ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলার অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

 জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে  বাংলার অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৬ হাজারের অধিক ভাষা চালু আছে। বিশ্বের ১০টির অধিক ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে জনসংখ্যার নিরিখে বাংলা ভাষার স্থান পঞ্চম। বাংলা ভাষার ইতিহাস অতি প্রাচীন। চর্যাপদে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে ১০০০ বছর পূর্বে। বহু ঘাত-প্রতিঘাত, বিবর্তন-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পার হওয়া এই বাংলা ভাষা একবিংশ শতাব্দীতে এসে হয়েছে বিশ্বের ৩০ কোটি লোকের মাতৃভাষা। ২০৪০ সালে বাংলা ভাষা ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, অসম, ত্রিপুরা রাজ্য, মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে বাংলা ভাষী লোকজন বসবাস করেন। এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রায় ১ কোটির অধিক বাংলা ভাষাভাষি লোকজন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, কানাডা, উত্তর আমেরিকা, সুইডেন, ডেনমার্ক, হল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশের নাগরিক হিসেবে তারা ও তাদের উত্তরসূরিগণ স্থানীয় ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষার চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। আর এই অভিবাসনের ফলেই অনেক দেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষার প্রবর্তন করা হয়েছে। বহুজাতিক ভাষাভাষি রাষ্ট্রে বাংলা একটি জনপ্রিয় কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। শক্তিশালী বাংলা গণমাধ্যম, কমিউনিটি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের লবিং এবং স্থানীয় সরকার, সংসদে বাংলা ভাষাভাষি নাগরিকদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষাভাষি লোকজনের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। এখানে যুক্তরাজ্যকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলা ভাষার পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। বিংশ শতাব্দিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা সাহিত্যে নোবেল বিজয়, ঐতিহাসিক বাংলাভাষা রক্ষার আন্দোলন পরে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি এবং বিশিষ্ট পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি ছায়াছবি বাংলা সাহিত্য ও শিল্পকলার অসাধারণ প্রতিফলন বিশ্বনন্দিত। বিশ্ব শান্তিরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা জাতিসংঘের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী। আর এই কর্মসূচীর অধীনে ‘শান্তি মিশনে’ মাঠ পর্যায়ের সব থেকে বড় দলটির ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন বাংলা ভাষাভাষি বাংলাদেশী কন্টিনজেন্ট। এরা জাতিসংঘের দূত হিসেবে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাবস্থা এবং অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল পরিবেশে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শান্তি মিশনে কর্তব্যরত কন্টিনজেন্ট সদস্য শান্তি মিশনের লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। দীর্ঘমেয়াদি মিশন কর্মসূচীতে কার্যকর সমন্বয় সাধনের জন্য পরস্পর পক্ষের মধ্যে বোধগম্য ভাষা বিনিময় একান্ত আবশ্যক অর্থাৎ স্থানীয় ও মিশনের সদস্যদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের জন্য পরস্পরের ভাষা, শেখা ও বলার চর্চা দায়িত্ব পালনের সঙ্গে যুক্ত। এমনি একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচীর অধীনে শান্তি মিশনের বাংলাদেশী কন্টিনজেন্ট আফ্রিকার সিয়েরালিয়নের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাষা শেখার প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটির ফলাফল এতই ইতিবাচক যে সিয়েরালিয়নে বাংলা এখন রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃত। কূটনৈতিক আচরণের আলোকে বলা যায় বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। সদস্যপদ গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে আসছে, এমনকি স্বীকৃতিদানের পূর্বে বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে ‘আনরডের’ (United Nation Relief Operation Dhaka) মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সাহায্য সামগ্রী ও অনুদান পাঠিয়েছে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় ভাষণ প্রদান নিঃসন্দেহে বহির্বিশ্বে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দি ওয়ার্ল্ডের প্রতিনিধি কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলামের উদ্যোগে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক সমর্থনে উত্থাপিত ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাবটি ১৯৯৯ সালের ১৭ নবেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশনে গৃহীত হয়। ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার মহান উদ্যোগ বাংলা ভাষাকে বিশ্ববাসীর কাছে আরও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত করেছে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের ১৯৩টি দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। পৃথিবীর সংখ্যালঘু কমিউনিটির বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষা ও গবেষণার জন্য জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের উপস্থিতিতে ঢাকায় স্থাপিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করেছে। আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে বাংলা ভাষার পরিচিতি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। বাংলা ভাষার ওপর ‘আন্তর্জাতিক এ্যাওয়ারনেস’কে কাজে লাগিয়ে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার প্রচারাভিযান আরও জোরদার করা যেতে পারে। বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার ব্যাপারে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য মঈনদ্দিন খান বাদল। তিনি ২০০৯ সালে ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। তার উপস্থাপিত প্রস্তাবটি সংসদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৬৪তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য আবেদন জানান। বিগত ৩০ বছর যাবত বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিটি উত্থাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন পরিষদ (পরে ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ নামে পরিচিত), বিশ্ব বাঙালী সম্মেলন, বাংলা একাডেমি, ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘর, বাংলা দর্পণ, এমএস ২০০০ ফোরাম, বিশ্ব বাংলা পরিষদ (নিউইয়র্ক বেইজ্ড), ক্যাম্পেইন ফর ইনক্লুশন অফ বাংলা ইন টু মেইনস্ট্রিম এডুকেশন (যুক্তরাজ্য বেইজ্ড), ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ (যুক্তরাজ্য শাখা), চারণ (যুক্তরাজ্য বেইজড), ওয়ার্ল্ড বেঙ্গলি কনভেনশন (যুক্তরাজ্য বেইজ্ড) অর্গানাইজেশন ফর দি রিকগনিশন অফ বাংলা এ্যাজ এ্যান অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অফ দি ইউনাইটেড নেশনস্ (বার্মিংহাম বেইজ্ড), ইত্যাদি সংগঠনসমূহ ওই দাবিটির সমর্থনে কাজ করছে। দাফতরিক ভাষা হিসেবে গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের তেমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির ইতিহাস পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয়েছে : ক. বৃহৎ, সচ্ছল ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর ভাষা প্রাথমিক পর্যায়ে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়েছে, যেমন - *ইংলিশ-যুক্তরাজ্য, উত্তর আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্র্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে প্রভৃতি দেশে ব্যবহৃত। *রাসান- সোভিয়েত ইউনিয়ন তৎপর ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহে ব্যবহৃত। *চায়নিজ- চীন ও তাইওয়ানে ব্যবহৃত। খ. একাধিক রাষ্ট্রভাষা বিবেচনায় : যেমন - *ফরাসী- ফ্রান্স ও ফরাসী রাষ্ট্রভাষা সংবলিত দেশগুলোতে ব্যবহৃত। *স্প্যানিশ-স্পেনসহ স্প্যানিশ রাষ্ট্রভাষা সংবলিত দেশগুলোতে ব্যবহৃত। *আরবী- সৌদি আরব, মিসর, জর্দান, সিরিয়া, ইরাক, সুদান, মরক্কো, লিবিয়া, আলজিরিয়া, তিউনেশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরবী রাষ্ট্রভাষা সংবলিত দেশ ব্রুনাইতে ব্যবহৃত। গ. ভাষার জন্য ব্যয়কৃত বিরাট পরিমাণ অর্থের অংশমত জোগান দেয়া এবং তা অব্যাহত রাখা। এখানে উল্লেখযোগ্য, জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে যে কোন দেশের প্রস্তাবিত যে কোন নতুন ভাষার প্রবর্তন জাতিসংঘের বাড়তি আয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রস্তাবক রাষ্ট্র এই বাড়তি আয়ের চাহিদা পূরণের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের জোগান নিশ্চিত করবে। