ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ, র‌্যাঙ্কিংয়ে ২০ ধাপ পিছিয়ে থাকলেও হেড টু হেডে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ, এটি হবে ফিফা টায়ার-১ ম্যাচ

কম্বোডিয়াকে হারানোর প্রত্যয় বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১০:২৮, ৯ মার্চ ২০১৯

কম্বোডিয়াকে হারানোর প্রত্যয় বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ আজ শনিবার থেকেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের। কেননা আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় নমপেনে স্বাগতিক কম্বোডিয়ার বিপক্ষে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে তারা (এটি হবে ফিফা টায়ার-১ ম্যাচ)। এরপরই অনুর্ধ-২৩ দলের এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব। যা শুরু হবে ২২ মার্চ থেকে। এ উপলক্ষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২৭ সদস্যের প্রাথমিক জাতীয় দল এবং ২৯ সদস্যের অনুর্ধ-২৩ প্রাথমিক দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। মঙ্গলবার জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে প্রাথমিক জাতীয় দলটি একটু ছেঁটেকেটে চূড়ান্ত স্কোয়াড হিসেবে ঘোষণা করেন। এই দলে আছেন ২৩ ফুটবলার। বুধবার কম্বোডিয়ার উদ্দেশে বিমানযোগে ঢাকা ছাড়ে জেমি ডে’র দল। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ২০ ধাপ এগিয়ে আসিয়ান অঞ্চলের দেশ কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়া যেখানে আছে ১৭২ অবস্থানে, বাংলাদেশের অবস্থান সেখানে ১৯২। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে- হেড টু হেড পরিসংখ্যানে কিন্তু বাংলাদেশই এগিয়ে। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার কম্বোডিয়া এখনও কোন ম্যাচই জেতেনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত উভয় দল খেলেছে তিনটি ম্যাচ। দুটি ম্যাচেই জিতেছে ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার’রা। একটি ম্যাচ ড্র হয়। আর ‘এ্যাঙ্কর ওয়ারিয়র্স’ খ্যাত কম্বোডিয়া এখনও জয়ের খাতা খুলতে পারেনি। ২০০৬ সালের ১ এপ্রিল এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে প্রথম মোকাবেলায় বাংলাদেশ জেতে ২-১ গোলে (বাংলাদেশের গোলদাতা আলফাজ আহমেদ এবং জাহিদ হাসান এমিলি, ভেন্যু ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম)। ২০০৭ সালের ২২ আগস্ট ভারতের দিল্লীর আম্বেদেকার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নেহরু কাপে বাংলাদেশ গ্রুপপর্বে ১-১ গোলে ড্র করে কম্বোডিয়ার সঙ্গে (বাংলাদেশের গোলদাতা আবুল হোসেন)। এরপর ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল একটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশ জেতে ১-০ গোলে (বাংলাদেশের গোলদাতা এনামুল হক)। প্রস্তুতি ক্যাম্প হয়নি, লীগে খেলার মধ্যে থাকাই ভরসা। আশা নিয়েই কম্বোডিয়া গেছে জাতীয় ফুটবল দল। বছরের প্রথম মিশনে জয় চায় লাল-সবুজরা। ছন্দে থাকা নাবিব নেওয়াজ জীবন-মতিন মিয়ারা আশাবাদী। লীগের ফর্ম টেনে নিতে চান জাতীয় দলেও। অন্যদিকে পারফর্ম করেই জায়গা পাকা করার লক্ষ্য দলে প্রথম সুযোগ পাওয়া সোহেল রানার। দলে প্রথমবারের মতো জায়গা পেয়েছেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-পুত্র হারিয়েছেন। মনকে শক্ত রেখে জাতীয় দলের মিশনে গেছেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে খেলা এই মিডফিল্ডার। তার মতো ভাগ্য খুলেছে আরেক সোহেল রানারও। ইমন মাহমুদ বাবু ইনজুরিতে পড়ায় তার পরিবর্তে ঢাকা আবাহনীর মিডফিল্ডার সোহেল রানাকে (যিনি চূড়ান্ত দল থেকে বাদ পড়েছিলেন) বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে অন্তর্ভুক্ত করে দলের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়। দলে নতুন গোলরক্ষক কোচ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ডিন কেনেথ মে এবং ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে ইংল্যান্ডের সাইমন জেমস মালটাবাইয়ের সঙ্গে চার সপ্তাহের চুক্তি করেছে বাফুফে। এই দু’জন বাংলাদেশে না এসে নিজ নিজ দেশ থেকে সরাসরি কম্বোডিয়া গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেন। গত ১০ অক্টোবর, ২০১৮ সালে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে। তার মানে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামছে লাল-সবুজরা। দীর্ঘদিন পর প্রীতি ম্যাচ খেললেও কম্বোডিয়ার বিপক্ষে জয়ের আশা বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে’র, ‘অবশ্যই আমরা জিততে চাই। তবে ম্যাচটি অনেক কঠিন হবে। আর তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য এটা ভাল সুযোগ। খেলোয়াড়দের কাছে আমার চাওয়া ভাল পারফর্মেন্স। বাহরাইনে এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে এই ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ দলটি তারুণ্যনির্ভর। দল চূড়ান্ত করা হয়েছে মূলত এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্যই। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের মূল সমস্যা হলো স্কোরিং। গোল করার লোকের অভাব। সেই সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে ওঠেছে বলেই মনে করছেন ব্রিটিশ এ কোচ, ‘নাবিব নেওয়াজ জীবন এবং মতিন মিয়া লীগে ধারাবাহিকভাবে গোল করছে। এটা ভাল দিক। আর গোল যে শুধু ফরোয়ার্ডরা করবে তা কিন্তু নয়। মিডফিল্ডার এমনকি ডিফেন্ডারদেরও ওপরে উঠে গোল করতে হবে।’ ২৩ সদস্যের দল নিয়ে কোচের মতো খুশি অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াও, ‘আমি মনে করি এটা ভাল একটা স্কোয়াড। কোচ চিন্তা করেই দল নির্বাচন করেছেন। এখানে আরও অনেককেই সুযোগ পাওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু কোচের কাছে যেটা ভাল মনে হয়েছে তিনি তা করেছেন। আমাদের দলটা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোন দুর্বলতা নেই। কম্বোডিয়া ম্যাচে ভাল করতে সবাই তাকিয়ে আছে।’ কম্বোডিয়া ম্যাচের পর ১০ মার্চ ঢাকায় ফিরবে জাতীয় দল। ১১ মার্চ ক্যাম্প করার জন্য কাতার রওনা দিবে। সেখানে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে। এরপর ২০ মার্চ কাতার থেকে সরাসরি বাহরাইন চলে যাবেন জামালরা। এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপে ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশ খেলবে বাহরাইন, ফিলিস্তিন এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২২ মার্চ প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের মুখোমুখি হবে জেমি ডে’র দল। জেমি ডে এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে পুরো দলটাকেই যাচাই করে দেখবেন। বিশেষ করে তার বেশি নজর থাকবে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো, ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়া, সুশান্ত ত্রিপুরা, মিডফিল্ডার বিপলু আহমেদ, মাসুক মিয়া জনি, ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল ও মোহাম্মদ ইব্রাহিমের দিকে। তাদের তিনি যে অনুর্ধ-২৩ দলের জন্যও পরখ করবেন। বাংলাদেশে হাল্কা শীতের আমেজ থাকলেও কম্বোডিয়ায় এখন বেশ গরম। ৩২ কিংবা ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে অনুশীলন করতে হচ্ছে জামাল ভুঁইয়াদের। বাংলাদেশে ঘাসের মাঠে খেলে অভ্যস্ত জেমির শিষ্যদের জন্য টার্ফের মাঠে অনুশীলন করাটা বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবে শিষ্যদের ছাড় দিতে নারাজ কোচ জেমি ডে, ‘যে কোন পরিস্থিতিতে খেলার মানসিকতা থাকতে হবে। সবকিছু মানিয়ে নিয়েই খেলতে হবে। গরম বড় কোন সমস্যা হতে পারে না।’ এখন দেখার বিষয়, আজকের ম্যাচে ‘এ্যাঙ্কর ওয়ারিয়র্স’ দলের বিপক্ষে নিজেদের অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি অক্ষুণœ রাখতে পারে কি না বেঙ্গল টাইগাররা।
×