ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইলমে তাসাওউফ

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ৮ মার্চ ২০১৯

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ইলমে তাসাওউফ

ইসলামে বিদ্যাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর তা হচ্ছে ইলমে জাহির এবং ইলমে বাতিন। শরীয়ত, তরিকত, হকিকত ও মারিফতের সমন্বয় যে বিদ্যা তাকে ইলমে তাসাওউফ বলা হয়। ইলমে তাসাওউফ অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ পরিচ্ছন্ন মানুষে পরিণত হয়, সুফী লকবে ভূষিত হয়। গাওসুল আজম হযরত সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (রা) বলেছেন, তাসাওউফ লিখতে চারটি হরফ লাগে। আর তা হচ্ছে তা, সোয়াদ ওয়াও, ফা, তা, বা, তে হচ্ছে তওবা, তওবা মানে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা সমস্ত গুনাহ খাতা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহ্র দিকে একনিষ্ঠভাবে প্রত্যাবর্তনই হচ্ছে তওবা। সোয়াদ হচ্ছে সাফা অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন হওয়া। মানুষ যখন সোয়াদ পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন সে ওয়াওতে উপনীত হয়। ওয়াও বিলায়েতের আদ্যাক্ষর যখন কেউ বেলায়েত লাভ করে তখন সে আরিফবিল্লাহ হয়ে যায় অর্থাৎ আল্লাহর সঙ্গে তার জানাজানি হয়ে যায়। ইলমে তাসাওয়াউফের অনেক তরিকা বা পথ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাদেরিয়া তরিকা, চিশতিয়া তরিকা, নক্শবন্দিয়া তরিকা, মোজাদ্দাদিয়া তরিকা এবং মোহাম্মদীয়া তরিকা। কাদেরিয়া তরিকার ইমাম হচ্ছেন গওছুল আজম আবু মুহম্মদ মহীউদ্দিন সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানী (রহ), চিশতিয়া তরিকার ইমাম হচ্ছেন খাজায়ে খাজেগান গরিবে নওয়াজ হযরত মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ), নক্শবন্দিয়া তরিকার ইমাম হচ্ছেন, খাজা বাহউদ্দিন নক্শবন্দী (রহ) মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম হচ্ছেন মোজাদ্দেদে আলফেশানি (রহ), মোহাম্মদিয়া তরিকার ইমাম হচ্ছেন হযরত শহীদ সৈয়দ আহম্মদ বেরলভী (রহ) এমনিভাবে ইলমে তাসাওউফ বহু তরিকা রয়েছে। মূলত এসেছে তাসাওউফ একটি বিজ্ঞান। সাধারণ দর্শনে জ্ঞান অর্পিত হয় যুক্তির মাধ্যমে আর তাসাওউফ জ্ঞান অর্জিত হয় প্রত্যক্ষ দর্শনের মাধ্যমে সব তরিকাতেই বিশেষ বিশেষ যিকর ও মেরাকাবার পদ্ধতি রয়েছে। ইলমে তাসাওউফে মানবদেহের কতকগুলো সূক্ষ্ম স্থানের উল্লেখ রয়েছে। দশ লতিকার নির্দেশনা রয়েছে আর তা হচ্ছে কল্ব রুহ, সির খফী, আকফা, নফ্স আর আতশ খাক, বাদ। প্রিয় নবী (সা) বলেছেন, প্রত্যেক জিনিসের মরিচা পরিষ্কার করার জন্য যন্ত্র আছে। কল্বের মরিচা পরিষ্কার করার জন্য আল্লাহর জিকিরই হচ্ছে পরিষ্কারের