ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন সময়ে শেয়ারবাজার

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন সময়ে শেয়ারবাজার

শেয়ারবাজারের চাঙ্গা ভাবের জন্য কয়েকটি শর্ত জরুরী। প্রধান শর্ত হলো দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে কিনা। যদি থাকে, তবে সরকারী ও বেসরকারী নানা প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয় এবং চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ বিঘœহীনভাবে এগিয়ে চলে। সেইসঙ্গে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও দেখা দেয়। বলাবাহুল্য, প্রধান শর্তটি পূরণ হলেই পরের শর্তগুলো পূরণের পথ তৈরি হয়। সরকারের যদি দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকার থাকে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেবার, তবে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। একইসঙ্গে বেসরকারী কোম্পানিগুলোও উৎপাদনমুখী এবং সচল থাকবে। তার মানেই হলো অর্থেও প্রবাহ থাকবে, মুনাফা হবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর শেয়ারও পুঁজিবাজারে সচল থাকবে, মানুষও শেয়ার বেচাকেনায় আগ্রহী হবে। বছরের শুরুতে নতুন সরকার শপথ নিতে চলেছে। এক অর্থে এই সরকার জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব। সরকার বিগত দশ বছর ধরে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের অর্থনীতিকে উন্নয়নের গতিময় রেলে তুলে দিয়েছে। ফলে সঙ্গত কারণেই শেয়ারবাজারের পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে। দ্বন্দ্ব, সংঘাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে দেশী ও বিদেশী ফান্ড ম্যানেজার, পোর্টফলিও ম্যানেজার, ব্যক্তি শ্রেণীর বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আগ্রহের শীর্ষে অবস্থান করছে এখন শেয়ারবাজার। ফলে যৌক্তিক কারণে ফিরতে শুরু করেছে দীর্ঘদিন ধরে নিশ্চুপ হয়ে থাকা বিনিয়োগকারীরা। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনদিনে প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২০০ পয়েন্টের বেশি। লেনদেনও বাড়তে বাড়তে হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। যদিও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী ফেরার ইঙ্গিত মিলেছিল নির্বাচনের আগেই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভোটাররা যে শেখ হাসিনাতে আস্থা রাখবেন সেটা আঁচ করতে পেরেই বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ আগেই বিনিয়োগ শুরু করেছিল। তাই নির্বাচনের আগের সাত কার্যদিবসেও শেয়ারবাজারে সূচক বেড়েছিল। গত বছর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এক সেমিনারে বলেছিলেন, ‘শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমি খুশি। এতদিনে পুঁজিবাজার একটি ভিত্তি পেয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারের উন্নতি দৃশ্যমান হবে। শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইন-কানুনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে।’ অর্থমন্ত্রীর কথার সত্যতা এখন প্রমাণিত। শেয়ারবাজারে বুঝেসুজেই বিনিয়োগ করা সমীচীন। শেয়ারবাজারে গিয়ে কিছু লোক যেমন অল্পকালের ভেতর কোটিপতি হয়েছেন, তেমনি আবার মূল পুঁজি হারিয়ে পথে বসে পড়ার মতো অবস্থাও হয়েছে বহু লোকের। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেককেই সর্বস্বান্ত হতে হয়েছে। পরবর্তীকালে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই শেয়ারবাজার সম্বন্ধে সম্যক ধারণা নিয়েই এখানে বিনিয়োগ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ওঠানামা বেশি হয়। তাছাড়া বহু বিনিয়োগকারী না বুঝেই শেয়ারবাজারে পুঁজি খাটান। বুঝেসুজে বিনিয়োগ করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। শেয়ারবাজার আসলে তথ্যের বাজার। যার কাছে তথ্য আছে, সে বেশি লাভবান। অর্থনীতির শাস্ত্র অনুযায়ী, শেয়ারবাজার ফাটকা বাজারেরই অংশ এবং এর মূল কথাই ঝুঁকি। এটা ঝুঁকির বাজার। সুতরাং ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে কেবল এই বাজারে থাকা যায়। আরেকজনকে দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক পদ্ধতি হতে পারে না। কোম্পানি প্রোফাইল দেখে বিনিয়োগ করাই বিচক্ষণতা। একটি কোম্পানির আর্থিক বিবরণী কিভাবে বুঝতে হয়, সেটি না জানলে শিখে নেয়া যায়। কখন কিনতে হয় আর কখন বিক্রি করতে হয় সেটিও বুঝতে হয়। মোটকথা জেনেবুঝেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। অন্যত্র বিনিয়োগ করলেও অভিন্ন নীতি অনুস্মরণীয়। সব মিলিয়ে আমরা আশার আলোই দেখছি।
×