ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে যশোরের মাঠ

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে যশোরের মাঠ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সরিষা ফুলের হলুদ বর্ণে বর্ণিল হয়ে উঠেছে যশোরের মাঠ প্রান্তর। স্বল্প খরচ ও হালকা শ্রমে অধিক ফলন এবং ফসল বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়ায় সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন যশোরের ৮ উপজেলার কৃষকরা। কৃষকরা জানান, বীজ বোনার ২/৩ মাসের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। বোনার পর থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত তেমন কোন পরিশ্রম করতে হয় না। বেশি সারেরও প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র ইউরিয়া সার সামান্য ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। চারা ফোটার পরপরই আগাছা ভালভাবে একবার পরিষ্কার করলেই হলো। এছাড়া আর অতিরিক্ত শ্রমের প্রয়োজন হয় না। করতে হয় না অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে যশোরে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৫৯৬ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। মূলত বোরো আবাদ এবং সবজি চাষের জন্য এ বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তারপরও যে জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে, তার ফলন ভাল হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। যশোরের বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের মাঠে মাঠে এখন হলুদের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়। ফুলে ফুলে ভরে গেছে সরিষা ক্ষেত। সরিষার মাঠে ইতোমধ্যে দেখা মিলছে মৌমাছির মধু আহরণের দৃশ্য। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রত্যেক সরিষা চাষী অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এ বছর আরও ৬০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হচ্ছে। আর কৃষকরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৯/১০ ও স্থানীয়ভাবে বারি-৭ হাইল্যান্ড ও সম্পদ জাতের সরিষা চাষ করেছে। ফলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। জানা যায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে শার্শার কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়। শার্শার উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের সরিষা চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভাল হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। একই গ্রামের কৃষক আফজাল শেখ বলেন, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছি। ফলন ভাল ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরও অনেকেই ঝুঁকবে। উপজেলার ঘিবা গ্রামের কৃষক আমিরুল রহমান বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষার জমিতে ধানের আবাদ ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়।
×