ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান

টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার ভাষণটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। লক্ষণীয় বিষয় যে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে নিরঙ্কুশ তথা ভূমিধস বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী কর্মী ও সমর্থকদের কোনরকম বিজয় মিছিল ও সমাবেশ করতে নিষেধ করেছিলেন। ফলে দেশের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল শান্ত ও শান্তিপূর্ণ। অনতিপরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণের পর সরকার গঠন, মন্ত্রিপরিষদ নির্বাচন, অতঃপর ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুবিশাল বিজয় সমাবেশের পর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণÑ সবই ছিল পরিকল্পনামাফিক ও সুচিন্তিত। জনসমাবেশে ও জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী উদাত্ত ও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। ঐক্য প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেছেন, দেশ ও জাতির উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। এই ঐক্যের ভিত্তি ও যোগসূত্রও তিনি তুলে ধরেছেন সকলের সামনে, যাতে প্রাধান্য পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সাম্য ও ন্যায়বিচার, উন্নয়ন ও অগ্রগতি ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এই ঐকমত্যের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে সুদূরপ্রসারী, যাতে ২০২০-২১ সালে মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব-অনুষ্ঠান পালিত হতে পারে দেশ, জাতি ও দলমত নির্বিশেষে। এক্ষেত্রে দেশ ও জাতির মধ্যে কোনরকম সঙ্কীর্ণতা এবং ভেদাভেদ সর্বোপরি মতানৈক্য কাম্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ করে সংসদে যোগ দেয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সংসদে বিরোধীদের সংখ্যা নিতান্ত কম হলেও সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করা হবে না। বরং যে কোন সদস্যের ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব, আলোচনা-সমালোচনার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। এতদসঙ্গে স্মরণ করা আবশ্যক যে, নির্বাচিত হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এখন থেকে তিনি সকলের প্রধানমন্ত্রী। আর তাই সারাদেশে সুষম উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করাই হবে তার অন্যতম ব্রত। সে অবস্থায় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি নেতাদেরও হৃদয়ঙ্গম করতে হবে যে, সংসদ বর্জন করে তারা আদৌ কোন সুফল পাবেন কি না! বরং সংসদের ভেতরে ও বাইরে যুগপৎ অবস্থান নেয়াই হবে তাদের জন্য সঙ্গত এবং যথার্থ। কেননা, তারা যেসব এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন সে সব এলাকার ভোটারদের প্রতিও তাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এবার সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন দুর্নীতি দমন তথা উৎখাতের ওপর। ইতিপূর্বে বর্তমান সরকার সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবে তার প্রয়োগও করেছে, যা দেশবাসী স্বাগত ও সমর্থন জানিয়েছে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। সুতরাং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ ও সমাজ থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ করতে হবে যে কোন মূল্যে। অতঃপর জঙ্গী তৎপরতা, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দসহ সকল সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্ক করে দিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দুটি সামরিক জান্তার শাসন এবং বিএনপি-জামায়াত জোট শাসিত সরকারের সময় দেশে দুর্নীতির বিস্তার ঘটে ভয়াবহভাবে, যা পরপর কয়েকবার প্রথম স্থান অধিকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সুতরাং মাদক ও জঙ্গীবাদের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার এখনই প্রকৃষ্ট সময়। অতীতে প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন যে, গণতন্ত্র ও উন্নয়নকে তিনি এগিয়ে নিতে চান। সত্য বটে, দেশ ও জাতির উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকলে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার সুনিশ্চিত হয়। সেখানে কোন অপশক্তি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। গত দশ বছরের ধারাবাহিক বহুমুখী উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ অতীতের কলঙ্ক মোচনে সফল হয়েছে। এখন সবিশেষ জোর দিতে হবে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে টেকসই করার মাধ্যমে একে মজবুত এবং সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। আর এর জন্য চাই জাতীয় ঐকমত্য।
×