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যেতে পারে যে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলার অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবটির বেশ কয়েকটি ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেমন- ১. বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষি জনসংখ্যা বর্তমানে ৩০০ মিলিয়নের অধিক। অনুমান করা হয়েছে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে এই জনসংখ্যা বেড়ে ৫০০ মিলিয়নে উপনীত হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের বসবাস, চাকরি, বাণিজ্য এবং রাজনীতিতে এঁরা সক্রিয়। ২.ভাষার পরিচিতি ও জনপ্রিয়তার বিচারে বাংলা ভাষা একটি ঈর্ষণীয় উচ্চতায় অবস্থান করছে। ট্যাগর (বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) ও রয় (সব্যসাচী পরিচালক সত্যজিৎ রায়) তাদের সৃষ্টিধর্মী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের মাধ্যমে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে অমরত্ব দিয়েছেন, তাদের কীর্তি বিশ্বনন্দিত। ৩.১৯৫২-এর বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলন ও ভাষার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের মহিমা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে প্রশংসিত। বায়ান্নর একুশে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরীর রচিত একুশের গান এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্বোধনী টিউন। ৪.বাংলা এখন একাধিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা- যথাক্রমে বাংলাদেশ ও সিয়েরালিওন। এ ছাড়া ভারতের কয়েকটি রাজ্যের সরকারী ভাষা বাংলা। যথা- পশ্চিমবঙ্গ ও অসম। ইংল্যান্ডও ওয়েলসের বাংলা একটি স্বীকৃত কমিউনিটি ল্যাঙ্গুয়েজ। ৫.সম্প্রতি প্যারিসের ইউনেস্কোর ৩৮তম অধিবেশনে (সাধারণ সভায়) বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ক্যাটাগরি ২-এ উন্নীত করা হয়েছে। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ব, ভাষাগত বৈচিত্র্য ও বহুভাষা ব্যবস্থার প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার বিশ্ব সম্প্রদায়ের আকণ্ঠ প্রশংসা লাভ করেছে। ৬.বাংলা এখন ইলেকট্রোনিক কমিউনিকেশন ও ডিজিটাল টেকনোলজির ব্যবহারযোগ্য ভাষা। অদূর ভবিষ্যতেও হাইটেক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মতো উপযোগী এই বাংলা ভাষা। উপরোক্ত সুবিধাগুলোর বরাতক্রমে এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পটির কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজন- ক. ভাষার অনুবাদ কাজের ব্যয় মেটাতে জাতিসংঘকে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ সাপোর্ট ফান্ড’ তৈরি করা। খ. জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির অফিসকে আরও সক্রিয় করে তোলা, যাতে তারা ১. কার্যকরী লবিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ পরিষদের সদস্যদের প্রস্তাবের অনুকূলে সমর্থন আদায় করতে পারেন এবং ২. সহযোগিতা পাওয়ার জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে দাফতরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করা। গ. রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমর্থন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। ঘ. প্রকল্পের সমর্থনে স্বেচ্ছাসেবিমূলক প্রচারিভযানে নিয়মিত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভাষা ও সাংস্কৃতিক সংস্থার কার্যক্রমকে দূতালয়ের মাধ্যমে উৎসাহিত করা। বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার প্রচেষ্টায় সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আমাদের ‘ক্যাম্পেনকে’ অধিকতর শক্তিশালী করবে এবং আশা করা যায় ভবিষ্যতে বাংলা জাতিসংঘের সপ্তম দাফতরিক ভাষা হিসেবে মর্যাদা লাভ করবে। জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলার অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রশাসনিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি প্রক্রিয়া অনুসরণ নিঃসন্দেহে কঠিন ব্যাপার কিন্তু প্রবল ইচ্ছা এবং কঠিন প্রতিশ্রুতি নিয়ে অগ্রসর হলে বাংলাকে জাতিসংঘের সপ্তম দাফতরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা অসম্ভব নয়। লেখক : ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা পদক বিজয়ী
×