ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুকে আয়

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৪ জানুয়ারি ২০১৯

 ফেসবুকে আয়

বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ফেসবুক একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর ভাল-মন্দ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও কিছু কম নেই। ফেসবুক ম্যানিয়া বলেও একটি কথা চালু আছে সংশ্লিষ্ট মহলে। সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮-এর জাতীয় নির্বাচনে অপব্যবহার রোধকল্পে কয়েক ঘণ্টা ফেসবুক বন্ধ রাখায় এর ব্যবহারকারীরা খুব হতাশ হন। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, পরিণামে এর সুফল মিলেছে। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, সাম্প্রতিককালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ফেসবুকের ব্যাপক অপব্যবহার ঘটেছে এবং নির্বাচনে এর প্রভাবও পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ফেসবুকের ব্যাপক অপব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি অতি উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর দেশে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে ‘জল ঘোলা’ হলে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে জবাবদিহি পর্যন্ত করতে হয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও মার্কিন সিনেটের কাছে। একই দায়ে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ক্যামব্রিজ এ্যানালিটিকাকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মোটকথা ২০১৮তে ভুয়া খবর, মিথ্যা সংবাদ, তথ্য ফাঁস ও নির্বাচনে অযাচিত হস্তক্ষেপের জন্য ফেসবুক নিন্দিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এসব কাজের জন্য ফেসবুকের আয়ে প্রায় ধস নেমেছে এবং ফেসবুকের আধিকারিকের পদ থেকে মার্ক জাকারবার্গকে পদতাগ পর্যন্ত করতে বলেছেন শেয়ার হোল্ডাররা। এহ্ বাহ্য। এতসব কিছুর পরেও বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে প্রযুক্তিতে আসক্তিনির্ভর তরুণ প্রজন্মের কাছে ফেসবুকের আবেদন তীব্র ও সুদূরপ্রসারী। অতঃপর সেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আয়-রোজগারের সুযোগ করে দিয়েছে এর বিশাল ভক্তগোষ্ঠী ও অনুসারীদের। নয়টি ভাষায় বিশ্বের ৩২টি দেশে এই সুবিধা চালু করেছে। আরও যা সুসংবাদ তা হলো, এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশসহ বাংলাভাষীরাও। ফেসবুক প্রদত্ত আয়-রোজগার করা যাবে ঘরে বসেই এবং তা বৈদেশিক মুদ্রায়। ফেসবুকের এই এ্যাপসের নাম দেয়া হয়েছে এ্যাডব্রেকস। সহজ ভাষায় বলতে গেলে বিজ্ঞাপন, বিশেষ করে সৃজনশীল বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে ফেসবুকে ঢুকিয়ে দেয়া, যা তারা প্রচার করবে বিশ্বব্যাপী আগ্রহীদের মধ্যে। সহজ কথায়, ফেসবুক পেজে নিজস্ব ভিডিওর মধ্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করাই হলো এ্যাডব্রেকস। বাংলাদেশে ব্যবহারকারী সৃজনশীল নির্মাতারা এখন চাইলেই ফেসবুক পেজে ভিডিও আপলোড করে কিংবা আগেই আপলোডকৃত ভিডিওর মধ্যে বিজ্ঞাপন বিরতির সুযোগ গ্রহণ করে আয় করতে পারবেন। ভিডিওতে বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষাতেই এই সুবিধা রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রায় এই আয় রোজগারের পরিমাণও কম নয়। অর্থাৎ আপনি যত বেশি ভিডিও আপলোড করবেন, তত বেশি আয়। তবে ব্যবহারকারীদের এর আওতায় আনার জন্য অবশ্যই ফেসবুকের ‘মনিটাইজেশন’ নীতিমালার অধীনে আসতে হবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রচার করেছে। চাইলেই যে কেউ এটি দেখে নিতে পারেন ফেসবুক ওয়ালে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ থেকে ইতোমধ্যে আয়-উপার্জনও শুরু করেছে তরুণরা। বাংলাদেশেও এ্যাডব্রেকস সুবিধা চালু হওয়ায় এর সুযোগ নিতে ব্যাপকভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন দক্ষ ও যোগ্য তরুণ-তরুণীরা। কবির কথায় বলা যায়, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। বাস্তবে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনের আকর্ষণীয় ও আগ্রাসী ভূমিকাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও। উদাহরণত বলা যায়, যুক্তরাজ্যের নিউজার্সিতে ধারণকৃত ইতালিয়ান রান্নার ১০ মিনিটের একটি রেসিপির ভিডিও ফেসবুক পেজে পোস্ট করে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান প্যাস্কুয়েল স্কিরায়াপ্পা। প্রায় ৭০ শতাংশ দর্শক এই ভিডিওটি তাদের ওয়াচলিস্ট ও সার্চ অপশনে যুক্ত করেছে আর এর আর্থিক সুবিধা পেয়েছে স্কিরায়াপ্পা। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে যে, একটি অর্থপূর্ণ ও সৃজনশীল কমিউনিটি গড়ে তোলা জীবনের উদ্দেশ্য ও অর্জিত অর্জনের মধ্যে একটি। ব্যাখ্যা যাই থাক না কেন, বিজ্ঞাপনের পেছনে যে বিপুল অর্থের হাতছানি, তা তো অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই।
×