যন্ত্র। তরিকতের অনুশীলন করার জন্য বিশেষ নিয়ম পদ্ধতি আছে এবং এই নিয়ম পদ্ধতি তালিম গ্রহণ করতে হয় হক্কানী পীরের মাধ্যমে। হজরত মূসা (আ) উলুল আজম নবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি হজরত খিজির (আ)-এর নিকট থেকে তালিম গ্রহণ করেছিলেন। তাযকিযায়ে নফ্সের উল্লেখ করতেন মজীদে রয়েছে এবং হাদিস শরীফে ইহ্সানের উল্লেখ রয়েছে। এই দুটোই হচ্ছে তাসাওউফের মূল সূত্র। হাদিস শরীফে আছে এবাদতের জন্য হুজুরে কল্ফ অবশ্যই থাকতে হবে। এই হুজুরে কল্ব বা একান্ত চিত্ত লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে ইলমে তাসাওউফ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহর যিকর কর বেশি বেশি করে এবং সকাল- সন্ধ্যায় তার তসবিহ তিলাওয়াত কর। পীর তারাই হওয়ার যোগ্য যারা কোন কামিল পীরের কাছ থেকে খেলাফত ও ইজাজত লাভ করেন। পীরের মধ্যে কোন রকম লোভ লালসা থাকতে পারে না। দুনিয়াদারী তাকে পেয়ে বসে না। হযরত ইমাম মালিক (রহ) বলেছেন; তুমি ফিক্্হ অর্জন করলে অথচ তাসাওউফ বর্জন করলে তাহলে তুমি যিন্দিক হয়ে গেলে আর তুমি তাসাওউফ অর্জন করলে কিন্তু ফিকাহ বর্জন করলে তাহলে তুমি ফাসেক হয়ে গেলে। আর তুমি দুটোই অর্জন করলে তাহলে সার্থকতা লাভ করলে। ভ- পীরের খপ্পরে পড়ে অনেকে নিজের ইমান আমল বরবাদ করে ফেলে। যুগশ্রেষ্ঠ সুফী শাহ সুফী আলহাজ তোয়াজউদ্দীন আহম্মদ (রহ) বলেছেন, দালাল লাগিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালিয়ে লোক জড়ো করা যায় বটে কিন্তু পীর হওয়া যায় না। পীর ধরার আগে যাচাই করে নিতে হবে। খরুকীর পীর মাওলানা শাহ আবদুল করিম (রহ) ভ-দের মিষ্ট আলাপনের খপ্পরে পড়ে নিজেদের ইমান বরবাদ করবেন না। হযরত গওসুল আজম (রহ) তাঁর যুগের ৭২টি ভ- পীরের তালিকা দিয়ে গিয়েছিলেন। ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে যামান আবুবকর সিদ্দিকী (রহ) একত্রিশটি ভ- পীরের উল্লেখ করে গিয়েছিলেন বর্তমানে হিসাব করলে তার সংখ্যা দুই শতের অধিক হবে। বাংলা ভাষায় বহু তাসাওউফ গ্রন্থ রচিত হয়েছে। তাসাওউফ গ্রন্থ সর্বপ্রাচীন তাসাওউফ হচ্ছে এরশাদে খালেকিয়া বা খোদাপ্রাপ্তি তত্ত্ব¡। এরশাদে খালেকিয়ার লেখক হচ্ছেন, খড়কীর পীর মাওলানা শাহ আবদুল করিম (রহ) এ ছাড়া মাওলানা রুহুল আমীন রচিত তরিকত দর্পণ অধ্যাপক আব্দুল খালেক (রহ) রচিত সিরাজুস সালেকীন, খড়কীর শাহ্ আবু নঈম রচিত হিলালে তরিকত অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম রচিত তালিমে তাসাওউফ, শর্ষীনার পীর সাহেব রচিত তালিমে মারিফাতসহ বেশ কয়েকখানা নির্ভরযোগ্য তাসাওউফ গ্রন্থ রয়েছে। তাসাওউফের এসব গ্রন্থ পীরের মাধ্যমে সত্যিকার জ্ঞান অর্জিত হতে পারে। এ ছাড়া বেশকিছু অনূদিত গ্রন্থও রয়েছে। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ
×