ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনোত্তর অপপ্রচার

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৯

নির্বাচনোত্তর অপপ্রচার

নির্বাচনে জয়-পরাজয় রয়েছে। পরাস্ত দল নাখোশ হবে, আত্মসমালোচনার পরিবর্তে তারা প্রতিপক্ষের দোষ খুঁজবে, নানা অপবাদ দেবে- এটিই যেন দেশের একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতি কী দেখল? পরাজিত জোট ভেতরে ভেতরে হতাশায় ভেঙ্গে পড়লেও অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করল। নির্বাচনোত্তর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তাদের দেহভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে ভরাডুবির পর তাদের বিধ্বস্ত মানসিকতা। কিন্তু তাদের ভোল পাল্টাতেও সময় লাগেনি। এরপর থেকেই তারা এই অভূতপূর্ব নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে নানা উপায়ে অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুললে দেখা যায় তার কুৎসিত ও বিচিত্র নমুনা। অবশ্য আগে থেকেই একটা শঙ্কা ছিল যে, ড. কামালের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন চলার মাঝখানেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ না করে সারাদেশে এক নৈরাজ্যকর সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। ফলে এবারও তারা গণতন্ত্রবিরোধী সংবিধানবিরোধী কোন একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এমনটা অনুমিতই ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তাদের প্রার্থীরা বর্জনের ঘোষণা দেয়, দলীয় বা জোটগতভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দান থেকে বিরত থাকে ঐক্যজোট। যদিও নির্বাচনে ‘ভূমিধস’ পরাজয়ের পর তারা শুধু নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হয়নি, বেছে নিয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনকে বিতর্কিত করার বিভিন্ন অপকৌশল। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সদ্যনির্বাচিত নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ আহ্বান জানান। তার বক্তব্যের ভাষাটি লক্ষ্য করলে শঙ্কিত হতে হয় এই বর্ষীয়ান আইনজীবী এখন দেশের বিরুদ্ধেই সক্রিয় ভূমিকায় নেমে পড়লেন কিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচনকে বৈধতা দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। আমি আশা করি, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে কোনভাবেই স্বীকৃতি দেবে না।’ উল্লেখ্য, বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ একাধিক। গত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা, জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন, মাথাপিছু আয়-উপার্জন বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দেশের সাধারণ মানুষ পছন্দের দল হিসেবে বেছে নিয়েছে দলটিকে। অন্যদিকে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে নিজেদের দোষে। এর অন্যতম কারণ দলটির কোন একক নেতা ছিল না। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুটি দুর্নীতির মামলায় বর্তমানে কারাগারে অন্তরীণ এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত। অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান তথা ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় দলটি স্বভাবতই নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। নতুন কোন নেতা নির্বাচন করতে না পারায় নির্বাচিত হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী, এ নিয়ে ভোটারদের মনে অস্পষ্টতা ছিল। স্বভাবতই বিএনপির কর্মী ও সমর্থকরা বিভ্রান্ত হয়েছে। এখন ঐক্যফ্রন্ট অপপ্রচারে না গিয়ে পূর্বে কথিত তাদের পরাজয়ের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরে আসুক- এমনটাই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চাওয়া। একমাত্র আত্মসমালোচনাই পারে তাদের ভূলুণ্ঠিত অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ানোর পথ দেখাতে।
×