম্বন্ধে চেতনা- সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রেম সম্বন্ধে অবহিতি।’ এ রচনা শেষ দিকে তিনি সংস্কৃতি সম্বন্ধে বোধ করি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মন্তব্যটি করেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে বাঁচা, প্রকৃতি-সংসার ও মানব সংসারের মধ্যে অসংখ্য অনুভূতির শিকড় চারিয়ে দিয়ে বিচিত্র রস টেনে বাঁচা, নর-নারীর বিচিত্র সুখ-দুঃখে বাঁচা, বিচিত্র দেশ ও বিচিত্র জাতির অন্তরঙ্গ সঙ্গী হয়ে বাঁচা, প্রচুরভাবে, গভীরভাবে বাঁচা, বিশ্বের বুকে বুক মিলিয়ে বাঁচা।’ মোতাহের হোসেন চৌধুরীর এই মন্তব্যদ্বয় থেকে আমরা জীবন ও সংস্কৃতির মধ্যকার সম্পর্ক ও সাযুজ্যকে উদ্ভাবন করতে পারি। মানবজীবনের মধ্যেই সংস্কৃতির পরম অবস্থিতি। যে জীবন ব্যষ্টিকতার একান্ত সীমাকে পরিহার করেছে, যা কেবল আপন সম্ভোগকে উস্কে দিতে ক্রিয়াশীল নয় বরং পরার্থে ও সামষ্টিক আনন্দ-যাপনকে সমূলে অবলম্বন করেছে সে জীবন সংস্কৃতির। মানুষের উন্নততর জীবন ভাবনার আদর্শরূপ কী এবং কেমন, এসব বিষয়ে ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, সভ্যতার পরিক্রমা ও বিজ্ঞানের মধ্যে কৌশলগত বিভেদ ও তর্ক রয়েছে। তবে যে বিষয়ে কোন তর্ক নেই এবং জগতের সর্বসাধারণ যাকে নিজের ও সকলের জন্য ইতিবাচক বলে সাব্যস্ত করেছে তা হলো সৌন্দর্য, ভালোবাসা এবং মানবতা। বিষয় তিনটিতে প্রভূত বিশ্লেষণ ও কথকতা থাকলেও এসব ব্যাপারে আমরা নিজেদের মতো বাক্য গড়ে নিতে পারি, যার সবই ইতিবাচক হবে, কোনটিই অর্থহীন হবে না। মানব সংসারের সর্বত্র আপনি এই শব্দ তিনটিকে শক্তিশালী করে স্থাপন করে দেখুনÑ পৃথিবী কত সুন্দর, কত মধুময় হয়ে ওঠে। ভেবে দেখুন, যেখানে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় দৃশ্যপট, নতুন পাখি এসে গান করে, যেখানে অবিরল পুষ্পধারা প্রভাতে মধুর সম্ভাষণে ঘুম ভাঙায়, সেখানে কী হানাহানি, যুদ্ধ, বিবাদ, অপঘাত, বিসম্বাদ শোভা পায়! সেখানে কী ভারি মারণাস্ত্রের আঘাতে আক্রান্ত শিশুদের রক্তমুখ মেনে নেয়া যায়! অবশ্যই মানা যায় না। তা হলে বলা যায় পৃথিবীর সর্বত্রই ভালবাসা ও মানবতার অভাব রয়েছে। এখানে কবি দিলীপ দাসের একটি পঙ্ক্তি মনে পড়ছে : ‘ভালবাসা সশস্ত্র হলে যুদ্ধ থেমে যায়।’ ভালবাসা যেখানে বর্মশীল, শক্তিশালী সেখানে যুদ্ধ কিংবা অস্ত্রের প্রশ্নই আসে না, সেখানে বিবাদের কোন অবকাশ নেই। আমরা একটু নিবিড়ভাবে ভাবলেই দেখব, সংস্কৃতি মূলত এই তিন বিষয়ের সম্মিলন। সৌন্দর্য, ভালবাসা এবং মানবতাবোধে প্রদীপ্ত হওয়াই একজন সংস্কৃতিসাধকের পরম লক্ষ্য। কিছু লোক সংস্কৃতি চর্চা বলতে নাচ, গান, নাটক, আবৃত্তি বা পরিবেশনা শিল্পের কোন একটিকে নিয়ে প্রাত্যাহিক দিনযাপন বা লোকসম্মুখে সে সবের উপস্থাপনাকে জ্ঞান করে থাকে, সংস্কৃতি আসলে তা নয়। এসব চর্চা ও পরিবেশনা সংস্কৃতির কোন একটি উপাদানের অনুশীলনমাত্র। কেননা সংস্কৃতির অবস্থান বিশেষ জনগোষ্ঠী বা জাতিগোষ্ঠীর যাপনক্ষেত্রের সর্বত্র সম্প্রসারিত। বিশ্বসভায় লোকের স্বরূপ উন্মোচিত হয় তার সংস্কৃতির মাধ্যমে; সেই সংস্কৃতি তার বাহ্যিকরূপ ও বাচিকতার মাধ্যমে প্রকাশ পায় যেখানে মঞ্চে শৈল্পিক ক্রিয়া-কসরতের সুযোগ থাকে না। জীবনের নানারূপ অভিজ্ঞতার ফলে আমাদের মনে যে অনুভূতির সৃষ্টি হয় তার সুনিপুণ গ্রন্থনাকে অনুশীলনপূর্বক আমরা পরিবেশন করে থাকি; এটি হলো সংস্কৃতির পরিবেশনা-রূপ। সংস্কৃতির আরও এক রূপ রয়েছে তা হলো