ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

এম এইচ উল্লাহ

বাহারি উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

বাহারি উৎসব

আবহমান বাংলার চিরাচরিত রূপ বাংলার ষড় ঋতুতে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। শীত মৌসুম বাংলায় এক অপরূপ সাজে আবির্ভূত হয়। শীতের আগমনে পল্লী বাংলার ঘরে ঘরে নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়। ধান কাটা হয়ে গেলে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। ঘরে ঘরে তৈরি করা হয় নানা রকম বাহারি পিঠাপুলি। গ্রামগঞ্জের মানুষ শুধু পিঠাপুলি খেয়েই আনন্দ উৎসব করে না, বরং তারা আরও অনেক ধরনের উৎসবে মেতে ওঠে- যার মধ্যে রয়েছে নাচ গান - যেমন যাত্রাগান, কবিগান, পালাগান ইত্যাদি। শহরের মানুষ অবশ্যই একটু ভিন্ন উপায়ে শীত উৎসব উদ্যাপন করে। গ্রামের মানুষ গান বাজনা যেমন- পল্লীগীতি জারি-সারি, ভাটিয়ালী, যাত্রা, থিয়েটার, আর সার্কাসের মাধ্যমে শীত উৎসব পালন করে। শহরে কিন্তু এই উৎসবের ধরন একটু ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন- সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, চারুকলা ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে, শীতে মহানগরীর বিভিন্ন নাট্যমঞ্চে মঞ্চায়ন করা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চারুকলার আয়োজন করা হয়। বকুলতলায় বিভিন্ন বাহারি পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলে মিলে শীত উৎসবে যোগদান করে প্রভূত আনন্দ উপভোগ করে। গ্রামের পালা গান আর যাত্রাগানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শহর বন্দরেও শীত উৎসবে সারাদেশের মানুষ মেতে ওঠে। অভাব অনটন মানুষের জীবনে দুঃখ দুর্দশা নিয়ে আসে আর প্রাচুর্য মানুষের জীবনে এনে দেয় সুখ-শান্তি আর আনন্দ। তাই তো শীতের দিনে গ্রামে যখন ঘরে ঘরে ধান আর অন্যান্য অর্থকরী ফসল ঘরে আসে তখন গ্রামীণ জীবনে চলে আসে অভূতপূর্ব প্রাচুর্য আর তখনই ঘরে ঘরে শুরু হয় নানা আনন্দ উৎসব। এই সব শীত উৎসব পালনের জন্য দেশের মানুষ সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। উৎসবের সময়ে শিশুরা ছবি আঁকে, গান গায় আর কবিতা আবৃত্তি করে। মহানগরের নাট্যমঞ্চগুলোতে শীতে প্রায় প্রতি রাত্রেই নাট্য উৎসব উৎযাপিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসবে শহরবাসিও যোগদান করে। সুস্বাদু খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরী করা হয় বাহারী রকমের নানা ধরনের পিঠা আর পায়েস। বৈচিত্রময় ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে শীত ঋতুতেই খাওয়া দাওয়ার জন্য খুব সুন্দর সময়। গ্রীষ্মসহ অন্যান্য ঋতুতে এত বাহারী রকমের সুস্বাদু খাবারের সাধারণত আয়োজন করা হয় না। আনন্দ উৎসব ছাড়া জীবন হয়ে ওঠে একঘেয়ে। এই একঘেয়ে জীবনে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে তাই তো মানুষ একটু পরিবর্তন চায়। আর চিত্ত বিনোদনের পথ খুঁজে বেড়ায়। শীতের এই উৎসব মানুষের চিত্ত বিনোদন করে থাকে। চিত্ত বিনোদনের অনেক উপায় আছে। ভাল ছবি দেখলে চিত্ত বিনোদন হয়। ভাল জায়গায় গিয়ে সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করলেও চিত্তের বিনোদন ঘটে। আর সেই জন্যই মানুষ চিত্তবিনোদনের জন্য পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায়। অভাবী মানুষের জন্য শীতকালটা অবশ্যই অনেক কষ্টের হয়ে থাকে। শীত বস্ত্রের অভাবে তারা অনেক কষ্ট ভোগ করে। ধনী লোকেরা কিন্তু শীতকে স্বাগত জানায়, কারণ শীতে তারা নানা ধরনের মুখরোচক খাওয়া খেয়ে পরম পরিতৃপ্তি লাভ করে। ধনাঢ্য মানুষের উচিত শীতে গরিবদের দুঃখ লাঘবে এগিয়ে আসা, তাদেরকে শীতবস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা, আর্থিক সাহায্য দিয়ে তাদেরকে শীতের দিনে ভাল খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে দেয়া। দেখা যায়, শীতের রাত্রিতে অসহায় মানুষ রেল স্টেশনে, রাস্তার পাশে নগরীর বিভিন্ন পার্কের বেঞ্চিতে থাকার জায়গার অভাবে নিদারুন কষ্টে রাত্রি যাপন করে, অথচ ধনীরা তখন বিলাসবহুল বাসস্থানে পরম সুখে রাত যাপন করে। তাই এই সব ধনাঢ্য শ্রেণীর লোকদের উচিত এই গরীব দুঃখীদের পিছনে ব্যয় করা তাহলে এই দুস্থ লোকগুলো অনেক দুঃখ-দুর্দশার হাত থেকে বেঁচে যাবে। কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×