ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখছে কারা?

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখছে কারা?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি এখন পরপর তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দায়িত্ব এখন বেশি। সবাইকে এক করে দেশ পরিচালনাও দরকার। তাঁর এই ডাক তাই সময়োপযোগী। এদিকে সামাজিক মিডিয়ায় তোলপাড় করা খবর দেখলাম রিজভীর। গতকাল নাকি তিনি হতাশ হয়ে চেয়ার ছুড়ে মেরেছেন। এই হতাশার কারণ দেশের কেউ বা দেশের কোন ঘটনা না। এর কারণ সুদূর আমেরিকার পাগলা রাজা ট্রাম্প। তিনি শেখ হাসিনাকে বিজয়োত্তর অভিনন্দন জানানোয় রিজভী ক্ষিপ্ত হয়ে এমনটি করেছেন বলা হচ্ছে। আরও আছে। সামাজিক মিডিয়া তোলপাড় করা আরেকটা ছবি মির্জা ফখরুলের। তিনি এক নেতার কলার চেপে ধরেছেন। এ ঘটনাও কেমন যেন অবিশ্বাস্য। তার পরও এটাই এখন ঘটনা। দেখেশুনে মনে হচ্ছে বিএনপি নেতাদের শরীর মন ঠিক নেই। যা তাদের জন্য যেমন, রাজনীতির জন্যও অস্বস্তির। মিডিয়ার খবরগুলো বলে দিচ্ছে বিএনপি আসলে টালমাটালহীন এক জায়গায়। তাদের ভেতর এখন নানামুখী ধারা। একদল স্পষ্টতই চাচ্ছে খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে এগুতে বা সাময়িকভাবে দূরে রাখতে। আরেক দল সেটা মানছে না। এটা তারা জানে না, পারিবারিক রাজনীতির দেশে এছাড়া পথ নেই। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে ভারতের কংগ্রেস, পাকিস্তানের মুসলিম লীগ বা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের তফাত আরেক জায়গায়। রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, কিংবা পুতুল, জয় তাঁরা মেধাবী। মেধাবী টিউলিপরা। তাঁরা নিজেদের তৈরি করেছেন। এখনও তৈরি হচ্ছেন। তাঁদের রক্তের উত্তরাধিকারের পাশাপাশি আছে পড়াশোনা। দুর্ভাগ্য, খালেদা জিয়া তা পারেননি। বরং তাঁর বড় পুত্র বিলেতে থেকে একের পর এক ভুল চাল আর গোঁয়ার্তুমির রাজনীতি করে দেশের সর্বনাশ সাধনে তৎপর। তাই বিএনপির উচিত অচিরেই এর একটা বিহিত করা। দেশের রাজনীতির মূলধারা থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বিএনপির আসলে শক্তি কতটা? এখন যা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে মিডিয়া আর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাই এদের বাঁচিয়ে রেখেছে। যেমন ধরুন সরকারী দলের সাধারণ সম্পাদক। প্রতি কথায় তিনি কেন জানি বিএনপিকে টেনে আনেন। তিনি তো স্পষ্ট করে বলে দিলেই পারেন, তাদের যা ভোটের হিসাব বা যা হয়েছে তাতে তাদের আসা যাওয়ায় আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু তাঁর কথা শুনলে মনে হয় যেন কেবল তারা ভোটে আসলে বা হারলেই কেবল নির্বাচন সঠিক হয়েছে বলে মনে হবে। দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় অন্য বিরোধী দলগুলো নিয়ে তো এমন কথা তারা বলেন না। বাম দল ডান দল এমনকি জাসদ নিয়েও বলেন না। এর মানে কি? এর ভেতর কি বিএনপিকে চাঙ্গা করার ইন্ধন থাকে, না তাকে ভোলা যায় না! করুক না তারা তাদের রাজনীতি। মানুষ যদি তাদের হয়ে মাঠে নামে বা দেশ শাসনে তাদের আনতে চায় তো চাইবে। তার আগে এতটা গুরুত্ব দেয়ার দরকার কি? প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে সম্বোধন করে যখন বলেন তখন আমরা