লোকরূপ, চেতনে বা অবচেতনে স্বভাবতই লোক-পরম্পরায় মানুষের মধ্যে সেটি সঞ্চারিত হয়। তবে কাল-পরম্পরায় বাহিত কোন কুসংস্কার বা সভ্যতা পরিপন্থি বিষয়কে সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ বলা যাবে না। কালে কালে সংস্কৃতির পরিশুদ্ধায়ন এবং সংস্কৃতিক উপাদানের পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটে থাকে। সৌন্দর্য, ভালবাসা এবং মানবতাবোধকে অক্ষুণœ রেখে অগ্রগামিতার মধ্যেই সংস্কৃতি চর্চার সম্পূর্ণতা। শিক্ষা আমাদের আলোক প্রজ্বলন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করে আর সংস্কৃতির ছোয়ায় সে আলো ছড়িয়ে পড়ে লোকে লোকে প্রাণে প্রাণে। আলোকিত মানুষ জগত সংসারের উদার অঙ্গনে নিজেকে একা পায় না, মানব সংসার ও প্রকৃতি সংসারের মধ্যে তিনি আপনার একান্ত আবাস খুঁজে পায়। সেই উদার প্রীতি-প্রাঙ্গণে একত্রিত হওয়াই সংস্কৃতিসেবীর লক্ষ্য, সেখানেই সুন্দরের পরম সমাবেশ। দুই. কলোসিয়াম, পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটি। ৭২ খ্রিস্টাব্দে রোম শহরের কেন্দ্রভূমিতে স¤্রাট ভেসপাসিয়ানের সময় এই অপূর্ব স্থাপত্যের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৮০ খ্রিস্টাব্দে এসে তারই উত্তরসূরি টিটোর সময় এর নির্মাণ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে স¤্রাট ডোমিটিয়ান কলোসিয়ামের অনেকটা নবায়ন করেন। কলোসিয়াম নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজন শাসকই ছিলেন ফ্লাভিয়ান রাজবংশের এ জন্য কলোসিয়াম পরিচিতি পায় ‘ফ্লাভিয়ান এ্যাম্ফিথিয়েটার’ হিসেবে। এটি মূলত প্রাচীন রোমের রাজা ও অভিজাত শ্রেণীর মনোরঞ্জনের জন্য নির্মিত একটি উন্মুক্ত থিয়েটার। যেখানে গ্লাডিয়েটররা একে অন্যের বিপরীতে, কখনও বা শক্তিমান বন্যপ্রাণীর বিপরীতে মল্লযুদ্ধ করে রক্তাক্ত হতো আর এতে বিনোদিত হতো অভিজাত শ্রেণী। প্রাচীন সময়ে কলোসিয়ামে মানবতার চরম অবমাননা ঘটলেও পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্রীড়া-কসরতের মুক্তমঞ্চরূপে এটি ব্যবহৃত হয়। কলোসিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় ৫০ হাজার জন। এটি রোমের কেন্দ্রস্থল পেলাটিন পাহাড়ের ঢাল ঘেঁষে অবস্থিত। ডিম্বাকৃতির এই থিয়েটারের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা যথাক্রমে ৬২০-৫১৩-১৫৭ ফুট। ৮০টি থামের ওপর তিন স্তরের স্থাপত্যশৈলীতে এই থিয়েটারের প্রতিস্তরে ৮০টি প্রবেশদ্বার (অৎপয ডধু) রয়েছে। এত বেশি সংখ্যক প্রবেশদ্বার থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই এই বিশাল থিয়েটার দর্শক পূর্ণ কিংবা শূন্য করা সম্ভব ছিল। রোমে অবস্থিত এই এ্যাম্ফিথিয়েটারের ধারণা থেকেই পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে এই ধারার থিয়েটার নির্মাণের সূচনা হয়। ফ্লাভিয়ান এ্যাম্ফিথিয়েটারকে আধুনিক যুগের স্টেডিয়ামের পূর্বসূরি হিসেবেও ভাবা হয়। হাতিরঝিল প্রকল্প নগর ঢাকার পরিবেশের কতটা শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছে, তা এখানে এই স্বল্প আয়তনে বলে শেষ করা যাবে না। জনবহুল এই নগরীর মাঝখানে নৌ-চলাচলের খানিকটা জায়গা রয়েছে, দু’পাশে সবুজ বৃক্ষসারি রয়েছে; বিষয়টি ঢাকায় গত দুই দশকের অধিককাল ধরে বসবাসরত মানুষদের জন্য যে কতটা আকাশ-কুসুম প্রাপ্তি তা বলে শেষ করা যাবে না। হাতিরঝিলের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে নিকেতনের পাশে নির্মিত হয়েছে ‘হাতিরঝিল এ্যাম্ফিথিয়েটার’। তিনটি গ্যালারিতে এর দর্শক ধারণ ক্ষমতা প্রায় দু’হাজার। উত্তর দিকে মুখ করে মঞ্চটি ঝিলের জলের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুটো প্রবেশদ্বার দিয়ে সহজেই দর্শকরা গ্যালারিতে প্রবেশ করেতে পারেন। হাতিরঝিল প্রকল্পে এই উন্মুক্ত মঞ্চটির অবস্থান, এই প্রকল্পের নান্দনিক সম্পন্নতার একটি অন্যতম দিক। ১৩ এপ্রিল ২০১৭ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক হাতিরঝিল এ্যাম্ফিথিয়েটার ও ফাউন্টেনের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চার একটি অভিনব পটভূমি উন্মোচিত হয়েছে। হাতিরঝিলের সম্পূর্ণ প্রকল্পটির মতো এই মঞ্চটিও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। উদ্বোধন পরবর্তীতে গত দু’বছরে এ্যাম্ফিথিয়েটারে কিছু অনুষ্ঠান হলেও উল্লেখযোগ্য কোন বৃহৎ সাংস্কৃতিক কর্মকা- এখানে উদযাপিত হয়নি। ৭Ñ৯ মার্চ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সফলভাবে এ্যাম্ফিথিয়েটারে উদযাপিত হলো ‘মহানগর সাংস্কৃতিক উৎসব ২০১৯’। উৎসবের তিন দিনেই দর্শক-শ্রোতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আলোকিত ছিল মঞ্চটি। দেশের সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, যাত্রা, এ্যাক্রোবেটিকসহ পরিবেশনা শিল্পের প্রায় সকল অঙ্গনের প্রতিশ্রুতিশীল এবং প্রসিদ্ধ শিল্পীদের পরিবেশনায় প্রাণবন্ত ছিল সংস্কৃতি চর্চার এই নতুন পাদপীঠ। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনার এক পর্যায়ে বিশিষ্ট ব্যান্ডদল ‘জলের গান’-এর ভোকাল রাহুল আনন্দ তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন- ‘এত চমৎকার একটি মঞ্চ আমাদের রয়েছে বিষয়টি ভাবতেই খুব ভালো লাগছে।’ ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের দিনে উৎসব আরম্ভ হয়, উৎসবের উদ্বোধনকালে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক তার বক্তব্যে বলেন : ‘হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতির লালন ও প্রতিপালনের মাধ্যমে সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। সুস্থ, রুচিশীল ও আমাদের কৃষ্টিচেতনার সঙ্গে সঙ্গতিশীল পরিবেশনা নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নগরবাসীর জন্য এ আয়োজন সাজিয়েছি, আশা করছি এ উৎসব সবার পিয়াসুমনকে নন্দিত করবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ এবং ২০২১ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে শিল্পকলা একাডেমি ব্যাপক সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, আশা করছি আপনারা সকলে আমাদের আয়োজনে অংশগ্রহণ করবেন।’ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত মহানগর সাংস্কৃতিক উৎসবে সংগীত পরিবেশনায় অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন : তানভীর আলম সজীব, দিনাত জাহান মুন্নী, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, ঝিলিক, ঐশী, ইউসুফ খান, বিউটি, অনুপমা মুক্তি, মৌটুসী ইসলাম, লুইপা, সমীর বাউল এবং মেহেরীন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন : দিপা খন্দকার, অনিক বোস, ওয়ারদা রিহ্যাব, ওয়াসেক, লিখন রায়, মেহরাব হক তুষার, ফারহান চৌধুরী বেবী, সোহেল রহমান, অন্তর দেওয়ান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। তিন দিনের এ উৎসবকে জমিয়ে তুলেছে চীন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পকলা একাডেমির শিশু অ্যাক্রোবেটিক দলের শিল্পীদের দুর্দান্ত-সব পরিবেশনা। উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল সমীর কাওয়ালের কাওয়ালী, যন্ত্রসঙ্গীত, নাটক, যাত্রাপালা এবং পুতুলনাট্যের অংশবিশেষ উপস্থাপনা। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল নারী দিবস এ দিন হাজার বছরের বাঙালী মহীয়সী নারীদের নিয়ে মাহফুজা হিলালীর রচনায় ‘মহীয়সী নারী’ শীর্ষক একটি চমৎকার গীতিনৃত্যালেখ্য মঞ্চস্থ হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত শতবর্ষী নাট্যমঞ্চগুলো নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি একটি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করে। লিয়াকত আলী লাকী রচিত ‘বাংলাদেশের শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ’ শিরোনামে একুশে বইমেলায় এ বিষয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শতবর্ষী নাট্যমঞ্চগুলোতে আবারও নাট্যচর্চা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সচল করার লক্ষ্যে দেশের ৩৫টি শতবর্ষী নাট্যমঞ্চে এবার শিল্পকলা একাডেমি উৎসব আয়োজন করেছে। মহানগর সাংস্কৃতিক উৎসবের তৃতীয় দিন ৯ মার্চ এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। হাতিরঝিল এ্যাম্ফিথিয়েটারে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন মঞ্চসারথি নাট্যজন আতাউর রহমান। বিচিত্র সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও প্রাণ-প্রাচুর্যের মধ্য দিয়ে তিন দিনের উৎসবটি শেষ হয়েছে, তবে এ মঞ্চে নিয়মিত সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাস্তবায়িত হলে যে ঢাকা শহরের দর্শক-শ্রোতারা খুব সাগ্রহে অংশগ্রহণ করবে তা তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেই আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি। শিল্পকলা একাডেমি বাংলাদেশের হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতিসহ পরিবেশনা শিল্পের সকল শাখা নিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কাজ করে চলছে। জাতীয় পর্যায়ের প্রায় সকল সাংস্কৃতিক আয়োজনে এ প্রতিষ্ঠান তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাই হাতিরঝিল এ্যাম্ফিথিয়েটারটি শিল্পকলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলে ঢাকা শহরে সংস্কৃতি চর্চার নতুন এই পটভূমিতে শিল্পচর্চার নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পক্ষ বিবেচনা করতে পারে। সংস্কৃতির নির্বাচিত ও পরিবেশনযোগ্য সঙ্কলিত অংশ নিয়ে সংস্কৃতি চর্চা হয়ে থাকে, এই চর্চা ও পরিবেশনার জন্য অনেক উপকরণ ও অনুষঙ্গের প্রয়োজন হয়। কেবল উপকরণগত সঙ্কটের ফলে আমরা দেখছি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক লোক ছড়া, গান ও লোকশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। এসব সংরক্ষণ ও সঙ্কলনের জন্য আজ উপযুক্ত সময় এসেছে। দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেই সঙ্গে আমরা যদি সংস্কৃতির দিক দিয়েও অগ্রসর হতে না পারি তা হলে দেশব্যাপী আমরা কেবল ধোঁয়া ও দালানের পশরাই দেখব সেখানে তাকিয়ে দেখার মতো কোন সৌন্দর্য অবশিষ্ট থাকবে না; কেননা মানুষের মাঝে সৌন্দর্য এবং নান্দনিক বোধ সঞ্চারিত হয় সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে।
×