ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মহাকালের ‘নীলাখ্যান’ নাটকের ৪৬তম মঞ্চায়ন কাল

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

 মহাকালের ‘নীলাখ্যান’ নাটকের ৪৬তম মঞ্চায়ন কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আগামীকাল সন্ধ্যা ৭টায় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের ‘নীলাখ্যান’ নাটকের ৪৬তম মঞ্চায়ন হবে। মানব প্রেমের অমর উপাখ্যান দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ আশ্রয়ে নির্মিত হয়েছে মহাকালের নাট্য প্রযোজনা ‘নীলাখ্যান’। নাটকটি রচনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আনন জামান। নির্দেশনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউসুফ হাসান অর্ক। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন কোনাল আলী সাথী, শাহিনুর প্রীতি, সুরেলা নাজিম, সুমাইয়া তাইয়ুম নিশা, নূর আক্তার মায়া, পিয়াসী জাহান, খলিলুর রহমান সম্রাট, মানিক চন্দ্র দাস, মনিরুল আলম কাজল, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, তারেকেশ্বর তারোক, আহাদ জাহাঙ্গীর, রাসেল আহমেদ, সবুজ হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, স্বপ্নিল আরিফ, মোঃ শাহনেওয়াজ এবং মীর জাহিদ হাসান। মঞ্চের নেপথ্য শিল্পীরা হলেন মঞ্চ পরিকল্পনা, সুর, সঙ্গীত ও আবহসঙ্গীত পরিকল্পনায় ড. ইউসুফ হাসান অর্ক, আলোক পরিকল্পনায় ঠা-ু রায়হান, পোশাক পরিকল্পনায় ড. সোমা মুমতাজ, কোরিওগ্রাফি জেরিন তাসনিম এশা, প্রপস পরিকল্পনা ও নির্মাণ হাসনাত রিপন, রূপসজ্জা শিল্পী শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, পোস্টার ও স্মরণিকা ডিজাইন পংকজ নিনাদ, মঞ্চ ব্যবস্থাপক জাহিদ কামাল চৌধুরী এবং প্রযোজনা অধিকর্তা মীর জাহিদ হাসান। ‘নীলাখ্যান’ নাটকের গল্পে তুলে ধরা হয়েছে বেদিয়ার সর্দার জহরের বিষ জয় সাধনায় মনসা কর্তৃক কাম নিষিদ্ধ বলে-তার ভাষে আভাসে প্রত্যাখ্যাত ভালবাসার মানুষ বিন্তী রানী আত্মহত্যা করে আড়ালি বিলে রাশি রাশি শাদা শাপলার বনে। বেদিয়া বহরে বেড়ে উঠা সাপে কাটা মান্দাস ভাসা বালিকা চন্দনের চুলের আড়ে বিন্তীর সুরভী পায় জহর। নারী নিষিদ্ধ বলে এ বালিকা বেড়ে উঠছিল বালকের বেশে। যাকে সন্তান করেছিল জ্ঞান- ঋতুমতি হয়ে উঠার পর তার প্রতি প্রবল রতি অনুভব করে জহর। বেদিয়া দলে তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিচিত্রমুখী সঙ্কট। চন্দনের যুবা সাজে তাকে প্রেম নিবেদন করে মৌটুসী আর চন্দন ঠোটে মালতী ফুলের লাল ডলে ঝুমরোর সামনে দাঁড়ায়। বেদিয়াদের উৎসবে চন্দনের নারীত্ব উন্মোচন হলে দলের অতিপ্রাকৃত বৃদ্ধ ঘণ্টাবুড়ো বেদিয়া দল ও জহরকে তিনটি অনিবার্য ভবিতব্যের ঘোষণা দেয়- ‘ভবিতব্যের তিনরূপ কহি- যে ভাতের পাতিল নেবার জন্য জলে ডুবেছে বিন্তী- তা অন্যরে দিতে চেয়ে পতিত হবি তুই। অথবা তোর আচরে বিন্তীর অনুগামী হবে চন্দনে। আর যদি না হয় তা- তবে আছে তৃতীয়জন- তার হবে মৃত্যু। মৃত্যু অনিবার্য- তবে তা কার হবে- তোর কার্যকরণ হবে থির। সামগ্রিক দৃশ্যকাব্যে ক্ষণে ক্ষণে তিনটি ভবিতব্য ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে উঠে। যাকে পিতা মানে তাকে পতি মেনে নিতে পারে না চন্দন। ঝুমরোর জন্য জহরের ঝাঁপিতে আছে দাঁত না ভাঙা পোষা সাপ। শাওনের অখ- চাঁদের সাঁজ বেলায় আকাশজুড়ে যেন মনসার নীল মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে। জহরের অন্তরে তখন বাজে চন্দন চেয়েছিল গাঢ় নীল রঙের ফতুয়া। সে ক্ষণে এক শ’তম সাপের দংশন নেবে জহর- মন্ময় নীলের দোলাচলে সে চিত্রল ফণায় টোকা দিয়ে সাপটিকে ক্রোধমত্ত করে তোলে। একটি সাপের বিষ বুকে সয়ে- জহর হত হয় কাম আর প্রেমের দংশনে। ‘নীলাখ্যান’ নাট্য জহরের পরাণ আর চৈতন্যের গোপন পাত্রের রতি আর আরতির নাট্য। সাপুড়ে গল্পের বেদিয়াদের ঝাঁপির ভেতর যা ছিল গোপন- সেই ঝাঁপি খুলে গোপন উন্মোচনের চেষ্টায় এ নবতর নাট্য আয়োজন। ‘নীলাখ্যান’ নাটকের কাহিনীটির প্রেক্ষাপট বেদে বহর হলেও কবি নজরুল এর অন্তস্রোতে এমন একটি সার্বজনীন বীজ ভাসিয়ে দিয়েছেন যা স্পষ্টতই গোটা মানবকূলের সর্বকালকে ছুঁয়ে যায়। অনতিক্রম্যদূর্মর আকাক্সক্ষা আর বিরাট প্রকৃতির তুলনায় মানুষের অসহায়ত্ব তাই কবিকে এমন প্রেমাখ্যান লিখতে কলম ধরায়। কবি আর নাট্যকার তাদের মন্ময়তায়-তন্ময়তায় যে জগৎ রচনা করেন তার থেকেও ভিন্ন কোন ভাষা অনুসন্ধান করতে হলে বাঙলা নাট্যের সঙ্গীতের ঐতিহ্যের দ্বারস্থ হতেই হয়। কেননা সেখানেই অনেক কথা না বলেও বলা হয়ে যায়। ‘নীলাখ্যান’ প্রযোজনাতেও সেই প্রয়াস রয়েছে। শব্দ-সুরের শক্তিতে প্রেম আর মানুষের অসহায়ত্বের মন কথা বলবার জন্যই অভিনেতা-চরিত্রেরা অনেকটা গীতলভাবে তাদের প্রকাশ করে।
×