তার মানে বুঝতে পারি। কারণ এই ফ্রন্ট গঠনের পরপরই বিএনপি অন্যের পায়ে ভর দিয়ে নির্বাচনে আসতে পেরেছিল। তাদের ভরাডুবির পর তারা আবার যে জামায়াতকে চাইবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছেÑ নিবন্ধনহীন একটি দলের সঙ্গে আঁতাত রেখে দেশের রাজনীতিতে তাদের সঙ্গে ঐক্য হবে কি করে? এরা রাজনীতির কোন নিয়মই মানছে না। উল্টো মানুষ হাসাচ্ছেন। নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে অসুখী বিএনপি আরও কি করে তাই এখন দেখার বিষয়। তারা বিদেশী প্রভুনির্ভর রাজনীতি বাদ না দিলে এমন হাল চলতেই থাকবে। দেশ এখন যেভাবে এগুতে চাইছে তার সঙ্গে অকারণ বিরোধিতার রাজনীতি যায় না। যায় না হিংসার রাজনীতি। তার পরিবর্তে দলে বা জোটে ভাঙ্গনের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার দরকার আছে। খবরে দেখলাম জাসদ অখুশি। বিদায়ী তথ্যমন্ত্রী ইনু মন্ত্রিত্ব আশা করেছিলেন। এতটাই যে তিনি আওয়ামী লীগকে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তারা বিশ পয়সা আর আওয়ামী লীগ আশি পয়সা। তাদের সঙ্গে না নিলে এক শ’ পয়সা বা এক টাকা হয় না। সে মানুষটির অতীত রাজনীতি কি বলে? সেদিকে তাকিয়ে দলের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ করাই সঠিক বলে বিবেচনা করি। শরিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য আর অন্যান্য দলকে সামনে না আনলে দেশের রাজনীতির ওপর বিএনপির ভূত ছায়া ফেলে রাখবেই। বের হওয়ার পথ তাদের আলোচনা ও মিডিয়া মুক্ত রাখা। বাকিটা জনগণের হাতে। ইদানীং মির্জা ফখরুলও আবোল-তাবোল বকছেন। না পারছেন দলের সচিব পদ ছাড়তে না পারছেন টোপ গিলতে। তাই সাবধানতার বিকল্প নেই। মনে রাখা দরকার তারা বারুদের সন্ধানে আছে। সুযোগ পেলেই তারা আগুন ধরিয়ে দেবে। শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের অনুরোধ, তিনি যেন এসব নেতাকে অচিরে বাতিল মাল করার নীতি গ্রহণ করেন। বিএনপিরও বুঝতে হবে তাদের বদলাতে হবে। কথায় কথায় রেগে যাওয়া বয়সী নেতাদের নিয়ে আর কতদিন? তারা যে অতীত দেখেছেন তা এখন মৃত। এখনকার বাংলাদেশ ও তার স্পন্দন বুঝতে না পারলে কি করে রাজনীতি করবেন তারা? অথচ কাগজে-কলমে তারাই প্রধান বিরোধী দল। এর একটা উত্তর বা বিহিত না হলে রাজনীতি অচল হয়েই থেকে যাবে। লেজ যেমন সোজা হয় না, বিএনপিও গণতন্ত্রের পথে আসবে না। তাদের জন্ম হয়েছিল সেনাশাসনে জেনারেল জিয়ার অধীনে। গদিতে থেকে একটা দল গড়া আর মাঠে নেমে মানুষের সঙ্গে দল করার তফাত এখন বুঝছে তারা। আপনি যদি সময়ের দিকে তাকান দেখবেন কোন আন্দোলন বা সংগ্রামের ফসল নেই তাদের। এরশাদ পতনের সময়ও তারা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে থেকেই তা করেছে মাত্র। ফল ভোগ করেছে সাম্প্রদায়িকতা আর ভারত বিরোধিতার, যা এখন পারছে না। যে দলের দেশ শাসন দেশ গঠন বা উন্নয়ন বিষয়ে কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই তারা কিভাবে জনমনের ভাষা বুঝবে? বিএনপির ছায়া ভূতের কবল মুক্ত হতে হবে আওয়ামী নেতাদের। বিশেষত যারা তাদের আমলে রাজনীতি করতেন বা নেতা ছিলেন, তাদের মনেই বিএনপি। নতুনরা জিয়ার ইমেজ নিয়ে ভাবে না। বোঝেও না। তাদের কাছে হয়ত অন্য বিকল্প বা বিকল্পের সন্ধান আছে। সে দিকেই যাই না কেন আমরা? [email protected]
×