ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ২-০ ভুটান, চোট পাওয়ায় ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা খেলেননি, নিজেদের মধ্যে মোকাবেলার আগেই ;###;নেপাল-বাংলাদেশ শেষ চারে

ভুটানকে বিদায় করে সেমিতে সাবিনারা

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৫ মার্চ ২০১৯

ভুটানকে বিদায় করে সেমিতে সাবিনারা

রুমেল খান ॥ পরিকল্পনা ছিল দুটি। প্রতিপক্ষকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সেমিফাইনাল খেলা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কমপক্ষে চার গোলের ব্যবধানে জেতা। কিন্তু প্রথম পরিকল্পনা সফল হলেও দ্বিতীয়টি হয়নি বাংলাদেশ মহিলা জাতীয় ফুটবল দলের। বৃহস্পতিবার তারা নেপালের বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গশালায় (নেপালে স্টেডিয়ামকে ‘রঙ্গশালা’ বলা হয়) ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০ গোলে হারায় ভুটানকে। খেলার প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল গোলশূন্য ড্র। এই জয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের পঞ্চম আসরে এক ম্যাচ হাতে রেখেই শেষ চারে নাম লেখানো নিশ্চিত করেছে বাংলার বাঘিনীরা। এ নিয়ে টানা তিন আসরে এই কৃতিত্ব দেখালো তারা। এই জয়ে এক ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে লাল-সবুজরা। সমান পয়েন্ট স্বাগতিক নেপালেরও, তারা বাংলাদেশের আগেই সেমিতে নাম লিখিয়েছে। বাংলাদেশের সমান পয়েন্ট হলেও গোলগড়ে এগিয়ে তারা আছে শীর্ষে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপাল ৩-০ গোলে ভুটানকে হারিয়ে শুভসূচনা করেছিল। নেপাল ও বাংলাদেশের কাছে টানা দুই ম্যাচেই হেরে ও শূন্য পয়েন্ট নিয়ে এই আসর থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেল ‘ড্রাগনগার্লস’ খ্যাত ভুটান দলের। এ নিয়ে টানা পাঁচটি সাফেই দলটি গ্রুপপর্বের গ-ি পেরোতে পারলো না। শনিবার স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবার লড়াই বাংলাদেশের। আর এ নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছে ‘দ্য বেঙ্গল টাইগ্রেস’ দল। দুশ্চিন্তার কারণ দুটি। সাফে এর আগে নেপালের বিরুদ্ধে কখনই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। দু’বারের সাক্ষাতে প্রতিবারই হেরেছে তারা। দুই. শনিবার নেপালের সঙ্গে হারলে বা ড্র করলে বাংলাদেশ গ্রুপ রানার্সআপ হবে। সেই সঙ্গে অপর গ্রুপে ভারত গ্রুপসেরা হলে (এখনও না হলেও তাদের গ্রুপসেরা হবার সম্ভাবনাই বেশি) বাংলাদেশের সেমির প্রতিপক্ষ হবে এই ভারতই, যারা আগের চারটি সাফেরই চ্যাম্পিয়ন। কাজেই সেমিতে ভারতকে এড়াতে হলে শনিবার বাংলাদেশের নেপালের বিরুদ্ধে জয়ের কোন বিকল্প নেই। যদি বৃহস্পতিবার তারা ভুটানকে চার গোলে হারাতে পারতো তাহলে শনিবার নেপালের সঙ্গে ড্র করলেই তারা গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ভারতকে এড়াতে পারতো। কিন্তু এখন দুটি গোল কম হওয়াতে নেপালের বিরুদ্ধে ম্যাচটি আরও কঠিন হয়ে গেল গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের জন্য। কেননা এখন ড্র করলেও সেই ফল যথেষ্ট নয়। জিততেই হবে, আর নেপালের বিরুদ্ধে জয়হীন বাংলাদেশের জন্য ভীষণ কঠিন ও চাপের হয়ে গেল। বয়সভিত্তিক আসরে ভুটানের বিরুদ্ধে শতভাগ জয়ের ধারা বজায় রাখলো বাংলাদেশ। এছাড়া কোন গোল হজম না করার কৃতিত্বও ধরে রেখেছে তারা। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ১২৫। সেক্ষেত্রে ভুটানের কোন র‌্যাঙ্কিং নেই। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ দল মোট আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ২৯টি। এর মধ্যে তারা জিতেছে ১২টিতে। ড্র করেছে ১টিতে। আর হেরেছে ১৬টিতে। ৪৬ গোল করার বিপরীতে গোল হজম করেছে ৬৩টি। বাংলাদেশের ১২ জয়ের ৩টি এবং ৪৬ গোলের ১২টি হচ্ছে ভুটানের বিরুদ্ধে। প্রতিটি জয়ই এসেছে এই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেই। ২০১০ সাফে বাংলাদেশ গ্রুপপর্বে ভুটানকে ৯-০ গোলে এবং ২০১২ সাফে গ্রুপপর্বে ১-০ গোলে হারায়। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে ভুটানের মুখোমুখি হয়নি। ফলে ভুটানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাত বছর পর আবারও জয় কুড়িয়ে নিল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার চোটের কারণে ম্যাচে খেলতে পারেননি ফরোয়ার্ড কৃষ্ণারানী সরকার। তবে তার অনুপস্থিতি কোন প্রভাব ফেলেনি, তাকে ছাড়াই জিততে কোন সমস্যায় পড়েনি তার সতীর্থরা। গ্যালারিতে বসেই দলের জয় উপভোগ করেছেন কৃষ্ণা। ম্যাচের শুরু থেকেই গোল পেতে মরিয়া বাংলাদেশ একের পর এক আক্রমণ করে। ভুটানেরও বাঁচা-মরার লড়াই এটি। কারণ হারলেই নিশ্চিত বিদায়। তাই দক্ষিণ এশিয়ার এ মর্যাদার লড়াইয়ে টিকে থাকতে তারা কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৩৪ মিনিটে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের বাঁ পায়ের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। পরের মিনিটেই বক্সের বাঁ কোণা থেকে আবারও দারুণ একটা শট নেন সাবিনা। তবে এবার গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় গোল হজম করতে হয়নি ভুটানকে। ৪২ মিনিটে অফসাইডের কারণে একটি গোলও বাতিল হয় বাংলাদেশের। যে বলটি বাঁ প্রান্ত থেকে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্বপ্না। বল জালে পাঠিয়েছিলেন মিশরাত জাহান মৌসুমী। গোল বাতিলে হতাশ হন তিনি। তবে বিরতির পরেই ৪৭ মিনিটে মুখে হাসি ফোটে তার। এবার করেন ‘বৈধ’ গোল। ডানপ্রান্ত থেকে মনিকা চাকমার উড়ন্ত কর্নার বক্সে জটলার মধ্যে পেয়ে হেড করেন মৌসুমী। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ভুটান ডিফেন্ডাররা কিছু বুঝে উঠার আগেই বল আশ্রয় নেয় জালে (১-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ। ৮৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের ভুলে বল পান শামসুন্নাহার সিনিয়র। তিনি পাস দেন সাবিনাকে। সাবিনা দারুণ দক্ষতা-চাতুর্যের সঙ্গে তিন ভুটানী ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়েন। ততক্ষণে বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন ভুটানী গোলরক্ষক। সাবিনা ডান পায়ের প্লেসিং শটে বল পাঠান জালে (২-০)। ইনজুরি টাইমে ডানপ্রান্ত থেকে করা বদলি ফরোয়ার্ড তহুরার শট অল্পের জন্য জড়ায়নি জালে। এর আগেও একটি গোলের সুযোগ নষ্ট করেন তহুরা। নইলে জয়ের ব্যবধান আরও বড় করতে পারতো বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে জিতে সেমির টিকেট কাটার আনন্দ এবং কম গোলের সঞ্চয় নিয়ে নেপালের বিরুদ্ধে খেলার চাপ নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
×